রবিবার , ডিসেম্বর ২৯ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / হাইটেক পার্কে আশার ঝলক

হাইটেক পার্কে আশার ঝলক

নিউজ ডেস্ক:
করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশের হাইটেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগের ঢল নেমেছে। মহামারিকালেও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্পের উদ্যোক্তারা গাজীপুরের কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করছেন।

এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ উপযোগী হওয়া দেশের সাতটি হাইটেক পার্কের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে করোনাকালে বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে ৬৬১ কোটি টাকার। এ ছাড়া ওরিক্স বায়োটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৩০০ মিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৫৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এই পার্কে এ পর্যন্ত ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এক হাজার ১১৭.৫৮ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।

অন্য ছয়টি হাইটেক পার্কেও আশানুরূপ বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে ওয়ালটন, র্যাংগস, ফেয়ার ইলেকট্রনিকস, ভিশন, কেডিএস, নাজডাক টেকনোলজিস, এলিয়ন ইন্টারন্যাশনাল, বিজনেস অটোমেশন, জেআর এন্টারপ্রাইজ ও বিজেআইটির মতো বড় দেশীয় গ্রুপের পাশাপাশি বিদেশি বিভিন্ন কম্পানির বিনিয়োগ এসেছে। কম্পানিগুলো এই পার্কে মোবাইল ফোন সংযোজন ও উৎপাদন, অপটিক্যাল কেবল, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ডাটা সেন্টারসহ উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের নিশ্চয়তা, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে একগুচ্ছ শুল্কমুক্ত সুবিধার কারণে এই হাইটেক পার্কে বিনিয়োগে ঝুঁকছেন উদ্যোক্তারা।

কালিয়াকৈরের হাইটেক সিটিতে বিপুল চাহিদা থাকলেও প্লট প্রায় শেষের দিকে। সে কারণে উদ্যোক্তাদের জায়গা দিতে বিভাগীয় শহরসহ দেশের ৩৯ জেলায় হাইটেক পার্ক গড়ে তুলছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।

প্রযুক্তি বিশ্বের রাজধানী খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিকে সবাই এক নামে চেনে। প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা বৈশ্বিক কম্পানিগুলোর বেশির ভাগের সদর দপ্তর সেখানেই। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুগল, অ্যাপল, ফেসবুক, টুইটার, ইয়াহু, অ্যাডব, ইবে, নেটফ্লিক্স, সিসকো, পেপ্যাল, ইন্টেল, এইচপি, ইউটিউব, উবার, প্যান্ডোরা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

কয়েকটি প্রযুক্তি সংস্থা বলেছে, বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীদের গন্তব্য প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। উচ্চ শুল্ক, আবাসন ও কার্যালয় ভবনের জন্য খরচ বেশি হওয়ার কারণে কিছু প্রতিষ্ঠান সিলিকন ভ্যালি ছাড়তে চায়। এদের কেউ কেউ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তাদের উৎপাদনকেন্দ্র স্থানান্তর করতে শুরু করেছে। এ ছাড়া চীনভিত্তিক বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও কারখানা স্থানান্তর করছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বলছে, এসব বিনিয়োগ যাতে বাংলাদেশে আসে সে জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক সিলিকন ভ্যালিতে ইন্টেল ও ম্যাকসকেন ভেঞ্চারের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করে তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশে ৩৯টি হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের ঋণ সহায়তায় ১২টি হাইটেক পার্ক হবে। বর্তমানে সাতটি হাইটেক পার্ক বিনিয়োগের উপযুক্ত অবস্থায় আছে। এগুলো হচ্ছে কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, ঢাকায় জনতা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, সিলেটে বঙ্গবন্ু্ল শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক, চট্টগ্রামে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, নাটোরে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, রাজশাহীতে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার। দেশের বিভিন্ন পার্কে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কালিয়াকৈরে ৩৩৫ একরের দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি বাস্তবায়িত হচ্ছে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে। বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে ‘সাপোর্ট টু ডেভেলপমেন্ট অব কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক’ প্রকল্পের আওতায় অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো নির্মাণ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। পার্কটিকে পাঁচটি ব্লকে ভাগ করে প্রশাসনিক ভবন, হাসপাতাল, কাস্টম হাউস, স্কুল-কলেজ, ব্যাংক, শপিং মল, আবাসিক এলাকা, শিল্প এলাকা, কনভেনশন সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কালিয়াকৈর পার্কের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করতে একটি রেলস্টেশন স্থাপন ও শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে।

এরই মধ্যে সেখানে ৪৮টি কম্পানিকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উৎপাদনে রয়েছে ১৪টি কম্পানি।

জানা গেছে, করোনা শুরুর পর মার্চ থেকে এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে ১৭টি কম্পানির কাছ থেকে ৭৭.৭৭ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, যা টাকার অঙ্কে ৬৬১ কোটি। একই সঙ্গে সাত হাজার ৮৮৯ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশন কিয়স্কসহ ডাটা সফট আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) যন্ত্রাংশ তৈরি করছে। ওরিক্স বায়োটেক আসছে মার্চ থেকে বায়োটেকনোলজি পণ্য উৎপাদনের কাজ শুরু করবে। তারা ৩০০ মিলিয়ন ডলার পরিমাণ বিনিয়োগ করবে পাঁচ থেকে দশ বছরে। এ ছাড়া সোনার বাংলা ফাউন্ডেশন কিডনি ডায়ালিসিসের যন্ত্রপাতি উৎপাদন করছে। সম্প্রতি কোরিয়ার বিখ্যাত অটোমোবাইল ব্র্যান্ড হুন্দাই বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে কারখানা স্থাপনে ছয় একর জমি নিয়েছে।

ফেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান রুহুল আলম আল মাহবুব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অটোমোবাইল শিল্পে প্রযুক্তি হস্তান্তর, মানবসম্পদ বিকাশ ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই আমাদের লক্ষ্য। শিগগিরই আমরা হুন্দাইয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এবং সরকারের নীতি সহায়তায় উৎপাদনভিত্তিক কারখানা স্থাপন করব।’

জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা শ্রমনির্ভর থেকে জ্ঞাননির্ভর জাতিতে পরিণত হতে চলেছি। পৃথিবীতে যে বিশাল জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে, আমরা তার অংশীদার হতে চাই। নতুন ধরনের এই অর্থনীতিতে প্রবেশের মাধ্যমে তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সরকার সারা দেশে হাইটেক পার্ক নির্মাণসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে দেশের প্রায় সকল ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়েছি, যা শিগগিরই গ্রামের ঘরে ঘরে চলে যাবে। এর ফলে দেশের স্বল্প শিক্ষিত তরুণরাও নিজ এলাকায় বসে বিদেশি কম্পানির কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে।’

২০১০ সালে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। এরপর কালিয়াকৈরে ৩৫৫ একর জমির ওপর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি তৈরির কাজ শুরু হয়। এর কাজ প্রায় শেষের পথে।

জানা গেছে, বিনিয়োগকারীদের জায়গা দিতে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির পাশেই গড়ে তোলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি-২। প্রায় ৩৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে।

চট্টগ্রামেও তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রাম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্মিত সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটের ৬-১১ তলা নির্মাণ করে তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রাম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। এরই মধ্যে পার্কটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই এটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারকে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে রূপান্তর করা হয়েছে। নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ সৃষ্টি করতে সরকারের এই আয়োজন। বর্তমানে ১৫টি প্রতিষ্ঠান সেখানে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আছে স্টার্ট-আপদের জন্য বিশেষ বরাদ্দের ফ্লোর।

সিলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক নির্মাণ করছে সরকার। সিলেটে ১৬২.৮৩ একর জমিতে পিপিপি মডেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। এই পার্ককে বিশেষায়িত ইলেকট্রনিক সিটি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর।

যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর চালু হয়েছে। অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এই পার্কে।

রাজশাহীর পবার নবীনগরে গড়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক। ৩১ একর জমিতে দুই লাখ বর্গফুটের মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এ বছরের জুন মাসে।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হাইটেক পার্কে কম্পানিগুলোর জন্য সরকার বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১০ বছর কর মওকুফ, পার্ক ডেভেলপারের জন্য ১২ বছর পর্যন্ত কর মওকুফ, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্ক মওকুফ, প্রতিটি হাইটেক পার্ককে ওয়্যারহাউস স্টেশন হিসেবে বিবেচনা করাসহ নানা সুবিধা। এ জন্য কমপক্ষে এক কোটি ডলার বা প্রায় ৮৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। পার্কে বরাদ্দ পাওয়া প্লটের ভাড়া হিসেবে বছরে প্রতি বর্গমিটারে দুই ডলার করে দিতে হবে কম্পানিগুলোকে।

বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাইটেক পার্কে আমরা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পেরেছি। বড় বড় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কম্পানির বিনিয়োগ এসেছে। অনেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছে; যার ফলে এখানে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’

আরও দেখুন

ঢাকাস্থ সিংড়া কল্যাণ সমিতির সাধারণ

সম্পাদক গ্রেফতার নিজস্ব প্রতিবেদক সিংড়া ,,,,,,,,,,,,,,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রদের ওপর হামলাকারী এনায়েত করিমরাঙ্গাকে নাটোরের সিংড়া …