নিউজ ডেস্ক:
সংশ্লিষ্টরা বলছে, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার্থে বিশ্বমানের সব ব্যবস্থা থাকছে এ স্টেশনটিতে। আর যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকারের অসাধারণ অর্জন বলে মনে করছেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
সরেজমিনে কক্সবাজারের ঝিংলজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়ায় নির্মাণাধীন ঝিনুক আকৃতির এ আইকনিক রেলস্টেশনে দেখা যায়, অনন্য স্থাপত্যশৈলীর এ রেলস্টেশন ভবনের মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ। এখন চলছে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা। বড় আকৃতির ক্রেন, নির্মাণসামগ্রীর ভারী যানবাহন ও শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে নির্মাণকাজ।
স্টেশনটির স্থপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘দিনের বেলা বাড়তি আলো ব্যবহার করতে হবে না এ স্টেশনে। ওপরের ছাদ খোলা থাকায় থাকবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। এর আধুনিক নির্মাণশৈলীর কারণেই কক্সবাজার রেলস্টেশনকে বলা হচ্ছে গ্রিন স্টেশন। ঝিনুক ও শামুকের গঠনটা যেমন বাইরে থাকে, আর বাকি শরীরের অংশটুকু ভেতরে আবৃত থাকে। কক্সবাজার রেলস্টেশন ডিজাইন করার সময় আমরা সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়ে পুরো রেলস্টেশনটাকে একটা ছাউনি দিয়ে ঢেকে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এখন রেলস্টেশন শুধু যাত্রী যাওয়া-আসার জন্য নয়। আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে টেকসই করার জন্য এখানে নানা ধরনের ব্যবহারকে সংমিশ্রণ করা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধা, রেস্টুরেন্ট, ফুড কোর্ট, মাল্টিপারপাস হল, হোটেল থাকবে। সুতরাং এটি শুধু রেলস্টেশন নয়; এটি একটি ডেসটিনেশন। এটা একটি আকর্ষণীয় আর্থ-সামাজিক মডেল।’
স্থপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘চারদিকে গ্লাস লাগানো হচ্ছে। এখানে কোনো কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন নেই। এছাড়া ছাউনিটা পুরো কাঠামোটাকে ঢেকে রেখেছে। ফলে সবসময় ভবনটি সহনীয় তাপমাত্রায় থাকবে। এতে কুলিং লোড কম হবে। ফলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের লোডও কম হবে। এতে এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এ প্রকল্পটি পরিবেশগতভাবে টেকসই হিসেবে ডিজাইন করা। এখানে বৃষ্টির পানি থেকে শুরু করে পানি পুনর্ব্যবহার করা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া পুনর্ব্যবহৃত টেকসই উপাদান ব্যবহার করছি। পানির অপচয় রোধে ওয়াটার ফিক্সচার ব্যবহার করছি। নানা রকম সুযোগ-সুবিধা আছে এখানে। বলা যায়, এ বিল্ডিংটা একটা পরিপূর্ণ গ্রিন বিল্ডিং।’
প্রকল্প কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্টেশন ভবনে থাকছে বিশাল আকৃতির ঝিনুক। ঝিনুকের পেটে মুক্তার দানা। তার চারপাশে পড়ছে স্বচ্ছ জলরাশি। এর মধ্যেই আসবে ট্রেন। ঝকঝকে আধুনিক এ স্টেশন অনেকটা উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরের মতো। আর মূল আকর্ষণ ঝিনুকের ফোয়ারা দৃশ্যমান হবে আগামী এক মাসের মধ্যে।
আইকনিক স্টেশন ভবনের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার তাইজুল ইসলাম বলেন, স্টেশনটির মূল আকর্ষণ হচ্ছে ঝিনুকের ফোয়ারা। এরই মধ্যে এ ফোয়ারার কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি, আগামী এক মাসের মধ্যে ঝিনুকের ফোয়ারার কাজ শেষ হবে।
আইকনিক স্টেশন ঘুরে আরও দেখা যায়, আইকনিক রেলস্টেশনের কাজ শেষের পথে, যার ছোঁয়া অনেকটা দৃশ্যমান। আগামী সেপ্টেম্বরে বিশ্বমানের আইকনিক রেলস্টেশনটি চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
আইকনিক স্টেশন বিল্ডিংয়ের কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার মো. আবদুল জাবের মিলন বলেন, ‘যে কেউ আইকনিক স্টেশনে আসলে কাজটি যে শেষের পথে তা বুঝতে পারবেন। এ স্টেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্টিল ক্যানোফি বসানোর যে কাজটি ছিল, তাও শেষ হয়েছে। এখন ছাদের কাজ চলমান রয়েছে।
‘ফিনিশিং, টাইলস, গ্লাস লাগানো, চলন্ত সিঁড়িসহ সব কাজই আমাদের টার্গেট অনুযায়ী এগিয়ে নিয়েছি। আশা করি, সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইকনিক স্টেশনটি কার্য উপযোগী করে তোলা হবে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাতে ট্রেন চলাচল করতে পারে, সে জন্যই আইকনিক স্টেশনটি তৈরি করা হচ্ছে।’
দোহাজারি-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্প (লট-২)-এর মহাব্যবস্থাপক মো. আহমেদ সুফি বলেন, বিদেশিরা যাতে রাতের বেলায় ঢাকা থেকে ট্রেনে উঠে সকালে কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনে পৌঁছে সারাদিন সৈকতে ঘুরে আবার ফিরে যেতে পারেন, সেই সুবিধাও থাকছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, উন্নত বিশ্বে গিয়ে যে সুযোগ-সুবিধা রেলস্টেশনে পাওয়া যায়, তার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে ভ্রমণপিপাসুরা পাবেন। তাই এই ধরনের স্থাপত্যশৈলী কক্সবাজারে নির্মাণ করা যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকারের একটি অসাধারণ অর্জন। এটি কক্সবাজারের পর্যটন খাতকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ঊনত্রিশ একর জমির ওপর ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে এক লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুটের আইকনিক স্টেশন ভবন। আর স্টেশন ভবনের পশ্চিম পাশে একসঙ্গে নির্মিত হয়েছে পাঁচতলা ২০টি ভবন।