নিজস্ব প্রতিবেদক:
সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। একে রূপ দেওয়া হবে আঞ্চলিক হাব হিসেবে। এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সুবিধা নিতে পারবে ভুটান, নেপাল এবং ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য।
আঞ্চলিক হাবে রূপ দিতে ইতিমধ্যে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের উন্নয়নে তিন ভাগে ভাগ করে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। অন্য একটি প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে। তৃতীয়টির ডিপিপি তৈরি হচ্ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরকার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা সৈয়দপুর বিমানবন্দরের উন্নয়ন করে একে আঞ্চলিক হাব হিসেবে রূপান্তর করা। ফলে সেখান থেকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের সুযোগ তৈরি হবে। কারণ এই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে পারলে নিজেদের প্রয়োজনেই ভুটান, নেপাল এবং ভারতের বেশ কয়েকটি সীমান্তবর্তী রাজ্য এটি ব্যবহার করবে। এর মধ্য দিয়ে সৈয়দপুর তথা নীলফামারী অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সৈয়দপুরকে আঞ্চলিক হাবে রূপান্তরিত করতে সরকার দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে এই বিমানবন্দরের আয়তন বাড়ানো, রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়ানো, নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা, লাইটিং সিস্টেমের উন্নয়ন, ভূমি অধিগ্রহণসহ বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
প্রথম দফায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়ানো এবং শক্তিশালীকরণের জন্য গত ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সরকার ২১৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরের বিদ্যমান প্রায় আট হাজার ফুট দৈর্ঘ্যরে রানওয়েকে ১২ হাজার ফুটে উন্নীত করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রানওয়ে শক্তিশালীকরণ ও দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত ডিপিপিটি অনুমোদনের ফলে খুব শিগগির এই প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে ভূমির প্রয়োজন। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুর বিমানবন্দরের বর্তমান ভূমি হচ্ছে মাত্র ১৩৬ একর। এটিকে আঞ্চলিক হাবে রূপান্তর করতে পাঁচগুণ ভূমির প্রয়োজন। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের জন্য আরও ৯১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য একটি ডিপিপি ইতিপূর্বে একনেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র না থাকায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সেটি বিমান মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পিইসি’র সব রিকুয়ারমেন্ট পূর্ণ করে খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ডিপিপিটি পুনরায় পিইসিতে পাঠানো হবে। জানা গেছে, ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ করা না গেলে রানওয়ের কাজ শুরু করা বেশ কঠিন। কারণ রানওয়ের সম্প্রসারণ করতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন ভূমির। আশা করা হচ্ছে, খুব শিগগির এ সংক্রান্ত ডিপিপিটি একনেকে অনুমোদন পাবে।
তৃতীয় ধাপে নির্মাণ করা হবে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন একটি টার্মিনাল। এটি নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ডিপিপি তৈরির কাজ শুরু করেছে বিমান মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়নের পুরো কাজটিই করবে বেসামিরক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (ক্যাব)। বিমানবন্দরটির উন্নয়ন কাজ শেষ হলে সেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি হবে। সব ধরনের বিমান ওঠানামা করতে পারবে।
জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সৈয়দপুর বিমানবন্দরের কাজ দ্রুততার সঙ্গে শুরু করতে চাচ্ছি। এটি হবে ওই অঞ্চলের অন্যতম আঞ্চলিক হাব। সৈয়দপুরকে বিশ্বমানে উন্নীত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি ভুটান, নেপাল এবং ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য ব্যবহার করতে পারবে। এতে এসব দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যেও সৈয়দপুর বিমানবন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দর নীলফামারীসহ ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।