নড়াইলে দেশের প্রথম ছয় লেনের মধুমতি সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার দুপুর ১২টায় নিজের কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতু উদ্বোধন করবেন তিনি।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মধুমতি নদীর ওপর ৬৯০ মিটার দীর্ঘ মধুমতি সেতু নির্মিত হয়েছে। যা স্থানীয়ভাবে কালনা সেতু নামে পরিচিত। এটি নড়াইল, গোপালগঞ্জ, খুলনা, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও ঝিনাইদহ জেলাকে সংযুক্ত করেছে।
জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার।
প্রকল্প কর্মকর্তাদের মতে, সেতুটি চালু হওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ দ্রুত সড়ক যোগাযোগ সুবিধা পাবেন। কারণ, বেনাপোল বন্দর থেকে মধুমতি সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার দূরত্ব কম হবে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষ কম সময়ে বিভিন্ন এলাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। এটি দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভ্রমণের সময়ও বাঁচিয়ে দেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা এবং নড়াইল জেলার অন্তর্গত লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি নদীর কালনা পয়েন্টে মধুমতি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর করেন।
এ অঞ্চলের মানুষ এখন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট হয়ে ঢাকা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করেন। এই পথে যশোর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে তাদের ১০০ কিলোমিটার বেশি ভ্রমণ করতে হয়। তারা পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে না। মধুমতি সেতু উদ্বোধনের পর এই সেতু দিয়ে পদ্মাসেতু হয়ে যাতায়াত করলে তাদের ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব কমে যাবে। এই আঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে।
মধুমতি সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারাদের মতে, সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এ স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। ওই স্প্যানের উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। এটি সেতুকে দৃষ্টিনন্দন করেছে। সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ যা রাজধানীকে দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।২৭.১ মিটার চওড়া সেতুটিতে চারটি উচ্চ গতির লেন ৪.৩০ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড এবং দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয়টি লেন রয়েছে।
মধুমতী সেতু প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, সেতুতে ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। টোল প্লাজার মেশিন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুটি গাড়ি চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
গোপালগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, সেতুটি এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা এই অঞ্চলে গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ঢাকার সাথে বেনাপোল স্থলবন্দর, মংলা সমুদ্র বন্দর ও নোয়াপাড়া নদী বন্দরের সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে।
নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, এ সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে নড়াইল ও গোপালগঞ্জের দু’প্রান্তে দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ সেতুর চালু হলে সারা দেশের সাথে নড়াইলসহ দক্ষিনাঞ্চলের যোগাযোগ যেমন বাড়বে তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক জোন, বিসিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় বড় উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন। ফলে সেতুটি হবে নড়াইলসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার।