নিউজ ডেস্ক:
দেশের স্টার্টআপ খাতে এখন সুবাতাস বইছে। দেশি উদ্যোগগুলো পাচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগ স্টার্টআপগুলো প্রযুক্তির উন্নয়ন, ব্যবসা স¤প্রসারণ, দক্ষ জনবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, কাস্টমার কেয়ার সেন্টার স্থাপন, অ্যাপের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করবে বলে জানা গেছে। গত এক মাসে দেশের স্টার্টআপগুলো ১০০ মিলয়ন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে। অতিস¤প্রতি ‘শপআপ’ নামের একটি স্টার্টআপ ৬৪০ কোটি, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ‘চালডাল’ ৮৫ কোটি, অ্যাপের মাধ্যমে ট্রাক খোঁজার প্রতিষ্ঠান ‘ট্রাক লাগবে’ ৩৪ কোটি (৪০ লাখ ডলার) এবং যাত্রী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘যাত্রী’ ১০ কোটি (১২ লাখ ডলার) টাকার বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, গত ছয় বছরে স্টার্টআপে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। গত একমাসে ১০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে।
জানা যায়, সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এনেছে শপআপ স্টার্টআপে। স¤প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ৬৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ পাওয়ার আগেও ১৯০ কোটি টাকার বিনিয়োগ পায়। সবমিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩৫ কোটি টাকা। নতুন বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে শপআপের চিফ অব স্টাফ জিয়াউল হক বলেন, এই বিনিয়োগ বাংলাদেশ এবং দেশের স্টার্টআপ কমিউনিটি উভয়ের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। একইসঙ্গে এ ধরনের বড় বিনিয়োগ প্রমাণ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশের ওপর আস্থা রাখছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এটা কেবল শুরু, সামনের দিনগুলোতে দেশে আরও বিনিয়োগ আসবে। দেশি স্টার্টআপের হাত ধরে এগিয়ে যাবে গোটা দেশ। বিনিয়োগের এই টাকা কোন খাতে ব্যয় করবে শপআপ, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিনিয়োগের এই টাকা বিবিধ খাতে ব্যয় হবে। শপআপের সামগ্রিক ব্যবসায়িক স¤প্রসারণ আমাদের একটা বড় টার্গেট। এই স¤প্রসারণের উদ্দেশ্যে আমরা আরও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ডিজিটালাইজেশনের পথে নিয়ে আসবো। তাছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়নে আমাদের নজর থাকবে। শপআপের ভিশন দেশের ৪৫ লাখ স্মল রিটেইলারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালকের আসনে বসানো।
এদিকে ‘চালডাল’ পেয়েছে ৮৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ। চালডালের নতুন বিনিয়োগকারীদের প্রধান হলেন লন্ডনভিত্তিক আর্থিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াইজ’র সহপ্রতিষ্ঠাতা টাভেট হিনরিকাস। এছাড়া টপিকার প্রধান পণ্য কর্মকর্তা স্টেন টামকিভি, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এক্সপ্লোরেশন ক্যাপিটাল এবং বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান মীর গ্রæপ চালডালের বিনিয়োগকারী।
জানতে চাইলে চালডালের প্রধান নির্বাহী ওয়াসীম আলীম বলেন, বিনিয়োগ তো খুবই প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানের বিকাশে, উন্নয়নে বিনিয়োগের কোনও বিকল্প নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্থাবর কোনও সম্পদ নেই। এটা একটা সমস্যা ব্যাংক ঋণ পেতে। ফলে এ ধরনের বিনিয়াগ সেই সমস্যা দূর করে। এই নতুন বিনিয়োগ দিয়ে চালডালের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে বলে তিনি জানান। এর মধ্যে আছে ওয়্যার হাউজ, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ কাজ ইত্যাদি। ‘ট্রাক লাগবে’ নতুন বিনিয়োগ পেয়েছে ৩৪ কোটি টাকা। এটা দিয়ে ‘ট্রাক লাগবে’ সারা দেশের ২২টি জেলায় কাস্টমার সেন্টার তৈরি করতে চায়। এছাড়া ট্রাক চালকদের এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা, প্রশিক্ষণের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করবে প্রতিষ্ঠানটি। ট্রাক লাগবে’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এনায়েত রশিদ বলেন, ‘উদ্যোগ বড় করতে এসব বিনিয়োগ খুব প্রয়োজন। আমাদের প্রতিষ্ঠান গ্রোথ স্টেজে এই ফান্ড পেয়েছে। গ্রোথ এবং ইনোভেশন পর্যায়ে এটা কাজে লাগবে।
তিনি বলেন, ‘এই বিনিয়োগ আমাদের অ্যাপের (ট্রাক লাগবে) উন্নয়ন, অ্যাপের বাইরে যারা আছে, তাদের এই সেবার আওতার আনার পেছনে ব্যয় করা হবে।’ বিশেষভাবে তিনি উল্লেখ করেন, এটা টেকবেজড কাজ। আমরা টেকের পেছনেই বিনিয়োগ করবো।
এদিকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গণপরিবহনে অ্যাপের মাধ্যমে টিকিটিং সেবাদানকারী স্টার্টআপ ‘যাত্রী’ পেয়েছে ১০ কোটি টাকার কিছু বেশি বিনিয়োগ। পরবর্তী সময় এই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ঢাকার বাইরেও তাদের সেবা স¤প্রসারিত করেছে। যাত্রীতে প্রি সিরিজ-এ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হলো চীনের প্রতিষ্ঠান রিফ্লেক্ট, সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বিটিএফভি ভিশন ফান্ড ও এসবিকে টেক ভেঞ্চার।
এর আগে দেশের অনেক স্টার্টআপ বিভিন্ন সময়ে বিনিয়োগ পেয়েছে। তবে স¤প্রতি বড় কয়েকটি বিনিয়োগ দেশে আসায় স্মার্টআপ খাত নিয়ে ইতিবাচক অলোচনা হচ্ছে বলে জানা গেছে।