নিউজ ডেস্ক:
অপরিশোধিত ও আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানির যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এসব স্বর্ণ আমদানির পর তা কারখানায় পরিশোধনের মাধ্যমে স্বর্ণবার ও কয়েন তৈরি করা হবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি যা বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। তবে যেসব কোম্পানি পরিশোধনে কারখানা স্থাপন করতে চাইবে, সে সব কোম্পানির নামে অনুমোদিত মূলধন হিসেবে নূ্যনতম ১ হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকতে হবে। আর পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে নূ্যনতম ১০০ কোটি টাকা। এসব বিধান রেখে স্বর্ণ নীতিমালা-১৮ সংশোধন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যা গত বুধবার গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, পরিশোধনাগারটি কোম্পানির নিজস্ব জমিতে স্থাপিত হবে। আর এ জমির পরিমাণ একদাগে নূ্যনতম ২০ বিঘা হতে হবে। কোনো ভাড়া, লিজ করা সম্পত্তিতে পরিশোধনাগার স্থাপনা করা যাবে না। পরিশোধনাগারসহ জুয়েলারি শিল্পের সব ক্ষেত্রে নূ্যনতম ১০ বছরের জন্য দেশীয় বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
মূলত অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও রপ্তানির উদ্দেশ্যে স্বর্ণবার, স্বর্ণ কয়েন প্রস্তুতের জন্য এ অনুসরণীয় পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশে স্থাপিত সব স্বর্ণ পরিশোধনাগার এ পদ্ধতি প্রতিপালনে বাধ্য থাকবে। পরিশোধনাগারগুলো তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য অভ্যন্তরীণ নীতিমালা ও পদ্ধতি প্রণয়ন করতে পারবে। তবে ওই নীতিমালা বা পদ্ধতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুসরণীয় পদ্ধতির সঙ্গে অবশ্যই সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। প্রাথমিক অনুমতির জন্য আবেদনকারী কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানি ইনকরপোরেশন সার্টিফিকেট, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন দাখিল করতে হবে। এছাড়া পরিশোধনাগারে কাঁচামালের অব্যাহত ও নিরবচ্ছিন্ন জোগান নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য এক বা একাধিক স্বর্ণ খনি ও আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক মানের এক বা একাধিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক থাকতে হবে, যা আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, পরিশোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে এমন মেশিনারিজের তালিকা, কোন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হবে সেসব বিষয়ে তথ্য, স্বর্ণ পরিশোধনে ব্যবহৃত প্রযুক্তি সম্পর্কিত তথ্য আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। থাকতে হবে পরিকল্পিত বর্জ্য (তরল, কঠিন ও বায়বীয়) ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ইটিপিসহ উপযুক্ত বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন সম্পর্কিত পরিকল্পনার তথ্যও।
পরিশোধনাগার স্থাপনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নিরাপদ কর্মপরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে কোম্পানিকে। এ পরিকল্পনার বিষয়টি আবেদনের সঙ্গে থাকতে হবে। এছাড়া নিজস্ব ল্যাবরেটরি স্থাপনে মেশিনারিজের তালিকা ও সম্পাদিত কাজের বিবরণ (হলমার্ক প্রদান, বিশুদ্ধতা পরীক্ষা), সংশ্লিষ্ট আইএসও সনদ গ্রহণের পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মার্কেট রেগুলেটরি কমিটির সদস্যপদ গ্রহণের পরিকল্পনা, নিজস্ব ওয়্যারহাউজ ও ভল্ট স্থাপনের পরিকল্পনার বিষয়গুলো আবেদনের সঙ্গে উলেস্নখ করতে হবে।
এছাড়া এ নীতিমালায় পরিশোধনাগার স্থাপনে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত ও স্বীকৃত অত্যাধুনিক মেশিনারিজ ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। পরিশোধানাগার পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশগত, সামাজিক, ব্যবস্থাপনাজনিত ও গুণগত কমপস্নায়েন্স অনুসরণ করতে হবে।
পরিশোধন সক্ষমতা ও রপ্তানির বিষয়ে কী ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা আগেই আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে কোম্পানিকে। নীতিমালা অনুযায়ী, বার্ষিক অপরিশোধিত বা আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ পরিশোধের পরিমাণ, যেসব দেশে স্বর্ণবার ও স্বর্ণ কয়েন রপ্তানির পরিকল্পনা, আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কাঠামোসহ বাণিজ্যিক পরিকল্পনার মূল বিষয়াদি আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।
জানা গেছে, স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনে প্রাপ্ত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে সুপারিশ করা হবে। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (রপ্তানি) আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আবেদনপ্রাপ্তির দুই মাসের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে এ কমিটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পেশ করবে। বাছাই কমিটির ইতিবাচক সুপারিশের ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিশোধনাগার স্থাপনে প্রাথমিক অনুমতি দেবে। তবে লাইসেন্স প্রদানের দুই বছরের মধ্যে পরিশোধনাগার স্থাপনের কাজ শেষ করতে হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য রপ্তানি বাজারে প্রবেশের সময় দেশীয় পরিশোধনাগারে উৎপাদিত স্বর্ণবারে আইকনিক সিম্বল ব্যবহার করতে হবে, যা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। স্বর্ণ পরিশোধনাগারকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মার্কেট রেগুলেটরি অ্যাসোসিয়েশন ও স্বর্ণ খাতের আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কর্তৃপক্ষ দিয়ে তৃতীয় পক্ষ নিরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।