কবিঃ রফিকুল কাদির
কবিতাঃ সে-ই আমার আনন্দ বারিধারা যে থাকে পরানে
নৈমিত্তিক বিচ্ছিন্নতা আমাদের নেই
সাথে থাকি অহর্নিশ
যাদুমন্ত্রের মতো এক হয়ে যাদুকরের ভেতর
জীবনের প্রলুব্ধ ব্যকরণ পাঠ করে বুঝেছি-
ভালোবাসা কোন বিচ্ছিন্নতার সমীকরণ নয়
হতে পারে বিরহের অনুসিদ্ধান্ত!
তাই তাকে পাওয়ার চেয়ে ভয়ঙ্কর প্রলয়
কে জাগাতে পারে জগতে
এক যুগেরও বেশি সময়!
অদ্যাবধি আমাদের কামনা ও সংগ্রামের সুরে
একটি কথাই বাজে-
‘পাশে থেকো! থেকো কাছে!
বুকের পাঁজর হয়ে-ই নয় থাকলে!
যদিও জানি, সে হাড় নয়, পাঁজর নয়
হৃদপিণ্ড বা করোটিও।
সে আমার সত্ত্বা।
অতি ক্ষুদ্র!
আমার আকাশ-
যার ভেতরে থাকে জীবন, কতশত পৃথিবী
চৌহদ্দির দখল নিয়েই থাকে সে
আহ্লাদে আটখান হয়ে
ভাসতে ভাসতে ঢুকে পরে
আমার ভেতরে
চেতনা লুপ্ত হয়
সাধারন নারীর অবজ্ঞায় দেখি-
হাতে মাধবীলতা, আটপৌরে শাড়ি, বাঙালি বাঁধন
ঘুরে বেড়ায় হৃদয়ের অলিন্দ-নিলয়ে
সমুদ্র, অনন্ত জলরাশি, ঢেউ
তার মুখের মতো- সফেদ! স্বচ্ছ!
আনত হই।
অবিশ্বাস্য আক্রোশে জাপটে ধরি
শব্দঘর ঢিপঢিপ করে বাজে
তন্ত্রীগুলো শান্ত হয়
কোন এক অপার আহ্বানের মতো
কৃষ্ণের বাঁশির মতো
মুহাম্মাদের আরাধনার মতো
যিশুর হাতের মতো
অবিনাশি শ্লোক শোনা যায়
তুমি যত দূরেই থাকো
যত দূরেই রাখি
প্রকৃতি যতই খেলুক বিচ্ছিন্নতার সাপলুডু
তবু তুমিই আমার পাঁজরে বাজো।
অন্তরে রোদ্দুর ছড়াও।
এই বিচ্ছিন্নতাকাল!
এই লকডাউন!
এই আণুবীক্ষণিক অমাবস্যা…
সেই কবে সূর্য উঠেছিল, জানিনা;
রাত্রির এ উৎযাপন, নিশীথ-সূর্যকেও হার মানিয়েছে
সূর্য ওঠে!
বাইরে আলোর মশাল- দেখে জানালা
দিনেরই ভিন্ন ভিন্ন ভাগে
সূর্য কোথায়?
সে তো কবেই ডুবেছে!
প্রকৃতি দেখি-
কখনো অন্ধকার; কখনো আকাশ
বইপত্র, মনিটর
আরও কি সব হাবিজাবি
একটা দিনেই আটকে আছি
একটা দিনেই আটকে গেছি
প্রিয়তমা! বন্ধু! মাতা বসুন্ধরা!
তোমার ভালোবাসার স্নিগ্ধতা
দূরের সমূল উৎপাটন
দূরকে আরও দূরে নিয়ে গেছে
আামাদের মতান্তরিত শ্লোক বিজারণ, বিশ্লেষণে
নতুন নতুন ক্ষার, অম্লে
ভাসিয়েছে ঘর
সংসারে আরোগ্য নেই!
অহংকার নেই!
কেবল আকুতি শুনি
অন্ধকার দেখি
দেখি ছড়িয়ে যাওয়া আতঙ্ক
এ কী মানুষের ঘর!
এ কী মানুষেরই বাঁচা!
সেই কবে কোন বৈশাখে
রোদে-জলে নেয়ে
সূর্যকে বলেছিলাম- আজ তবে যাই গুরুদেব!
এবার ঘরে ঢুকবো!
আজ মুখ ফিরিয়েছে ঘর
বসন্ত ফিরে গেছে কবে
কোন চৈত্র সংক্রান্তি নেই
বৈশাখের গান নেই
কেবল অভ্যেস মতো গুনগুন করছে কবি
শিল্পীরা গলায় তুলেছে মাদুলি
ভয়, আড়ষ্টতা বুকে পাঁজরে
– কাল যদি মরে যাই!
– যদি মেরে ফেলি ভাই, বন্ধু;
মুছে দিই পিতামাতার হাসি
তারপরও এ ক্রান্তিকালে বলি-
ভালোবাসি! ভালোবাসি!
স্বপ্নভুক দুঃস্বপ্নের মতো ছিনতাইয়ের স্বপ্ন দেখি
শান্ত পৃথিবীর স্বপ্ন
সবার সুখের দিন
ইরেজার ঘষে তুলে ফেলি- কলঙ্কের ছাই
সবই তোমার জন্য প্রিয়তমা
অন্তরে তোমাকে পাবার বাসনা
মানুষ থাকতে পারে না একা
হতে পারে না পর
সাতশো কটি ঘর তো আমারই ঘর
সাতশো কোটি হাসিই আমার উৎসমূল
ভালোবাসার জন্মান্ধ মাতা
তোমাকে ভালোবাসি।
এ বিচ্ছিন্নতা তোমাকে পাবার অবিরত বাসনা
তোমার চোখ দু’টি আবারও কাছ থেকে দেখতে চাই
খুব কাছ থেকে নিতে চাই শ্বাস
শরীরী ঘ্রাণ
যদিও মাঝখানে দূরত্বের নদী
নৈঋত যন্ত্রণা
তবু হাঁটতে থাকে- অনন্ত যাত্রার হারকিউলিস
পোড়া মাঠ, জঞ্জাল সময়, গ্রহণের সূর্য
পেছনে ফেলে, চলে যাও দূরে;
দিগন্তের ওপারে
এই তোমার নিয়তি
তোমার প্রেম
প্রণতি…
১ বৈশাখ ১৪২৭
উৎসর্গঃ ঘাসফড়িং