নিজস্ব প্রতিবেদক, হিলি:
দিনাজপুরের হাকিমপুররে বিধবা ভাতার টাকা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বোয়ালদাড় ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুখ আকন্দের বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে টাকা ছাড়া কোন কার্ড করে না দেয়ার। এব্যাপারে এক ভ‚ক্তভোগী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করায় খেপেছেন ওই ইউপি সদস্য ফারুক আকন্দ। টাকা ফিরত না দিয়ে বরং নানা রকম হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ ওই ভ‚ক্তভোগীদের। ফলে অতঙ্ক গ্রস্ত অভিযোগ কারীরা।
হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের অসহায় বিধবা ফাইমা বেওয়ার জানান, স্বামী মারা যাবার পর ছেলে-মেয়ে নিয়ে দারুন অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছি, মেজ মেয়ে কলেজে লিখাপড়া করে আর ছোট ছেলে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারে উপার্জনের কেউ নেই। মেম্বার ফারুখকে অনেক অনুরোধ করে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে সে একটা কার্ড করে দিছে।
গত মঙ্গলবার প্রথম কার্ডের টাকা উত্তোলনের সময় মেম্বার ফারুখ আমার কাছ থেকে আরও ২ হাজার টাকা নিছে। শেষে আমি নিরুপায় হয়ে ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করি। বিধবা ফাইমা বেওয়া আরও বলেন, উপজেলায় অভিযোগ করে আসার পর মেম্বার আমাদের বিভিন্ন ভাবে ভয়-ভিতি আর হুমকি দিচ্ছে।
পাইকপাড়া গ্রামের আর একজন ভুক্তোভুগী শেফালী বেওয়া বলেন, পাঁচ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলেকে নিয়ে খুব কষ্টে সংসার চালাচ্ছি। আমার কাছ থেকেও ফারুক মেম্বার বিধবা ভাতার কার্ড করে দেয়ার জন্য আমার কাছে তিন হাজার টাকা চায়। গরিব মানুষ হওয়ায় টাকা দিতে পারেনি। পরে মেম্বার কার্ড করে দিছে কিন্ত গতমঙ্গলবার ভাতার টাকা থেকে তিন হাজার টাকা সে নিয়ে নেয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামে বিধবা মাহিদুলের মা’র কাছ থেকেও সেই দিন মেম্বার ৩ হাজার টাকা নিয়েছিলো। তবে ইউএনও’ কাছে অভিযোগ করার পর মাহিদুলের মা’র টাকা মেম্বার ফেরত দেয়। কিন্ত আমাদের টাকা দিচ্ছেনা।
একই গ্রামের ৬৮ বছর বয়সী বৃদ্ধা লাইলী বেগম বলেন, আমি বয়স্ক মানুষ চলতে ফিরতে পারি না। তাই মেম্বার ফারুখতে প্রায় ১৮ মাস আগে আমাকে একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য ২ হাজার টাকা দিয়ে ছিলাম, আজ পর্যন্ত মেম্বার কোন কার্ড করে দেয়নি।
কথা হয় একই গ্রামের ৭২ বছর বয়সী এলাহী মন্ডলের সাথে তিনি বলেন, আমার তিন বছর আগে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছিলো এই মেম্বার ফারুখ। তবে বিনিময়ে ৩ হাজার টাকা তাকে দিতে হয়েছিলো।
টাকার বিনিময়ে বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেয়ার অভিযোগ ইউপি সদস্য ফারুক অকন্দের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য ফারুখ আকন্দ টাকা নেওয়ার কথা সম্পর্ণ অস্বীকার করেন।
ইউপি সদস্য ফারুক আকন্দের বিরুদ্ধে টাকা নেয়ার অভিযোগ সত্য বলে জানান বোয়ালদাড় ইউনয়িনের চেয়ারম্যান মেফতাহুল জান্নাত মেফতা। তিনি বলেন, ভুক্তোভুগীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ফারুককে বলা হয়েছে।
এবিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুর রাফিউল আলম জানান, বোয়ালদাড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুখ আকন্দের বিরুদ্ধে বিধবা ভাতার টাকা নেওয়ার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ইতিমধ্যে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সত্যতা প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে আইনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।