বৃহস্পতিবার , এপ্রিল ১৭ ২০২৫
নীড় পাতা / উত্তরবঙ্গ / সেচ কমিটির ছাড়পত্র ছাড়াই সেচ পাম্প স্থাপন বৈধতা পেতে বিএডিসির বিরুদ্ধে ঘুষের মামলা

সেচ কমিটির ছাড়পত্র ছাড়াই সেচ পাম্প স্থাপন বৈধতা পেতে বিএডিসির বিরুদ্ধে ঘুষের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক বড়াইগ্রাম,,,,,,,,,,,,,,,,সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই সেচ কমিটির অনুমতি
ছাড়াই গভীর নলক‚প স্থাপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে রাসেদুল ইসলাম
নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, অবৈধ সেচ পাম্প স্থাপনের
বৈধতা পেতে আদালতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের
(বিএডিসি) নাটোর রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ
হোসেন এবং বড়াইগ্রাম জোনের সহকারি প্রকৌশলী জিয়াউর
রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন রাসেদুল ইসলাম। মামলায় রাসেদুল
ইসলামের দাবি, প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক টাকা লেনদেনের পরেও পাম্প
স্থাপনের ছাড়পত্র না পেয়েই মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলার বিবাদী
ও সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সঠিক নয়, বরং অবৈধভাবে
বসানো সেচ পাম্পের ছাড়পত্র পেতেই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে
মানহানিকর মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই বিষয়ে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে
আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
এদিকে অবৈধভাবে সেচ স্থাপন করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার
আশ^াস দিয়েছেন সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী
অফিসার লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস। রাসেদুল ইসলাম নাটোরের
বড়াইগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার রওশন আলীর ছেলে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালে বড়াইগ্রাম উপজেলার
শ্রীরামপুর পেট্রোল পাম্প এলাকায় ১ কিউসেক সেচ পাম্প স্থাপনের জন্য
সেচ কমিটির কাছে আবেদন করেন রওশন আলী। আবেদনের প্রেক্ষিতে
বিএডিসির প্রতিনিধিরা সরেজমিন পরিদর্শণ করেন। কিন্তু সেচ
পাম্প স্থাপনের নীতিমালার সাথে রওশনের আবেদনের বিষয়টি সাংঘর্ষিক ও
ছাড়পত্র প্রদানসাপেক্ষ না হওয়ায় সেচ কমিটি পাম্প স্থাপনের ছাড়পত্র
দেয়নি। পরে এক প্রকার জোর করেই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই
রাসেদুল ইসলাম ও তার দুলাভাই মাহবুর গভীর নলক‚প স্থাপন করে। অথচ
ভ‚গর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১৮ এর ৫ এর (১) ধারায় বলা হয়েছে,
উপজেলা পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স ব্যতীত কৃষি কাজের জন্য কোন
স্থানে কোন নলক‚প স্থাপন করা যাইবে না। এছাড়া, কোন ব্যক্তি এই
আইনের কোন বিধান লঙ্ঘন করিলে অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা

জরিমানা, অনাদায়ে ৩০(ত্রিশ) দিন বিনাশ্রম কারাদÐে দÐিত হইবেন।
অথচ রাসেদুল সেচ কমিটির ছাড়পত্র ছাড়াই পাম্প স্থাপন করেছেন।
এছাড়াও তিনি অবৈধভাবে ছাড়পত্র পেতে নির্বাহী প্রকৌশলী ও
সহকারি প্রকৌশলীকে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা দিয়েও ছাড়পত্র না পাওয়ার
অভিযোগ এনে গত ২৮ জানুয়ারি আদালতে মামলা দায়ের করেন। এদিকে
মামলার বিবাদীরা বলছেন ভিন্ন কথা। বিএডিসির প্রকৌশলীরা
জানান, অবৈধভাবে বসানো সেচ পাম্পের ছাড়পত্র পেতেই
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা, হয়রানিমূলক ও মানহানিকর মামলা করা
হয়েছে। একমাত্র উপজেলা সেচ কমিটি সেচ বসানোর ছাড়পত্র দিতে
পারে। যে কমিটির সভাপতি হলেন ইউএনও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-বনপাড়া মহাসড়কের পাশে
শ্রীরামপুর পেট্রোল পাম্প এলাকায় ছাড়পত্র ছাড়াই গভীর নলক‚প স্থাপন করে
সেচ দিচ্ছেন রাসেদুল ও তার দুলাভাই মাহবুর। এছাড়া মামলায় উল্লেখিত
নির্বাহী প্রকৌশলীকে ঘুষ দিয়ে মাড়িয়া মৌজায় জেএল-৫৫ এর
৩০৬৫ নং দাগে সাজজারুল ইসলাম শুভ ম্যানেজার করে অবৈধভাবে
বিএডিসির নলক‚প স্থাপনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া কবে,
কখন, কোন কর্মকর্তাকে কত টাকা দিয়েছেন এমন প্রশ্নের কোন
সদুত্তর দিতে পারেননি মামলার বাদী রাসেদুল ও তার দুলাভাই মাহবুব। এমন
কি নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেনকে চেনেন না বলেও স্বীকার
করেন তারা।

