নিজস্ব প্রতিবেদক, সিংড়া:
পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা সিংড়ার সাংবাদিক সোহেল রানা’র স্ত্রী জনি খাতুন (২৮)। ১০ ও ৪ বছরের দুই শিশুসন্তান নিয়ে তিনি এখন কীভাবে সংসার চালাবেন, সেই ভাবনা তাঁকে জেঁকে ধরেছে। তাঁর স্বামী সোহেল রানা (৩৪) গতকাল সোমবার সকালে নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ির নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।
জনি খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, তাঁর শ্বশুর আবদুল জলিল আগেই মারা গেছেন। বৃদ্ধ শাশুড়িসহ পাঁচজনের সংসারে তাঁর স্বামী সোহেল রানাই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বড় ছেলে সিয়াম হোসেন স্থানীয় একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। ছোট মেয়ে সামিয়া খাতুন প্রাক্-প্রাথমিকে পড়ে। তাঁর স্বামী সিংড়ার শেরকোল আগপাড়া বন্দর উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। এছাড়া বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দুরন্ত সংবাদ পত্রিকার সিংড়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন তিনি। সোহেল রানা সিংড়া প্রেস ক্লাবের সদস্য ছিলেন।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সোহেল রানা’র লাশ তাঁর বালুয়া বাসুয়ার বাড়িতে নেওয়া হয়। স্বামী হারানোর শোকের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ঘিরে ছিল জনি খাতুনকে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সোহেল রানা’র বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাঁর দুই সন্তান সিয়াম ও সামিয়া তাঁদের মা ও দাদীর কোলে বসে আছে। বাবার মৃত্যুর শোকে নিশ্চুপ ও নির্বাক হয়ে গেছে শিশু দুটি।
এছাড়াও সাংবাদিক সোহেল রানা’র মৃত্যুতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে সিংড়া প্রেস ক্লাব। সিংড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. এমরান আলী রানা সাক্ষরিত শোক বার্তায় বলা হয়েছে, সিংড়া প্রেস ক্লাবের সকল সদস্যের কালো ব্যাচ পরিধান ও বুধবার বাদ আছর বকুল হায়দার জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
২০২১ সালের ৩১ শে আগষ্ট সিংড়ার সোনালী ব্যাংক থেকে ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ঋণ নেয় সোহেল রানা। ৮ মাসে ৫২ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধ হয়েছে। এখনো ৫ লক্ষ ৮ হাজার টাকা ঋণ রয়েই গেছে। ঋণ পরিশোধে ব্যাপারে চিন্তিত সোহেল রানা’র স্ত্রী জনি খাতুন।
সোহেল রানা’র মা আলোমা বেঁওয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার পরিবারে ছেলের আয়েই চলতাম। তাঁর দুটি সন্তান নিয়ে আমরা এখন কি করবো? সরকারের কাছে আবেদন আমাদের জন্য যেন কিছু করে।
সোহেল রানা’র স্ত্রী জনি খাতুন বলেন, শুধু বসতবাড়ি ছাড়া আমাদের কোনো সম্পদ নাই, সংসারে আয়ের কোনো উৎসও নাই। দুটি সন্তান নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। প্রশাসনের কাছে দাবি আমাদের বিষয়টি যেন গুরুত্বের সাথে দেখে।
সোনালী ব্যাংক সিংড়া শাখার ম্যানেজার মীর শাহাদত হোসেন বলেন, গত বছরে ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ঋণ নেয় সোহেল রানা। মাত্র ৫২ হাজার টাকা পরিশোধ হয়েছে। আমরা তাঁর পরিবার ও জিম্মাদারের সাথে কথা বলবো। তবে ঋণ মওকুফের সুযোগ নাই।
এদিকে নলডাঙ্গার ইউএনওর গাড়িচাপায় সাংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে নাটোর জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা খাতুনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন নাটোরের বিআরটিএর সহকারী পরিচালক রাশেদুজ্জামান ও সিংড়ার ইউএনও সামিরুল ইসলাম।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম সামিরুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় ছুটিতে ছিলেন। আজ তিনি নিহতের স্বজনদের সাথে সাক্ষাত করবেন। নিহত সাংবাদিক সোহেল রানা’র পরিবারকে সার্বিক সহায়তা করার আশ্বাস দেন তিনি।
আরও দেখুন
লালপুরে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা
নিজস্ব প্রতিবেদক লালপুর,,,,,,,,,,,,,,,,,,,নাটোরের লালপুর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আইন শৃঙ্খলা কমিটিরমাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বেলা …