শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / হাওরে বারো মাস চারা উৎপাদন

হাওরে বারো মাস চারা উৎপাদন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা এখন নিয়মিত কৃষকের ক্ষতির কারণ। প্রতিবছরই বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ বছর টানা চারবার বন্যায় আমন ধানের সঙ্গে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই শীতের সবজি উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ কৃষকদের কপালে। এই অবস্থায় ‘গ্রিনহিল সিডলিং ফার্ম’ গ্রিনহাউস পদ্ধতিতে উচ্চফলনশীল সবজির চারা উৎপাদনে নেমেছে। মাটিবিহীন পদ্ধতিতে শূন্য মৃত্যুহার ও পোকা-মাকড়ের বিরুদ্ধে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন চারা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনও শুরু করেছে তারা। সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলে এই পদ্ধতিতে বারো মাস উচ্চফলনশীল সবজির চারা উৎপাদন এটিই প্রথম। ভবিষ্যতে কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেও প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তোলার চিন্তা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আধুনিক পলিহাউসে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সবজির চারা উৎপাদনের প্রথম উদ্যোগ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন কৃষকরা।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্তের গ্রাম আমপাড়ায় এক একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘গ্রিনহিল সিডলিং ফার্ম’। বর্তমানে আগাম ফলনশীল কয়েক প্রজাতির টমেটো, লাউ, ফুলকপি ও কাঁচা মরিচের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। মাটির বদলে প্লাস্টিকের তৈরি বিশেষ ট্রেতে কোকোপিট ব্যবহার করে শতভাগ শিকড়যুক্ত চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। তাই মাটিবাহিত রোগজীবাণুতে চারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রিনহাউসের ভেতরে নানা জাতের চারাগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা হাসান আহমদ। তাঁর পাশেই কাজ করছেন প্রকল্পটির একজন পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা গাজী নুরুল ইসলাম। চারার জন্য বেড তৈরি করছেন কয়েকজন শ্রমিক। হাসান আহমদ পরামর্শ দিচ্ছেন। এর মধ্যেই দেখা গেল সাম্প্রতিক চার দফা বন্যায় সবজিক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক গ্রিনহাউসের ভেতর হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করছেন। তিনি টমেটো চারা অর্ডার করার জন্য এসেছেন। কর্তৃপক্ষ জানায়, তাঁকে আগামী মাসে চারা সরবরাহ করা সম্ভব হবে। কিছুক্ষণ পর এলাকার আরো দুই কৃষককেও চারার জন্য আসতে দেখা গেল।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, হাওরাঞ্চলে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের বেশির ভাগ সময়ই বন্যা থাকায় সবজি চারা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থা বিবেচনা করে কৃষকদের বারো মাস সবজি চাষে উৎসাহিত করে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে এই খামারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমপাড়া গ্রামে ভাড়া করা এক একর জমিতে যাত্রা শুরু করে এরই মধ্যে উৎপাদনেও নেমেছেন তাঁরা। বিদেশ থেকে আমদানি করা ইউভি সুস্থিত পলি ও শেডনেট দিয়ে দৃষ্টিনন্দন পলিহাউস তৈরি করেছেন। সীমান্তের পাদদেশে সবুজাভ দৃষ্টিনন্দন এই পলিহাউস দেখতেও মানুষ ভিড় করছে।

আধুনিক এই পলিহাউসে প্লাস্টিক ট্রেতে মাটির বদলে নারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি কোকোপিট প্রক্রিয়াজাত ও জীবাণুমুক্ত করে বীজ বপন করা হচ্ছে। রোদের তাপ থেকে চারার সুরক্ষার জন্য ওপরে শেডনেট জুড়ে দিয়ে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে কৃত্রিম উপায়ে। তা ছাড়া গ্রিনহাউসের ভেতরে রয়েছে কৃত্রিম দাঁড়কাক। কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে পোকা ঢুকলে তা ওই দাঁড়কাক শুষে নেবে সহজে। হাউসের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পলিহাউসের ভেতরে উৎপাদিত চারা ২০ দিন পরে রোপণযোগ্য হয়ে ওঠে। চারাগুলো শতভাগ শিকড়যুক্ত থাকায় রোপণের পর মৃত্যুহার প্রায় শূন্য এবং মাটিবাহিত রোগজীবাণু থেকেও মুক্ত। উন্মুক্ত জমির চারার তুলনায় এই চারা থেকে ফসল দ্রুত তোলা যায়। শীতকালীন সবজি চারা উৎপাদন শুরু করলেও গ্রীষ্মকালীন সবজি চারা ও গ্রাফটিং বা জোড়কলম পদ্ধতির টমেটো চারা উৎপাদন করার চিন্তা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু গ্রাফটিং টমেটো চারা অধিক ফলনে সক্ষম বলে জানান তাঁরা।

ফার্মে বর্তমানে চারজন শ্রমিক রাত-দিন টানা কাজ করছেন। চারাগুলোতে দিনে অন্তত তিনবার সেচ দিতে হয়। তাপমাত্রা ঠিক আছে কি না পরীক্ষা করতে হয়। চারায় সময়ে সময়ে ভিটামিন দিতে হয়। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান আহমদ বলেন, ‘বৃহত্তর সিলেট বিভাগে গ্রিনহাউস পদ্ধতিতে গ্রিনহিল সিডলিং ফার্ম প্রথমবারের মতো উচ্চফলনশীল চারা উৎপাদন শুরু করেছে। বারবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা এখন হতাশ। তাঁরা কৃষি উৎপাদন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন। কৃষকরা যাতে বন্যা ও বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে জন্য বারো মাস সবজি চারা সরবরাহ করে কৃষি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছি আমরা। ভবিষ্যতে গ্রিনহিল সিডলিং ফার্মকে একটি কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সফর উদ্দিন বলেন, ‘আমার জানামতে গ্রিনহাউস পদ্ধতিতে উচ্চফলনশীল সবজি চারা উৎপাদন সুনামগঞ্জে প্রথমবারের মতো হচ্ছে। আমাদের ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে খাদ্য ঘাটতি দূর করতে উচ্চফলনশীল কৃষির বিকল্প নেই। হাওরাঞ্চলে এই প্রক্রিয়ায় প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নেওয়ায় কৃষকরা অবশ্যই লাভবান হবে। কৃষিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে। কারণ লাগাতার বন্যার কারণে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে নানা দিক ভাবতে হচ্ছে।’

আরও দেখুন

বিএনপির সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে হামলা-দখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ,,,,,,,,,,চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক …