নিউজ ডেস্ক:
গত কয়েক বছরের মতো এবারও কক্সবাজারে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার আট উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে চলতি বছর সুপারি উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত সুপারি সারাদেশে সরবরাহের পাশাপাশি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও। পাইকারি বাজারদর হিসাবে চলতি বছর উৎপাদিত সুপারি বিক্রি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ।
তিনি আরও বলেন, প্রতি হেক্টরে সাড়ে তিন থেকে চার টন সুপারি উৎপাদিত হয়েছে। সে হিসাবে এবারের ফলন হবে প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি পণ (৮০ পিস) বা কেজিপ্রতি সুপারি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। সে হিসাবে এবারে সুপারি বিক্রি করে আয় হবে প্রায় ২৪৫-৩০০ কোটি টাকার মতো। গত মৌসুমে সুপারি চাষের আওতায় ছিল ৩ হাজা ৪০০ হেক্টর জমি।
সূত্রমতে, আদিকাল থেকেই দেশে টেকনাফ-উখিয়ার সুপারির কদর রয়েছে। টেকনাফের সুপারির সঙ্গে মহেশখালীর পান নিয়ে লোকগানও রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত শহরে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল সুপারির বাগান। পাশাপাশি কমবেশি সুপারি বাগান রয়েছে জেলার প্রতিটি উপজেলায়। কক্সবাজারের প্রায় এলাকায় পান দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের রীতি চলমান। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমেই একসঙ্গে নামে পাকা সুপারি। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে টেকনাফ-উখিয়াসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় জমে উঠেছে সুপারির হাট। প্রথম দিকে দাম কম পেলেও এখন বাজারে সুপারির ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা।
দেখা গেছে, জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনার পাড়া, ইনানী, নিদানিয়া, মাদার বুনিয়া, ছেপট খালী ও মনখালি এলাকায় দিগন্ত জোড়া সুপারি বাগান। এছাড়া রত্নাপালং, রাজাপালং, পালংখালী, হলদিয়া পালং ইউনিয়নে অসংখ্য সুপারির বাগান রয়েছে। একইভাবে টেকনাফের শাপলাপুর, বাহারছড়া, হোয়াইক্যং, হ্নীলা টেকনাফ সদরসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রচুর পরিমাণ সুপারি বাগান দেখা যায়। এসব গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা পাকা সুপারিতে সয়লাব সোনারপাড়া, শাপলাপুর বাজার। মৌসুমি হিসেবে বসছে বাহারছড়ায় সুপারি বিকিকিনির বিশাল হাট।
ব্যবসায়ী শাকের উদ্দিন সাগর ও আবুল কালাম জানান, এবছর সুপারির প্রতি পণ (৮০টি) ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং প্রতি কাউন (১২৮০টি) সাড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মানভেদে দাম আরও বেশি। এ দাম পেয়ে তারা বেশ খুশি।
তিনি বলেন, অর্থকরী ফসল পান-সুপারি উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় সাত হাজারেরও বেশি পরিবার রয়েছে। আর প্রায় প্রতিটি বসত ভিটায় সুপারি চাষ হয়, যা বিক্রি করে পরিবারের বাৎসরিক খরচের একটি মোটা অংশ যোগান হয়। এ বছর দুই উপজেলায় প্রায় শত কোটি টাকার সুপারি বাজারজাত হবে বলে আশা করছি।
মেরিন ড্রাইভের মনখালী এলাকার জমির উদ্দিন বলেন, এলাকায় সুপারির ফলন ভালো হওয়ায় অন্যদের মতো ভিটার পরিত্যক্ত জমিতে কিছু সুপারি গাছ লাগানো হয়েছিল। এখন প্রতিবছর ৬-৮ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করে পরিবারের খরচ যোগানো সম্ভব হচ্ছে। তবে, সমুদ্রতীরের ঝাউগাছ নিধন অব্যাহত থাকায় লবণের তীব্রতায় অনেক সুপারি গাছে মড়ক দেখা দিয়েছে।
টেকনাফের বাহারছরা, উখিয়ার সোনারপাড়া ও মরিচ্যা বাজারও পাকা সুপারিতে সয়লাব। বাজারের আশপাশের খোলা জায়গায় একাধিক ট্রাক বোঝাই সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হচ্ছে। শুকানোর চেয়ে চাহিদার কারণে পাকা সুপারি প্রক্রিয়াজাত হিসেবে ভিজিয়ে রাখা হচ্ছে। মাস-তিনেক পর ভিজানো সুপারি আবার বাজারজাত হবে। এখানকার সুপারি সৌদি আরব, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ-পরিচালক কবির হোসেন বলেন, কৃষি নির্ভর অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে আমরা সবসময় সচেষ্ট। মৌসুমি অর্থকরী ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের তৎপরতায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এ মৌসুমে প্রায় তিনশ কোটি টাকার সুপারি বিক্রির আশা করছি। কৃষকেরা লাভবান হওয়ায় এলাকাভিত্তিক সুপারি চাষ ক্রমে বাড়ছে। এতে উৎপাদনমুখী হচ্ছে অকৃষি পরিত্যক্ত জমিগুলো।
জেলায় সব ধরনের কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।