নিউজ ডেস্ক:
বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে গোটা বাংলাদেশ। প্রত্যন্ত চরাঞ্চল থেকে শুরু করে পাহাড়ি দুর্গম এলাকা বা দ্বীপ সবখানেই পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। আর বিদ্যুতের ছোঁয়ায় বদলাতে শুরু করেছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। আগে সূর্যের আলো চলে যাওয়ামাত্রই গ্রামগঞ্জে নেমে আসত ঘুটঘুটে অন্ধকার ও সুনসান নীরবতা। সন্ধ্যারাতে হারিকেন-কুপির আলোই ছিল ভরসা। বিদ্যুৎ চলে আসায় এখন সেসব এলাকাতেই গভীর রাত পর্যন্ত বাজারঘাট থাকে সরগরম। চলে হরেক পণ্যের বেচাকেনা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যে, দেশের গ্রিড এলাকায় শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কিছু অফগ্রিড এলাকায় সৌরবিদ্যুৎ ও সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই দেশের সব অফগ্রিড এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ শেষ হবে। বর্তমানে মনপুরা দ্বীপ এবং যমুনা নদীর কিছু চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।
‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ মূলমন্ত্রে দেশের প্রায় শতভাগ (৯৯.৯৯) এলাকার মানুষ এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে একটি ঘরও বিদ্যুতের আলোবিহীন থাকবে না। সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে জোরেশোরে কাজ করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন সংস্থা। এখনো যারা বিদ্যুৎ সংযোগ নেননি বা আবেদন করেননি, তাদের সংযোগ নেওয়ার জন্য সারা দেশে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো জোর প্রচারণাও চালাচ্ছে। ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের চরহাজীগঞ্জের কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, ‘চরের মানুষ বলে আমাদের অন্যরা সব সময় টিটকারি করত। চরের মধ্যে কখনো বিদ্যুতের লাইন আসবে, ইন্টারনেট বা ক্যাবল টিভির লাইন চালু হবে, তা আমরা ভাবতেও পারিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে।’ ফরিদপুরের পদ্মার চরে জেগে ওঠা চরগুলোতেও পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। খরস্রোতা নদী পদ্মার তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুতের লাইন টেনে নিয়েছে। আবার বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ঘন বন-জঙ্গলে ঘেরা দর্শনীয় স্থান ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দুর্গম চর কুকড়িমুকড়িতেও পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো। এলাকাটি অফগ্রিড কিন্তু এই চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও পর্যটন বিকাশের কথা চিন্তা করে সরকার এখানে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর তলদেশ দিয়ে চার কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন ও একটি ১০ এমভিএ উপকেন্দ্র চালুর মাধ্যমে এই চরে বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। ওই অঞ্চলে ভোলা জেলাসহ পটুয়াখালীর অফগ্রিড চরাঞ্চলে বসবাসকারীদের বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার জন্য কাজ করছে ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যদি আমরা জিডিপির দিকে লক্ষ করি, তাহলে বলতেই হবে এই অগ্রগতির পেছনে বিদ্যুৎ-জ্বালানির ভূমিকা রয়েছে। দেশজুড়ে বিদ্যুতায়নের ফলে গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারগুলোতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। ঘরবাড়িগুলোতে বিদ্যুতের আলো এসেছে। আগে সন্ধ্যা নামতেই যে গ্রামগুলো নীরব হয়ে যেত, এখন সে গ্রামগুলোতেই রাত ১২টা পর্যন্ত হাটবাজারগুলো কর্মব্যস্ত থাকে। এ ছাড়া খেত-খামারে পাম্প মেশিন এখন রাতভর বিদ্যুতে চলে। আগে এগুলো তেলে চলত, খরচও বেশি ছিল। কিন্তু এসব কাজে বিদ্যুৎ ব্যবহারে এখন ভর্তুকি পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি আমরা সৌরবিদ্যুতেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এতে কৃষি উৎপাদনে বিরাট সুবিধা হয়েছে। আবার বিভিন্ন এলাকায় এখন বরফ-কল খোলা হচ্ছে। কোল্ডস্টোরেজ হচ্ছে। আর সবই সম্ভব হচ্ছে বিদ্যুতের কারণে। বিদ্যুতের প্রভাবে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের চেহারা আমূল পরিবর্তন হবে। গ্রামে চরাঞ্চল পর্যন্ত সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছি। পাহাড়ে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সারা দেশের সঙ্গে কানেকটিভিটি তৈরি হয়েছে। বিদ্যুতের মাধ্যমে মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ায় এটি সম্ভব হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকায় মানুষ এখন টিভি দেখাসহ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন। এর মাধ্যমে সারা বিশ্বের খবর জানা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের আলো মানুষকে সাহসী করে তুলেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। অথচ এক যুগ আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। এক যুগ আগে বিদ্যুতের সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী যেখানে ছিল শতকরা ৪৭ ভাগ, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৯৯.৯৯ শতাংশে। আবার বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা ১ কোটি ৮ লাখ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪ কোটি ৭ লাখ।