নিউজ ডেস্ক:
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিটে অপরাধী শনাক্তসহ দুষ্কর্মকারীদের গতিপথের ওপর নজরদারি নিশ্চিতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ কার্যক্রম আরো উন্নত ও বেগবান করতে এবার কেন্দ্রীয়ভাবে সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ ইউনিট শুরু করতে যাচ্ছে ডিএমপি। গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ রাজধানীর ২০০ পয়েন্টে ৬৩২টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রমও চলছে। করোনা পরিস্থিতি ব্যত্যয় না ঘটলে চলতি অক্টোবরেই আনুষ্ঠানিকভাবে এ ইউনিটের যাত্রা শুরুর কথা রয়েছে। যা হলে পুরো ঢাকা শহরকে কেন্দ্রীয় সিসিটিভি পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণসহ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখাসহ ঢাকার ঈগলের চোখ হবে এ সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ ইউনিট।
বর্তমানে রাজধানীর একটি ক্ষুদ্র অংশ পুলিশের সিসি ক্যামেরা মনিটরিংয়ের আওতায় রয়েছে। এজন্য প্রায় ১ হাজার ২০০ ক্যামেরা দিয়ে গুলশানের কূটনৈতিক জোনসহ কয়েকটি এলাকায় নজরদারি করছে পুলিশ। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশকিছু এলাকায় সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারি করে। তবে এখনো রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা ক্যামেরা মনিটরিংয়ের আওতায় আসেনি। যদিও ১৫ বছর আগে রাজধানীর ৪৩টি পয়েন্টে মাত্র ১৮৫টি ক্যামেরা নিয়ে সিসিটিভি মনিটরিং কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়। পর্যবেক্ষণের জন্য আব্দুল গনি রোডে পুলিশ কমান্ড সেন্টারে একটি পর্যবেক্ষণ কক্ষ খোলা হয়। তবে নানা কারণে এ কর্মকাণ্ডের পরিধি পরে আর বাড়েনি। গত ২০১২ সালে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার ও বর্তমান পুলিশ প্রধান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের উদ্যোগে সম্পূর্ণ বেসরকারি অর্থায়নে ‘ল এন্ড অর্ডার কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ বা এলওসিসি নামের একটি ট্রাস্ট গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে সেই ট্রাস্টের অধীনেই গুলশানের কূটনৈতিক জোনসহ কয়েকটি এলাকায় মনিটরিং কার্যক্রম চলছে। গুলশানের ১০২ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাড়ি থেকে ক্যামেরা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে জানা গেছে, আব্দুল গনি রোডে পুলিশ কমান্ড সেন্টারের ৮ তলাতেই পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ ইউনিট। সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ইউনিটটি পরিদর্শন করেছেন। ২০ জন কনস্টেবলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেখানে সংযুক্ত করা হয়েছে। তারা সেখানে পালাক্রমে
কাজ করছেন।
ক্যামেরা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, আপাতত এর সার্বিক কার্যক্রম অতিরিক্ত কমিশনার ক্রাইম এন্ড অপসের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ডিএমপি অপারেশন্স বিভাগ দেখছে। ডিএমপির লজিস্টিক বিভাগ ইতোমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির ২শর বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৬২৫টি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শেষ করেছে। সিসিটিভিতে ঢাকার কোনো এলাকায় অসঙ্গতি দেখতে পেলে পর্যবেক্ষণ নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা পুলিশের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা যাবে। মূলত এটি পুরোপুরি চালু হলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এখানে আধুনিক সফটওয়্যার সংযোজনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ চলছে। সফটওয়্যার সংযোজন হয়ে গেলে সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই অপরাধীর চেহারা শনাক্তসহ তার কোনো ডাটাবেজ থাকলে তা সহজেই বের করা যাবে। ক্যামেরাগুলো গাড়ির নম্বরের দিকে খেয়াল রাখবে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে নম্বরপ্লেট ছবি নেবে। এখন ৬ শতাধিক হলেও ভবিষ্যতে এর আওতা বেড়ে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজারে উন্নীত হবে। পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হলে ডিএমপির অন্যান্য বিভাগের মতো কেন্দ্রীয় সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ ইউনিটে একজন উপকমিশনার প্রধান থাকবেন। তার সঙ্গে থাকবেন অতিরিক্ত ও সহকারী উপকমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তা। প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যায়ের সদস্যরা সার্বক্ষণিক সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষে কাজ করবেন। এ ইউনিট ডিএমপির ৫০টি থানা ও অন্যান্য ইউনিটের সঙ্গেও সমন্বয় করবে।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে গতকাল বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো সিসিটিভির অধীনে আনতে কাজ করছি। ক্রাইম ও ট্রাফিক বিষয়গুলো এ কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকেই দেখা যাবে। সিনিয়র অফিসাররা বসে এখান থেকেই গাইড করবে। কোনো অপরাধী যদি অপরাধ করে এ ক্যামেরায় ধরা পড়বে। গাড়ির নম্বর রেকর্ড থাকবে গাড়ি ব্যবহার করে ডিটেকশন করা। ভবিষ্যতে আরো কিছু সফটওয়্যার লাগানো হবে। তখন এ ক্যামেরা থেকেই ফেস ডিটেকশন ব্যবস্থা করেই অপরাধীর চেহারা শনাক্ত করা যাবে। ফলে অপরাধী শনাক্ত ও ট্রাফিক ব্যবস্থা এবং যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক কাজে আসবে।