নিউজ ডেস্ক:
দেশের প্রধান বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতার পথে। এটি ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নামেই বিশ^জুড়ে পরিচিতি পাবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া প্রথম টিউবের কাজ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় টিউবের কাজও প্রায় ৭৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এটিই হতে যাচ্ছে প্রথম টানেল।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী রবিবার জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, সরকারের মেগা প্রকল্প সমূহের মধ্যে এটি অন্যতম। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বোরিং প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য সকল চ্যালেঞ্জিং কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার দাপটে নির্মাণ কাজের সিডিউলে পথে পথে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে টানেল নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবতায় রূপ নিতে যাচ্ছে।
প্রকল্প দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, টানেল নির্মাণ কাজের অন্যতম কারিগরি উপাদান ১৯ হাজার ৬১৬টি সেগমেন্ট চীন থেকে দেশে পৌঁছেছে। শেষ চালানে ৮০০ সেগমেন্ট বোঝাই চীনা পতাকাবাহী জাহাজ থেকে এখন খালাস কাজ চলছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর আগে প্রথম দফায় ৮০০, দ্বিতীয় দফায় ১৬০, তৃতীয় দফায় ৫৪১ সেগমেন্ট আসার পর প্রতিস্থাপনও হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ৪ লেনের ২টি টিউব নিয়ে হচ্ছে এই টানেল। ২৪৫০ মিটার দূরত্বের প্রথম টিউবটি সম্পন্ন হওয়ার পর অপর ২৪৫০ মিটারের মধ্যে ১৮০০ মিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। করোনার দাপট বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এই টানেলটির কার্যক্রম পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। তবে পূর্বেকার তুলনায় কাজের অগ্রগতি কিছুটা কমেছে। তবে থেমে নেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মযজ্ঞ।
সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রথম টিউবের লেন স্ল্যাব বসানো হচ্ছে। এর এক কিলোমিটার কাজও সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় টিউবের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর পুরোদমে লেন স্ল্যাব স্থাপনের পর রোড স্ল্যাবের কাজ শুরু হবে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত এই টানেলের দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার বা দেড় মাইল। নির্মাণ কাজে জড়িতদের সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রথম টিউব দিয়ে হেঁটে যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ২৫ মিনিট। আর যখন যানচলাচল শুরু হবে তখন সর্বোচ্চ গতি নির্ধারিত থাকবে ঘণ্টায় ৮০ মাইল। সে হিসেবে একটি যান্ত্রিক যানের এ টানেল পার হতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট।
সূত্র জানায়, চীনা প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে দেশীয় শ্রমিকরা এই টানেল কাজে নিয়োজিত। ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ টার্গেট নিয়ে এই টানেল নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। দ্বিতীয় টিউবের নির্মাণ কাজ কর্ণফুলী মাঝনদী পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় টিউব নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে টানেলে তিনটি ক্রস প্যাসেজ থাকবে। যার ডিজাইন কাজ চলছে। প্রকল্প কর্মকর্তারা আশা করছেন টার্গেট অনুযায়ী নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার প্রয়াস চলছে। তবে করোনার দাপটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার কারণে হয়তবা বাড়তি কিছু সময় লেগেও যেতে পারে।
কর্ণফুলী নদীর ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মিত হতে যাচ্ছে। ১০ হাজার কোটি টাকা অর্থ ব্যয়ে এই প্রকল্পে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ ছাড় দিয়েছে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের অবশিষ্ট অর্থ সংস্থান করছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই টানেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। এই টানেল নির্মাণের কারিগরি সব উপাদান তৈরি করা হচ্ছে চীনের জিং জিয়াং প্রদেশে।
এই টানেল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড় দিয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন। পাশাপাশি আনোয়ারায় আরও নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। আনোয়ারা থেকে পটিয়া হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৪ লেনের সড়ক নির্মাণ কাজেরও যাত্রা শুরু হয়েছে। কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে এর দু’পাড়ে পুরো পতেঙ্গা এলাকায় অয়েল বেল্টসহ বহু কেপিআই (কী পয়েন্ট ইন্সটলেশন) গড়ে উঠেছে বহু আগে। এখন দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারাকে অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণের স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আনোয়ারা এলাকায় কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। টানেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে এগিয়ে আসছে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা। আনোয়ারায় হবে আরও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। ইপিজেড স্টাইলে গড়ে উঠবে শিল্প কারখানা।