নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের পোষ্যদের আবেদন গ্রাহ্য না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজাকারের ছেলে-নাতি-স্বজনদের যারা বিভিন্ন উপায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছেন তৃণমূল থেকে তাদের মনোনয়নের জন্য নাম প্রস্তাব না পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হবে। তার পরও কোনোভাবে তৃণমূল নাম প্রস্তাব করলে কেন্দ্র তাদের বাদ দিয়ে দেবে।
এছাড়া মনোনয়নের ক্ষেত্রে বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের বড় অংশ বাদ পড়বেন এবার। করোনাকালে দরিদ্রজনের জন্য সরকারের বিভিন্ন সহায়তা ও ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ১৩০ জনপ্রতিনিধিসহ বিতর্কিতদের মনোনয়ন কিংবা সমর্থন দেওয়া হবে না। গত ১২ বছর ধরে দলে বঞ্চনার শিকার তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের এবার মূল্যায়ন করে তাদের মনঃকষ্ট দূর করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শূন্য হওয়া পাঁচটি আসনের উপনির্বাচনে দীর্ঘদিন বঞ্চিত নেতাদের মনোনয়ন দিয়ে তিনি তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। আর আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে কেন্দ্রীয় পাঁচ জন নেতা ইত্তেফাককে জানান। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সাংগঠনিক জরিপে উঠে এসেছে যে, প্রতি ইউনিয়নে গড়ে ছয় জন করে দলীয় নেতা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান।
এ নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া না-পাওয়াকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন বা গ্রাম পর্যায়ে দলে অন্তঃকোন্দল ছড়িয়ে পড়লে তার প্রভাব জেলা-উপজেলা ও স্থানীয় এমপি হয়ে ওপরের দিকেও পড়তে পারে। জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করতে জেলা-উপজেলা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলিয়ে ছয় সদস্যের স্থানীয় মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী ঠিক করে মনোনয়নের সুপারিশ পাঠাবে কেন্দ্রে। আর প্রার্থী বাছাইয়ের এ প্রক্রিয়ায় ভোটাভুটির আশ্রয়ও নেওয়া যাবে। জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হবে। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় এমপিরা কোনো রকম হস্তক্ষেপ কিংবা প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। এমনকি দলের যেসব জেলা-উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক একই সঙ্গে মন্ত্রী কিংবা এমপি তারা মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণকালে ত্রাণ চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩০ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের ৬২ জন চেয়ারম্যান। প্রায় সমান সংখ্যক ইউপি সদস্যের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের একজন ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের একজন সদস্য এবং চার জন পৌরসভার কাউন্সিলর রয়েছেন। এদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ নেতা। এদেরকে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে না।
তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, ২০০৮ সালের নির্বাচনে দল ক্ষমতায় আসার পর থেকে ত্যাগের মূল্যায়ন পাচ্ছেন না দুর্দিনের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতারা। অন্যদিকে দলে সুবিধাবাদীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। আওয়ামী লীগের দুই জন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে সত্যিকারের ত্যাগী নেতাদের খোঁজা হচ্ছে। এই তালিকা করে বঞ্চিতদের মূল্যায়ন ও সুবিধাবাদীদের বাদ দেওয়া হবে এমন একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েই এগুচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তারা আরো বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের সন্তান-স্বজনসহ সুবিধাবাদী ও কর্মীবিচ্ছিন্ন জনপ্রতিনিধিদের সরিয়ে দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূলের ক্ষোভ-বিক্ষোভ দূর হবে এবং দলে ভারসাম্য ফিরে আসবে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগামীতে স্থানীয় সরকারের প্রতিটি নির্বাচনে দলের সব পর্যায়ে ত্যাগী, সত্, কর্মীবান্ধব নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের পোষ্যদের আবেদন গ্রাহ্য হবে না। পাশাপাশি হাইব্রিড, সুযোগসন্ধানী ও দুর্নীতিবাজদের বাদ দেওয়া হবে।’