নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর মধ্যাঞ্চলের যানজট নিরসন ও যোগাযোগে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে হাতিরঝিলের সঙ্গে গুলশান-বনানী-বারিধারা ঘিরে নতুন নৌপথ তৈরি হচ্ছে। ফলে হাতিরঝিল থেকে নৌযান (ওয়াটার বাস) যাবে কালাচাঁদপুর পর্যন্ত। দীর্ঘ ১৬ কিলোমিটারের এ নৌপথ তৈরিতে এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে লেকের ওপর থাকা ৯টি ব্রিজ। এ জন্য নতুন করে ৭৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানান, রাজধানীর যানজট নিরসনে নৌপথকেও কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য হাতিরঝিল থেকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের পেছনে কালাচাঁদপুর পর্যন্ত এবং হাতিরঝিল থেকে বনানী কবরস্থান রোড পর্যন্ত নৌযান চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেকের ওপর থাকা ৯টি ব্রিজ। এ ব্রিজগুলো উঁচু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেয়র বলেন, ব্রিজ উঁচু করার পাশাপাশি লেকের পাড়ও সংস্কার করে সেখানে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। সেখানে বাইসাইকেল লেন থাকবে। এ জন্য ৭৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। নৌপথটি কার্যকরভাবে চালু করতে পারলে সড়কের যানজট কিছু কমানো সম্ভব হবে। জানা যায়, ১৯৬১ সালে তৎকালীন ডিআইটি (বর্তমান রাজউক) গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকার উন্নয়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে। ওই সময়ে প্রায় ১ হাজার একর জমি বনানী ও বারিধারা আবাসিক এলাকার উন্নয়নে অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯২ সালে গুলশান মডেল টাউন এবং বনানী-বারিধারা এলাকার কার্যক্রম ‘১ হাজার একর ভূমি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শেষ হয়। তবে ২০০ একর এলাকাজুড়ে বিদ্যমান দুটি লেকের উন্নয়ন কাজ শেষ হয়নি। লেক উন্নয়নের নামে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তাতে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। নতুন প্রকল্প অনুযায়ী রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে কালাচাঁদপুর পর্যন্ত ওয়াটার বাস চলাচলের সুবিধার্থে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেকের ওপর থাকা ৯টি ব্রিজ উঁচু করা হবে। এ ছাড়া লেকের পাড় বাঁধাই করে ওয়াকওয়ে তৈরি করা হবে। প্রকল্পের আওতায় গুলশান-বনানী-বারিধারা লেকের ৯টি স্থানে হাতিরঝিলের মতোই নান্দনিক সেতু ও সেগুলোর ওপরে চারটি ওভারপাস তৈরি করা হবে। গুলশান ও বাড্ডার মধ্যে একটি এবং গুলশান-২ থেকে বারিধারা যেতে আরেকটি সেতু, নিকেতনে বিদ্যমান সেতুটি ভেঙে বড় সেতু তৈরি করা হবে। এ ছাড়া শাহজাদপুরের ঝিলপাড়ে একটি, বনানী থেকে গুলশান-২ নম্বরে যেতে একটি, গুলশান-১ নম্বরের কাছে একটি, পুলিশ প্লাজা থেকে নিকেতন এবং বনানী থেকে গুলশান-২ নম্বরে যেতে একটি করে সেতু নির্মাণ করা হবে।
গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়নে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ২০১০ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ডিপিপি অনুসারে ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা ছিল। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১০ কোটি টাকা। তবে প্রকল্পের মূল কাজ শুরুই হয় ২০১৬ সাল থেকে। এরপর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চার বার। তবুও এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। সর্বশেষ পঞ্চম বারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। যা প্রথম ধরা ব্যয়ের প্রায় ১২ গুণ বেশি। হাতিরঝিলের আদলেই গড়ে তোলা হবে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক।