নিউজ ডেস্ক:
তিনটি পার্কে একুশটি প্রতিষ্ঠানকে জমি ও স্পেস বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ও ২ হাজার ৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির আশাবাদ করছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি, কালিয়াকৈরে চারটি, বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, চট্টগ্রামে ১৬টি এবং শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন এন্ড ট্রেনিং সেন্টার, কুয়েটে একটি প্রতিষ্ঠানকে জমি ও স্পেস বরাদ্দ প্রদান করেছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ এবং বরাদ্দপ্রাপ্ত কোম্পানির প্রধানগণ স্বাক্ষর করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ।
বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে বাংলাদেশ কার্ড লিমিটেড ৪ নম্বর বøকে ৭ একর জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সেখানে স্মার্ট কার্ড, বিশেষ নিরাপত্তা পণ্য, এটিএম মেশিন উৎপাদন ও এসেম্বল করার লক্ষ্যে প্রায় ৮৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এর ফলে কোম্পানিটিতে আনুমানিক ৬৫০ জনের কর্মসংস্থান হবে মর্মে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এশিয়া কম্পিউটার বাজার লিমিটেডের অনুক‚লে ৬ নম্বর বøকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ একর জমি, সেখানে তারা কম্পিউটার, স্মার্ট টিভি, নেটওয়ার্কিং ডিভাইস, সিকুরিটি সার্ভেইল্যান্স এবং স্পিকার এসেম্বল ও উৎপাদন করবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত বিনিয়োগ প্রায় ৩৫ কোটি টাকা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা ৬০০ জন। সেলট্রোন ইলেক্ট্রো ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড ৪ নম্বর বøকে বরাদ্দ পেয়েছে দশমিক ৫ একর জমি যেখানে তারা রেডিও সেট এবং এফএম ট্রান্সসিভার উৎপাদন ও এসেম্বল করবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত বিনিয়োগ প্রায় ২৫ কোটি টাকা এবং প্রস্তাবিত কর্মসংস্থান ১৫০ জন। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সিকে ৪ নম্বর বøকে ১৪ দশমিক ৩৩ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে, সেখানে তারা অফিস ভবন ও ডরমিটরি স্থাপন করবে।
অন্যদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, চট্টগ্রামে জেনেক্স, হ্যালো ওয়ার্ল্ড, এক্সসিড বাংলাদেশ লিমিটেড, ইঞ্জেনিয়াম কনসাল্টিং, এডবিøউ কমিউনিকেশন, কাজী কমিউনিকেশন্স, আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড, এক্সপোনেন্ট ইনফোসিস্টেম (প্রা.) লিমিটেড, ট্রাস্ট গ্লোবাল, ইমতিয়াজ এন্টারপ্রাইজ, রিয়েল আইটি, বাংলা পাজেল লিমিটেড, কোডার্স ল্যাব, প্লান-বি সলুশন, কে এ আর কমিউনিকেশন এবং সংযোগইউ ডট কম নামীয় প্রতিষ্ঠানকে রেডি স্পেস বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এই ১৬টি প্রতিষ্ঠান সেখানে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টসহ আইটির বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করবে। এছাড়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন এন্ড ট্রেনিং সেন্টারে হ্যামকো সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি আর এন্ড ডি সেন্টারকে স্পেসে বরাদ্দ দেওয়া হয়। একই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের বিনিয়োগকারীদের অর্থায়ন করার লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের সাথে পৃথক একটি সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। এই সমঝোতার আওতায় হাই-টেক পার্কের বিনিয়োগকারীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করবে ব্র্যাক ব্যাংক।
এছাড়া আইসিটি ইন্ডাষ্ট্রি, একাডেমিয়া এবং অংশীজনদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি, আইসিটি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর সক্ষমতা ও দক্ষতা উন্নয়ন, নারী উদ্যোক্তা এবং স্টার্টআপদের মধ্যে ইকোসিস্টেম এর উন্নয়ন, আইসিটি খাতে গবেষণা ইত্যাদি উদ্দেশ্য সাধনকল্পে ৪টি প্রতিষ্ঠানের সাথেও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ওমেন এন্ড ই-কমার্স (উই), নারী উদ্যোক্তা ফোরাম, নিবেদিতা এবং বাংলাদেশ ওমেন ইন টেকনোলজি (বিডবিøউআইটি)। এর ফলে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্রান্ডিং ও আইসিটি খাতের অগ্রযাত্রা আরও একধাপ এগিয়ে যাবে মর্মে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
এনএম জিয়াউল আলম বলেন, বাংলাদেশে টেকসই হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিং ইকোসিস্টেম নির্মাণের এখনই উপযুক্ত সময়। যেখানে হাই-টেক পার্ক অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। কোভিড-১৯ পরবর্তী বৈশ্বিক যে মন্দার ঝুঁকি রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে শ্রম-নির্ভর অর্থনীতি যথেষ্ট নয়। চলমান পরিস্থিতিতে যেসব দেশ জ্ঞান-ভিত্তিক ও প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের বিকাশে মনোনিবেশ করছে তারাই এফডিআই (সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ) আকৃষ্ট করতে সমর্থ্য হবে। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে, প্রযুক্তিভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করার তাগিদ দেন সিনিয়র সচিব।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, তিনটি পার্কে যে ২১টি প্রতিষ্ঠান জমি ও স্পেস বরাদ্দ পেলো, তারা হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, আইওটি, বিপিও, রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমন্ট (আর এন্ড ডি), ডাটা সেন্টার প্রভৃতি উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে। এর ফলে পার্ক তিনটিতে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ও ২ হাজার ৫০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।