একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সারাদিন টক অফ দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনাও শুরু হয়েছে।
“দেরিতে হলেও বুঝতে পারলাম, আমি একজন ব্যর্থ ক্রীড়া সংগঠক। নাটোর জেলার দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে আজ পর্যন্ত ক্রীড়াঙ্গনে কিছুই দিতে পারিনি বরং আমার জন্য ক্রীড়াঙ্গনে অনেক ক্ষতি হয়েছে। ব্যর্থতার দায় নিয়ে আর বেশি দিন দায়িত্বে থাকবো না। নাটোরবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার ব্যক্তি জীবনের জন্য সকলের কাছে দোয়া ও আশির্বাদ কামনা করছি।”
এই পোস্টটি দিয়েছেন নাটোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল। কানাইখালি মহল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোতাহার আলীর যোগ্য সন্তান। এমন একজন মানুষের এই ধরনের পোস্টে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়েছেন, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েছেন, বিচলিত হয়েছেন।
এই বুঝি নাটোর জেলা ক্রীড়া সংস্থা তার পথ হারালো! অনেকের কাছেই প্রশ্ন, তিনি কেন এমন একটি পোস্ট দিলেন? অনেকে এই পোস্ট দেখে ভীষণ রকম মর্মাহত হয়েছেন। বাজারে স্কুলে কলেজে পাড়ায়-মহল্লায় একই আলোচনা মুকুল ভাই কেন এমন একটি পোস্ট দিলেন? কি হয়েছে মুকুল ভাইয়ের? কে বা কারা তাকে এমন একটি পোস্ট দিতে প্ররোচিত করেছে? সকাল থেকে অনেকেই মোবাইল ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। তাকে বোঝাবেন যাতে, এমন একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত না নেন। কিন্তু, তিনি তার মোবাইল ফোনটি সুইচ অফ করে রেখেছেন। তাতে অনেকেরই মাঝে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ পেয়েছে।
তিনি একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি তার এলাকায় পৌর কাউন্সিলর এর দায়িত্ব পালন করেছেন। তার জনপ্রিয়তার কাছে অনেক বাঘা রাজনীতিবিদ পরাজিত হয়েছেন। অনেকেই তার সঙ্গে নির্বাচন করতে গিয়ে জামানত পর্যন্ত হারিয়েছেন! বিএনপি’র শাসনামলে একবার তাকে হারানোর বহু চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সকল ভয় এবং শংকাকে উপেক্ষা করে তার এলাকার লোকজন তাকে জিতিয়ে এনেছিলেন। সৎ, দৃঢ চরিত্র, সদা হাস্যজ্জল, বিনয়ী এবং পরিচ্ছন্ন ইমেজের এই ব্যক্তি সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল। দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর ধরে জেনে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে সজীব এবং সচল রেখেছেন। যিনি নতুন নতুন জাতীয় খেলোয়াড় তৈরি করেছেন। কী ফুটবল কী হকি কী ক্রিকেটে। অন্য জেলার স্টেডিয়াম যখন কাশবনে ঝারে জঙ্গলে আবৃত থাকে, তখন নাটোরের শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সারা বছর, সারাদিন ধরে বিভিন্ন ক্রীড়া আয়োজন এবং প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। তার সঙ্গে যারা ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়ামোদী থাকেন তারাও এক মুহূর্ত সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত নিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন। তার চরম রাজনৈতিক বিরোধীরা পর্যন্ত এক বাক্যে স্বীকার করেছেন যে, এপর্যন্ত যত ক্রীড়া সংগঠক জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের মধ্যে সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল সেরা এবং অতুলনীয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তারাও মন্তব্য করেছেন যে, অনেক রাজনীতিবিদের সঙ্গেই ঠিকমতো কথা বলা যায় না, কাজ তো দূরের কথা। সেখানে সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুলকে তাদের খুব কাছের মানুষ মনে হয়েছে, তার সদ্ব্যবহার ও বিনয়ের কারণে।
তার এই ফেসবুক পোস্ট এর পরে বহু মন্তব্য এসেছে। সবাই প্রায় একই রকম অনুরোধ জানিয়েছেন তাকে। এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত তিনি যেন না নেন। শুধু রাজনীতিবিদ নয় তিনি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সমাজসেবক এবং সর্বজনের সাধারণ মুকুল ভাই। আমার মত অনেকেরই দাবি মুকুল ভাই দয়া করে আপনি এমন সিদ্ধান্ত নেবেন না। হয়তো আপনার ব্যক্তিজীবনে অনেক বেশি সমস্যা তৈরি করে এই ক্রীড়াঙ্গনকে সময় দেয়ার জন্য। তার পরেও আমরা কিছু স্বার্থপর মানুষ আছি আপনার কাঁধে ভার চাপিয়ে আমরা নির্ভার বিনোদন উপভোগ করতে চাই।