সরকারের সঠিক নীতি আর কৃষকদের পরিশ্রমের কারণেই ধানের বাম্পার ফলন হচ্ছে। তবে ভাল দাম না পেয়ে হতাশ কৃষক। প্রান্তিক কৃষকদের রক্ষার কোন বিকল্প নেই। তাদের হাতে ন্যায্যমূল্য তুলে দিতে উৎপাদন খরচ কমানো, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ, ধান-চাল সংরক্ষণের পর্যাপ্ত গুদাম ও প্রয়োজনীয় পরিমাণে রফতানিতে যেতে হবে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে মিল মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ধান নিয়ে কৃষকদের হতাশা কষ্ট দেখতে চায়না কৃষি মন্ত্রণালয়। আগামীতে এই সমস্যা যেন না হয় সেজন্য এখনই প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করে স্থায়ী সমাধানের পথে হাটতে চান। নিশ্চিত করতে চান কৃষকদের প্রাপ্য। আগামী মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সরকার ধান সংগ্রহ করবে। কৃষকদের লাভবান করতে প্রয়োজনে সারের দাম আরও কমানো হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও মিল মালিকরাও চান কৃষকের ন্যায্য মূল্য বৃদ্ধিতে সঠিক পদক্ষেপ।
কৃষক পর্যায়ে ধান-চালের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণের জন্য সরকার গৃহীত পদক্ষেপের অংশ হিসেবে কৃষকদের নিকট থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ/প্রক্রিয়াকরণ, মিলারদের মাধ্যমে ক্রাশিং ও সংরক্ষণ এবং চাল রফতানি বিষয়ে ফার্মগেটস্থ বিএআরসি সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব তথ্য উঠে আসে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য পেতে সরকারের কি করণীয় সে বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও রাইসমিল মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা তাদের অভিমত তুলে ধরেন।
এই ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এখন শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশই নয় বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির এই ধারবাহিকতাকে টেকসই করার পাশাপাশি কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও সরকার সচেষ্ট রয়েছে। বাম্পার উৎপাদনে ধানের মূল্য কম হওয়ায় সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কৃষকদের যথাযথ মূল্য নিশ্চিতে সম্ভাব্য সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় চলছে। সরকারী খাদ্য গুদামের ধারণক্ষমতা সীমিত। তদুপরি এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। রাইস মিলার, চাতাল কল মালিকদের আরও অধিক পরিমাণ ধান চাল ক্রয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। তবে কৃষকদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে আমাদের আগামীতে আরও কাজ করে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ হ্রাসের জন্য বিভিন্ন কৃষি উপকরণে সরকারের প্রদত্ত ভর্তুকি ও উন্নয়ন সহায়তাকে আরও প্রসারিত করা হবে। সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অধিক গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে ধান রোপণ ও সংগ্রহকালীন সময়ে কৃষি শ্রমিকের সংকটকে দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একটি যন্ত্রের দাম ১০ লাখ হলে সরকার ৭০ শতাংশ ভর্তুকি অর্থাৎ ৭ লাখ টাকা দিচ্ছে। তবুও আমরা যান্ত্রিকীকরণ সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারিনি। এটা নিয়ে কাজ করতে হবে।
আব্দুর রাজ্জাক আরো জানান, একটি ইউনিয়নে হাজার হাজার কৃষক যদিও সবার থেকে ধান নেয়া সম্ভব হয় না। অনেক এলাকায় লটারির মাধ্যমে ধান কেনা হয়। তবুও ভাল টাকাটা গ্রামের কোন না কোন কৃষক তো পেল। আবার আমরা চিন্তা করছি নতুন কৃষি কার্ড করেছি। এখানে সব ধরনের তথ্য থাকবে। আমরা কৃষকদের মধ্য থেকে যারা বড় ধরনের চাষী তাদের ধান কিনব ২০ ভাগ মাঝারি চাষীর ধান কিনব ৩০ ভাগ আর বাকি ৫০ ভাগ কিনব ছোট ছোট চাষীদের ধান। সবার ধানই যাতে কেনা যায় সেজন্য এমনভাগ করে কেনা হবে। মন্ত্রী বলেন, এই সমস্যা আগামীতে হোক আমরা চাই না। কৃষকরা এখন অনেক ক্ষুব্ধ। আর বাজারে চাহিদা না থাকলে দাম কমে যায় সত্যি তবে আমরা সঠিকভাবে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করব।
তাছাড়া সরকারী গুদামের ধারণক্ষমতা সীমিত হওয়ায় মিলারদের গুদামে সাময়িক সময়ের জন্য ধান চাল সংরক্ষণ করা যেতে পারে বলেও মন্ত্রী জানান। বাংলাদেশের চালের মান অত্যন্ত উন্নত বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিদেশে এ চালের যথেষ্ট রফতানি সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের চাহিদা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আপদকালীন মজুদ এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সীমিত পরিমাণ চাল রফতানির করার বিষয়ে মন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন।