নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী তিন বছরের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রূপ পাবে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটবাসীর বহু প্রতীক্ষিত এ স্বপ্ন পূরণের শুভ সূচনা করেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গতকাল সকালে এই কাজের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিমানবন্দরের কাজ শেষ হলে দেশের বিমানের যাত্রী পরিবহন পরিসর আরও বৃদ্ধি পাবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিমানের সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালুরও আশ্বাস দেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে সিলেটে অবস্থান করা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী।
নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে ওসমানী বিমানবন্দরের পার্কিং জোনে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ শেষ হলে এই বিমানবন্দরটি পাশর্^বর্তী দেশগুলোও ব্যবহার করতে পারবে। এর আগে ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সিলেট প্রান্ত থেকে বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী ও একই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক। অনুষ্ঠান শেষে প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী সাংবাদিকদের জানান, ওসমানী বিমানবন্দরের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে সত্যিকারের পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করা হবে। আধুনিক ওসমানী বিমানবন্দর হবে সিলেটবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। প্রতিমন্ত্রী জানান, আগামী দুই-চারদিনের মধ্যে সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ওসমানী বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার দাবি সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের। সেই দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ওসমানী বিমানবন্দরের উন্নয়নে হাত দিয়েছেন। এখন যে টার্মিনাল ভবন আছে তার তিন গুণ বড় হবে নতুন টার্মিনাল ভবন। এতে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে যাত্রীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতে পারবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, এমসি কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় সরকার শক্ত অবস্থান নিয়েছে; অপরাধীরা ছাড় পাবে না। আন্তর্জাতিক মানের যাত্রী সেবাদানের জন্য সম্প্রসারিত এই টার্মিনালে থাকবে ৬টি বোর্ডিং ব্রিজ (ডাবল ডকিং ২টি, সিঙ্গেল ডকিং ২টি), কনভেয়ার বেল্টসহ ৩৬টি চেক-ইন-কাউন্টার। যার মধ্যে ২টি স্বয়ংক্রিয়, বহির্গামী ও আগমনি যাত্রীদের জন্য মোট ২৪টি পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টার, ৬টি এসকেলেটর, ৯টি লিফট এবং আগমনি যাত্রীদের জন্য ৩টি লাগেজ কনভেয়ার বেল্ট, ভবনের ফ্লোরে বসবে ইঞ্জিনিয়ারড স্টোন। নতুন টার্মিনালের ১ম তলা আগমনি এবং ২য় তলা বহির্গামী যাত্রীদের জন্য থাকবে। শহরের যে কোনো প্রান্ত থেকে আগত যাত্রী টার্মিনালের চেক-ইন লেভেলে সরাসরি যেতে পারবেন। আবার বিদেশ হতে আগত যাত্রীরা ১ম তলা থেকে বিমানবন্দর ত্যাগ করে সারফেস রোড ব্যবহার করে শহরের যে কোনো প্রান্তে যেতে পারবেন। টার্মিনাল অভিমুখী বা বহির্মুখী সব যানবাহন চলাচল হবে একমুখী যা বিমানবন্দর অংশকে সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত রাখবে। নতুন টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে আরও যেসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে তা হলো অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত কার্গো টার্মিনাল, ফায়ার স্টেশন, কন্ট্রোল টাওয়ার, প্রশাসনিক ভবন, রক্ষণাবেক্ষণ ভবন, ৬টি উড়োজাহাজ পার্কিং উপযোগী এপ্রোন, টেক্সিওয়ে, বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রসহ ফুয়েল ডিস্ট্রিবিউশান অ্যান্ড হাইড্রেন্ট সিস্টেমসহ আরও অনেক সুবিধা থাকবে এই নতুন টার্মিনালে।
নতুন টার্মিনাল ভবনের কাজ শেষ হলে দুনিয়ার এভিয়েশন জগতে বাংলাদেশ তথা সিলেটের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক দেশের বিমান সংস্থা এ বিমানবন্দর দিয়ে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে দেশের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে এবং আকাশ পথে যাত্রীদের বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা বাস্তবায়নের সুবিধা হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ও কার্যক্রমের ওপর উপস্থাপনা করেন সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।