সোমবার , ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪
নীড় পাতা / আইন-আদালত / হিলিতে কাজ না করেই বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলনের জন্য ভুয়া বিল ভাউচার দাখিলের অভিযোগ

হিলিতে কাজ না করেই বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলনের জন্য ভুয়া বিল ভাউচার দাখিলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, হিলি (দিনাজপুর):
দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছের উপজেলার ৪৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের অনুকুলে পিও নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষসহ বিভিন্ন কাজের জন্য ৩০ লাখ টাকার অর্থ বরাদ্দ আসে। এসব বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কাজ না করেই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে ভুয়া বিল ভাউচার দাখিলের অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া অনেক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাক্ষর জাল করে ভুয়া বিল দাখিলের অভিযোগ ও তাদেরকে বাদ দিয়ে শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হাকিমপুর উপজেলার ছাতনি রাউতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাট্টাউছনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টুব্বি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিদ্যালয় সরেজমিন ঘুরে বিদ্যালয়ের অনুকুলে বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলনের জন্য যে বিল ভাউচার জমা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু সেই বিলের সুত্র ধরে কোন বিদ্যালয়েই এখন পর্যন্ত কোন কাজ করা হয়নি। সবগুলো বিদ্যালয়েই প্রায় একই অবস্থা কাজ শুরুকরবো, সব ঠিক করে রেখেছি, ওয়ার্ডার দিয়ে রেখেছি এই।

হাকিমপুর উপজেলার টুব্বি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান বলেন, আমার স্কুলের অনুকুলে পিও সহ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষন বাবদ সর্বমোট ৯০হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। তবে আমরা এখনো স্কুলের কাজ করিনি, সবকিছু ঠিক করে রাখা আছে, মিস্ত্রির জন্য লাগাতে পারিনি। তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে আমরা আমাদের বিদ্যালয়ের অনুকুলে সেই বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলনের জন্য বিল ভাউচার জমা দিয়েছি।

খাট্টাউছনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইয়েদা সুলতানা বলেন, আমাদের স্কুলের অনুকুলে পিওর বরাদ্দ এসেছে ৩৫ হাজার টাকা, রুটিন মেরামতের জন্য ৪০ হাজার টাকা। আমরা সবকিছু ওয়ার্ডার দিয়ে রেখেছি তবে কোন কাজ শুরু করতে পারিনি এখনো। আমরা প্রতিবছর এইভাবেই বিল ভাউচার জমা দিয়ে থাকি।

তবে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি প্রদিপ চন্দ্র শীল বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমাদের বিল ভাউচার জমা দিতে বলেছে। বিল উঠলে তারপর আমাদের কাজ করতে বলেছে। এর আগেও আমরা আগে বিল ভাউচার জমা দিয়েছি তারপরে টাকা উঠলে কাজ করেছি। হিলির ছাতনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারুক
হোসেন বলেন, আমার স্কুলে রুটিন মেরামতের জন্য বরাদ্দ এসেছিল ৪০ হাজার টাকা ও ¯িøপের বরাদ্দ এসেছিল ২৫ হাজার টাকা। পিও এর ২৫হাজার টাকা স্কুলের সিসি ক্যামেরার জন্য মিটিং এ পাশ করলাম। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বলেন যে শিক্ষা অফিসার বলেছে সিসি ক্যামেরা নয় এটা এই কাজে ব্যবহার করতে হবে। আর ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ভাউচার নিয়ে আসলেন বললেন ভাউচার আগে করতে হবে ভাউচার পাশ হয়ে আসলে আমরা বরাদ্দ পাবো। আমরা ভাউচারে সাক্ষর করে দিয়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে কোন কাজ বা কিছুই হয়নি।

বাংলাহিলি ২নং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি লিমা আকতার বলেন, আমি জানতে পেরেছি আমাদের বিদ্যালয়ের মেরামত কাজের জন্য ৪০ হাজার, অন্যান্য কাজের জন্য আরো ৭০ হাজার ও ২০ হাজার টাকা পৃথক বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু আমাকে না জানিয়ে আমার স্বাক্ষর জাল করে তা জমা দেওয়া হয়েছে। আমি কোন কিছু জানলামনা কোন মিটিং হলোনা স্কুলের কোন কাজ হলোনা কিন্তু বিল ভাউচার জমা হয়ে গেলো। আমি এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটির নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। সেই সাথে বিষয়টির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি সেই সাথে এটি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানাচ্ছি।

কাকড়াপালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি আকতারুজ্জামান বলেন, আমাদের স্কুলে বিভিন্ন কাজের জন্য পিও এর বরাদ্দ ও অন্যান্য সংস্কার কাজের জন্য বেশ বরাদ্দ আসে। বরাদ্দকৃত অর্থ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিয়ন্ত্রনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজগুলো বাস্তবায়ন করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এই এই কাজ বাস্তবায়ন করতে বলেছে শুধুমাত্র এই কথা বলে আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাউচার ও বিলে স্বাক্ষর নেন প্রধান শিক্ষকরা। কিন্তু বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থ বিদ্যালয়ের কোন কোন উন্নয়নমুলক কাজ হবে সেটি নির্ধারনের দায়ীত্ব এসএমসির থাকলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে তারা সেটি মানেননা।

হাকিমপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ সম্পুর্ন অবান্তর জানিয়ে বলেন করোনাকালে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে আমার বেশ কিছু কাজ নিয়ে অনেক ভালো রিপোর্ট হয়েছে, পুরষ্কার পেয়েছি এটিই হয়তোবা অনেকের গা জ্বালা করেছে।

হাকিমপুর উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিসার শফিকুর রহমান বলেন, কেউ কাজ করছে কি করে নাই সেটি দেখার এখতিয়ার আমাদের নেই। আমাদের কাছে বিল ভাউচার জমা দিলে সেটি পাশ করতে হয়। তবে আমাদের যেটি জানার বিষয় আমাদের বরাদ্দ আছে কিনা, সেই সাথে এর স্বপক্ষের কাগজগুলো দিয়েছেন কিনা, সরকারি বিধি মোতাবেক ভ্যাট আইটি কর্তন করছে কিনা। ইতোমধ্যেই উপজেলার ৪৬টি স্কুলের ৩০ লাখ টাকার মতো বিল ভাউচারের কপি আমাদের নিকট জমা দিয়েছেন। একইসাথে বাংলাহিলি ২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি লিমা আকতার নামের একজন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তার নাকি স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া বিল ভাউচার জমা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহিত আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানান, কাজ করে তারপরে বিল উত্তোলন করা এটিই নিয়ম, কিন্তু কাজ না করে বিল উত্তোলনের কোন নিয়ম নেই। তবে কোন কারনে করোনার কারনে হয়তোবা সে কাজটি করতে পারেনি সেক্ষেত্রে হয়তোবা টাকাটা তুলে রাখে পরবর্তীতে করবে। একেবারেই কাজ যদি না করে আত্মসাৎ করে কিনা আপনারা দেখেন, ৩০শে জুনের পরে কাজের সময় আছে তো। তবে এবিষয়ে আমাদের কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সেক্ষেত্রে তদন্ত পুর্বক তার বিরুদ্দে দাফতরিক ব্যবস্থা গ্রহন করবো। যদি কাজ না করে বিল ভাউচার জমা দিয়ে থাকেন সেটি দু:খজনক আমরা এবিষয়ে কাওকে ছাড় দিবোনা। এখানে যে শুধু শিক্ষা অফিসার একা দায়ি নন তারা কাজ না করে কেন বিল ভাউচার দাখিল করলো যখন আমরা দেখবো তখন সকল বিষয়গুলোই দেখবো।

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, আমাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সংস্কার বা অন্যান্য বরাদ্দের অনিয়মের বিষয়ে একটি অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট কয়েকজন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লিখিত আকারে দিয়েছেন যার অনুলিপি আমিও পেয়েছি। সেখানে বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে যে পদ্ধতিতে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করার কথা সেই পদ্ধতিতে খরচ করা হয়নি এবং দুয়েকজন সভাপতির অনুমোদন ছাড়াই তাদের স্বাক্ষর জাল করেও কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবিষয়ে আমরা আমাদের উদ্ধর্তন কতৃপক্ষ যারা আছেন এবিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার মতো আমরা সেটি জেলাতে জানাচ্ছি। আশা করি এবিষয়ে একটা ইতিবাচক সিন্ধান্ত নিবেন।

হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, হাকিমপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিগনের নিকট থেকে পেয়েছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে অভিযোগ যদি সত্য প্রমানিত হয় তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করবো।

আরও দেখুন

পেঁয়াজের চারা পুড়ে শেষ-কৃষকের মাথায় হাত! জমিতে এখন শুধুই ঘাস!

নিজস্ব প্রতিবেদক নলডাঙ্গা,,,,,,,,,,,,,,,,,জমিতে নষ্ট হওয়া পেঁয়াজের চারা দেখে নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি জমি লিজ নিয়ে …