শ্রীরামপুর গ্রামের অপর কৃষক শামীম জানান, আমি দুই বছর আগে
সেচ পাম্পের অনুমতি নিয়ে নলক‚প স্থাপন করে সেচ দিয়ে আসছি।
কিন্তু রাসেদুল সেচ কমিটি থেকে অনুমতি না নিয়ে নিয়ম নীতির
তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরে একটি গভীর নলক‚প স্থাপন করেছে।
এছাড়া আমার আউটলেট বন্ধ করে দিয়ে আমাকে নানা হুমকি দেওয়া
দিচ্ছে।
বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এর অধীনে শ্রীরামপুর
এলাকার সেচ পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, সেচের ছাড়পত্র পেতে
নির্বাহী প্রকৌশলীকে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি বিশ^াসযোগ্য নয়। বরং
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেই
মনে হচ্ছে।

মামলার বাদী রাসেদুল ইসলাম জানান, সেচ পাম্প বসানোর ছাড়পত্র
পেতেই মামলা করা হয়েছে। ছাড়পত্র পেলে আর কোন সমস্যা নেই।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে কোন সদুত্তর
দিতে পারেননি তিনি।
বিএডিসি বড়াইগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান
জানান, ঘুষ নিয়ে একক ভাবে কাউকে সেচ ছাড়পত্র দেয়ার কোন
সুযোগ নেই। কয়েকটি সরকারি অফিসের প্রতিনিধি কর্মকর্তাদের
নিয়ে গঠিত ৯ সদস্য বিশিষ্ট সেচ কমিটির সভাপতি হলেন উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা। এখানে এককভাবে কাউকে ক্ষমতা দেওয়া হয় নাই।
বিএডিসি কি করে আবেদনকারীকে ছারপত্র দিবে? টাকা লেনদেন করেও
ছাড়পত্র না পেয়ে মামলার বিষয়টি উদ্দেশ্য প্রণেদিত এবং মানহানিকর।
বিএডিসি নাটোর রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ
হোসেন জানান, উপজেলা সেচ কমিটির সাথে জেলা পর্যায়ের দপ্তরের
কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। বিএডিসি নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারি
প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরর বিষয়টি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও
মানহানিকর। রাসেদুল সেচ পাম্পের জন্য সেচ কমিটির কাছে আবেদন
করে। কিন্তু নিয়ম অনুসারে নির্দিষ্ট দুরুত্ব না মেনে সেচ পাম্প
বসানোর কারণে সেচ কমিটি ছাড়পত্র দেয়নি। সেই পাম্পের বৈধতা
নেওয়ার জন্য বিএডিসির বিরুদ্ধে এই ধরনের মিথ্যা, মানহানিকর এবং
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর বিষয়ে আমরা আইনগত
ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বড়াইগ্রাম উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী
অফিসার লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, রাসেদুল ইসলাম নামে ওই
ব্যক্তি সেচ কমিটির ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে গভীর নলক‚প স্থাপন
করেছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও দেখুন

নাটোরে হেরোইন সহ এক নারী আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,নাটোরে হিরোইন সহ মোছাঃ সুবর্না আক্তার সোনিয়া (২৮) নামের এক নারী বাস যাত্রীকে আটক …