নিউজ ডেস্ক:
পুলিশের বর্তমান সদস্য সংখ্যা দুই লাখ ১২ হাজার। এর মধ্যে এক লাখ ২৩ হাজার কনস্টেবল। সেপ্টেম্বর থেকে দেশের ৬৪ জেলায় নতুন পদ্ধতি ও আইন অনুসারে আরও কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
পুলিশ বাহিনীকে আরও বেশি জনমুখী করার লক্ষ্যে কনস্টেবলদের গুণগত মান ও পেশাগত উৎকর্ষতা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন নীতি নির্ধারকরা। এই লক্ষ্যে পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি) ও ১৯৪৩-এর কিছু প্রবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এই সংশোধনী গেজেট আকারে প্রকাশের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সংশোধিত বিধি মেনেই পরবর্তী কনস্টেবল, এসআই, সার্জেন্ট ও টিএসআইদের বাহিনীতে যুক্ত করা হবে।
পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ সমকালকে বলেন, ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের উপযোগী একটি পুলিশ বাহিনী আমরা গড়তে চাই। আর এটা শুরু করতে হবে এখনই। দক্ষ, যোগ্য সদস্যদের বাহিনীকে অন্তভূক্ত করা হলে তারা দেশ ও জনগণের সেবায় সর্বোচ্চ আত্মনিবেদন করতে পারবে। কনস্টেবল নিয়োগের মানদণ্ডের বিষয়গুলো আলোকপাত করে এরই মধ্যে একটি মাল্টিমিডিয়া ভিডিও প্রকাশ করা হবে। এর আলোকে নিয়োগ প্রত্যাশীরা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারেন।
পিআরবি সংশোধন করে পুরুষ ও নারী কনস্টেবল উভয়ের জন্য শারীরিক উচ্চতা ২ ইঞ্চি বাড়ানো হয়েছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে উচ্চতা হতে হবে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও নারীদের ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। পুরুষদের বুকের মাপের ক্ষেত্রে ৩১ ইঞ্চি সাধারণ ও বর্ধিকরণ ৩৩ ইঞ্চি থাকা বাধ্যতামূলক। কনস্টেবল নারী চাকরিপ্রার্থীদের বেলায় আগে উচ্চতা নির্ধারিত ছিল ১ দশমিক ৫৮ মিটার বা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি।
নতুন নিয়মে কনস্টেবল নিয়োগের জন্য সাতটি পৃথক ধাপ পেরোতে হবে। এসব ধাপগুলো হলো- প্রিলমিনিরা স্ক্রিনিং, শারীরিক মাপ ও ফিজিক্যাল অ্যান্ডুরেন্স টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা, প্রাথমিক নির্বাচন, পুলিশ ভেরিফিকেশন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণের জন্য অন্তর্ভুক্ত। সেপ্টেম্বরে কনস্টেবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনে আবেদন করবেন। পুলিশ সদর দপ্তর তা যাচাই করে দেখবে। প্রার্থী মিথ্যা বা অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে নিয়োগের যে কোনো পর্যায়ে তার বাতিল করা হবে।
কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য যোগ্য আবেদনকারীদের মোবাইল নম্বরে একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড পাঠানো হবে। এরপর শারীরিক সক্ষমতা ও কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের অনলাইনে একটি কার্ড দেওয়া হবে। এরপর প্রার্থীদের উচ্চতা, ওজন ও পুরুষ প্রার্থীদের বুকের মাপ নেওয়া হবে।
শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষার আগে প্রার্থীকে ইনডেমনিটির ঘোষণাপত্র নামে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। ফরমে ওই প্রার্থী শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছে বলে ঘোষণা দিয়ে স্বাক্ষর করবেন। এরপর সাতটি ধাপে শুরু হবে শারীরিক পরীক্ষা। তা হলো- দৌড়, পুশ আপ, লং জাম্প, হাই জাম্প, ড্র্যাগিং ও রোপ ক্লাইমিং। এ ধাপের কোনো একটিতে অকৃতকার্য হলে পরবর্তী ধাপের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যাবে না এবং সেখানেই তার পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন শেষ হবে। দৌড়ে পুরুষ প্রার্থীদের ২০০ মিটার দূরত্ব ২৮ সেকেন্ডে ও নারী প্রার্থীদের ২০০ মিটার ৩৪ সেকেন্ডে অতিক্রম করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পুশআপ ইভেন্টে পুরুষ প্রার্থীদের ৩৫ সেকেন্ডে ১০টি পুশআপ ও নারী প্রার্থীদের ৩০ সেকেন্ডে ১০টি পুশআপ নেওয়ার মতো সক্ষমতা থাকা বাঞ্ছনীয়। লংজাম্পে পুরুষ প্রার্থীদের কমপক্ষে ১০ ফিট ও নারী প্রার্থীদের ৬ ফুট দূরত্ব অতিক্রম করা লাগবে। হাইজাম্পে পুরুষ প্রার্থীদের সাড়ে তিন ফিট ও নারীদের আড়াই ফিট উচ্চ অতিক্রম করতে হবে। একজন প্রার্থী তিনবার জাম্প দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ে পুরুষ প্রার্থীদের ১ হাজার ৬০০ মিটার দূরত্ব সাড়ে ৬ মিনিটে ও নারীদের ১ হাজার মিটার দূরত্ব ৬ মিনিটে অতিক্রম করতে হবে। ড্র্যাগিং ইভেন্টে পুরুষ প্রার্থীদের ১৫০ পাউন্ড ওজনের টায়ারকে টেনে ৩০ ফুট দূরত্বে নিতে হবে। আর নারীদের ১১০ পাউন্ড ওজনের টায়ারকে ২০ ফুট দূরত্বে নিতে হবে। ছাড়াও রোপ ক্লাইমিং পরীক্ষায় পুরুষদের ১২ ফিট এবং নারীদের আট ফিট দড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হবে।
শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সব ডকুমেন্ট নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ে ৪৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৫ নম্বরের মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় নম্বরের ভিত্তিতে বিজ্ঞপ্তি অনুসারে জেলাওয়ারি মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত করা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন ও প্ল্যানিং) হায়দার আলী খান বলেন, দক্ষ পুলিশ বাহিনী গড়তে দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই। আমরা চাই পুলিশে এমন জনবল আসবে যারা আগে থেকে নিজেকে মেধা, মননে প্রস্তুত করেছেন। পুলিশের এসে তারা আরও শানিত করবে। নিয়োগ দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স।