শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে সরকার, প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তুতি

হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে সরকার, প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তুতি

নিউজ ডেস্ক:
হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জের চার হাজার একর জমির ফসল পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। যা মোট আবাদ করা জমির দুই শতাংশ। তারপরেও বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে বা কৃষকের কি ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। যত দ্রুত সম্ভব তা নিরূপণের পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরকে নগদ সহায়তা বা কৃষি সামগ্রী প্রণোদনা বাবদ সহায়তা দেওয়ার কাজ শুরু করবে সরকার। তবে ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের জন্য চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ মোট সাড়ে ১৪ কেজি পরিমাণের নিত্যপণ্যের এক হাজার প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। আরও এক হাজার প্যাকেট বিতরণের জন্য পাঠানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সপ্তাহখানেক পরই সুনামগঞ্জের হাওরের ধান পাকার কথা। ফসল তোলার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা কৃষকের। তবে এখন তাদের ব্যস্ততা ফসল রক্ষা বাঁধ বাঁচাতেই। দিন-রাত স্বেচ্ছায় কাজ করছেন। স্থানীয় প্রশাসন সার্বিক সহায়তাও করছে। তবু ফসল বাঁচবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই অবস্থায় জেলার প্রায় ২৫ হাজার কৃষক পরিবার দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন,  গত ৫ এপ্রিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের ধর্মপাশা উপজেলার ৭৫ নম্বর পিআইসির ডুবাইল বাঁধ ভেঙে যায়। এর ফলে হাওর ও কংস নদী এখন পানিতে একাকার। ধনু ও সুরমার পাহাড়ি ঢলে কংস নদী অনেকটাই ফুলে উঠেছে। এতে চন্দ্রসোনার থাল, ধারাম হাওর ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার হালদিয়া হাওর ভাঙনের ঝুঁকিতে। ডুবাইল বাঁধটি ভেঙে ধর্মপাশার ১৮৫ হেক্টর জমির আধপাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ক্ষীণকায় কংস নদীর অপর পারেই নেত্রকোনার হালদিয়া হাওর এখনো সুরক্ষিত। চন্দ্রসোনার থাল হাওরের পাশেই ধর্মপাশা উপজেলার ধারাম হাওর। এই হাওরে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন কৃষকরা। পাশের হাওরটি তলিয়ে যাওয়ায় এই হাওরের কৃষকরা এখন দুশ্চিন্তায় আছেন। হাওরের কান্দা ও বাঁধে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কৃষকরা।

সূত্র আরও জানিয়েছে, সুনামগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে হাওরের চার হাজার ৯০০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ২৫ হাজার কৃষকের ৬৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। বাঁধ ভেঙে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা ও অনিয়মকে দায়ী করছেন তারা।

তিনি জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা বিতরণের পাশাপাশি আমরা পুরো হাওরের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছি। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদেরকে এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে সঙ্গে নিয়ে এ কাজটি করছি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কতদিন লাগবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়, কারণ হাওরে পানি প্রবেশের আশঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি। নতুন করে যাতে কোনও এলাকা প্লাবিত না হয় সেদিকে সর্বদা নজর রাখছি।

এদিকে হাওর অধ্যুষিত জেলা নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, এ জেলায় কোনও ক্ষতি না হলেও আশংকা রয়েই যায়। তবে আমরা সর্বদা সজাগ ও সতর্ক রয়েছি। যেখানে যেখানে ত্রুটি ছিল সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। আপাতত এ জেলায় কোনও ক্ষতির আশংকা নাই।

এ প্রসঙ্গে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, সার্বক্ষণিক জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। ইতোমধ্যে এক হাজার নিত্যপণ্যের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। আরও এক হাজার প্যাকেট যাচ্ছে। এর বাইরেও সরকারের জিআর তহবিল এবং কৃষি প্রণোদনা সহায়তার জন্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। এ কাজটি শেষ হওয়া মাত্রই সার্বিক সহায়তা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে দাঁড়াবে সরকার।  

এদিকে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, জেলায় দুই লাখ ২৩ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট চার হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। জেলার ১৩৭টি হাওরসহ কৃষির সঙ্গে তিন লাখ ৭৮ হাজার ৭০৫টি পরিবার জড়িত। হাওর ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারাও বিশাল ক্ষতির মুখে পড়ে।

এদিকে সুনামগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সব কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করেছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। জেলা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় নেতা, সুবিধাভোগী, গণমাধ্যম প্রতিনিধি এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।

আরও দেখুন

সিংড়ায় বিষ প্রয়োগে পুকুরের মাছ নিধনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক সিংড়া ,,,,,,,,,নাটোরের সিংড়ায় বিষ প্রয়োগ করে রাতের আঁধারে একটি পুকুরের মাছ নিধন করার …