নিউজ ডেস্ক:
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছরের মধ্যে মোংলা বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। রাজধানীর সবচেয়ে কাছের বন্দর হওয়ায় মোংলা হয়ে পোশাকশিল্পের বিভিন্ন পণ্য যাচ্ছে ইউরোপের ব্রিটেন, ডেনমার্ক ও পোল্যান্ডে। বেড়েছে বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি। এ ছাড়া বন্দরের আশপাশে গড়ে উঠেছে নতুন শিল্প-কারখানা। আমদানি-রপ্তানিতে প্রতিদিনই চাপ বাড়ছে মোংলা বন্দরে। এই চাপ সামলাতে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৭৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরে ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পে বন্দরের পশুর চ্যানেলের ইনার বারে জয়মণি ঘোল থেকে জেটি পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হচ্ছে। এই কাজ শেষ হলে ১০ মিটার থেকে সাড়ে ১০ মিটার গভীরতার কনটেইনারবাহী জাহাজ সরাসরি জেটিতে ঢুকতে পারবে। এ ছাড়া প্রায় ৬০১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট’ প্রকল্পে জেটিতে কনটেইনার টার্মিনাল, হ্যান্ডলিং ইয়ার্ড, ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ, সার্ভিস ভ্যাসেল জেটি শেড, ইকুইপমেন্ট ইয়ার্ড ও হারবার ক্রাফট কেনা হচ্ছে। একই সঙ্গে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি, ভ্যাসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম, সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিঃসৃত তেল অপসারণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, ২০২৭ সালের মধ্যে মোংলা বন্দরকে দেশের প্রথম স্মার্ট বন্দর হিসেবে উপহার দিতে পারব। ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পর মেইনটেনিং ড্রেজিং প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর অনুমোদনও পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালে জুন থেকে বন্দরে সাড়ে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ আনার জন্য নাব্যতা রক্ষা করা হবে। তিনি বলেন, আগে জেটি নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল। এখন পিপিপি আওতায় দুটি জেটি নির্মিত হচ্ছে। লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় আরও দুটি জেটি নির্মিত হবে। এর সঙ্গে আরও বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হবে। হবে ছয় লেনের রাস্তা। ইকুইপমেন্ট সংগ্রহে চট্টগ্রাম বন্দরের সম-সক্ষমতা অর্জন করেছে মোংলা বন্দর। আগে ঘণ্টায় ১৬টি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হতো, এখন ২২ থেকে ২৪টি হ্যান্ডলিং করা যায়। ৪০১.২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পশুর চ্যানেল ও আশপাশের নদ-নদীতে বিভিন্ন জাহাজে নিঃসৃত তেল ও পেট্রোলিয়াম বর্জ্যসহ আবর্জনা সংগ্রহ করা সহজ হবে। এতে বন্দর এলাকায় সামুদ্রিক দূষণ হ্রাসসহ পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা থেকে মোংলার দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার। ফলে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। এদিকে গতকাল খুলনার অভিজাত হোটেলে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তৃতা করেন- বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এস কে আফিল উদ্দিন এমপি, মোংলা কাস্টম হাউস কমিশনার মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ক্যাপ্টেন মো. আসাদুজ্জামান