- ফের আমদানি উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত আসছে
- তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স হবে
- দ্বিগুণ করা হচ্ছে ওএমএস
আমনের ভরা মৌসুমে দাম নিয়ন্ত্রণে আবারও চাল আমদানি উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। পাশাপাশি বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে খাদ্য, বাণিজ্য ও কৃষি-এই তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওএমএস দ্বিগুণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী সকল মিলার ও ধান-চাল ব্যবসায়ীর ওপর কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে। সোমবার বিকেলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সেই মজুদদারদের তালিকা অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে কোন জায়গায় মজুদ করছে না বলে প্রতিবেদন দেয়ার পর, সেখানে মজুদ পাওয়া গেলে, সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এবার কোন রকমের কারসাজি বরদাশ্ত করা হবে না। কোন সিন্ডিকেটকে টিকে থাকতে দেয়া হবে না। সিন্ডিকেট যত শক্তিশালী হোক না কেন অপকর্ম করে কেউ ছাড় পাবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে ধান-চালের বাজার, মজুদসহ সর্বক্ষেত্রে মনিটরিং জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। এই কন্ট্রোল রুম থেকে দেশের সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ঢাকা মহানগরীসহ দেশের সকল জেলা, উপজেলাকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
সভায় খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ধানের বাজার মিলাররা নিয়ন্ত্রণ করছেন। চিকন চালের দাম কর্পোরেট ব্যবসায়ী ও অটো রাইস মিলাররা নিয়ন্ত্রণ করছেন। মিল মালিক ও আড়তদাররা চাল মজুদ করে মৌসুমের শেষ সময়ে দাম বাড়িয়ে তা বাজারে ছাড়েন। গত বছর অভিযানের মাধ্যমে এমন অনেক মজুদের চাল বের করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী ৩০ ডিসেম্বর খাদ্য সচিবের সভাপতিত্বে টাস্কফোর্স গঠনের লক্ষ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেবে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই তিন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এতে পুলিশ ও এনএসআই সদস্য সম্পৃক্ত থাকবেন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে ধান-চালের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে না আসলে আবারও আমদানি শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানি উন্মুক্ত করা হবে। সে ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পাবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চালের বাজারে অস্থিতিশীলতার বিষয়ে ইতিপূর্বের গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে মন্ত্রী, সচিব পরে পৃথক বৈঠক করেন। সেখানে গোয়েন্দা রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চালের বাজার অস্থিরতার পেছনে একই ব্যক্তির নাম আসছে বারবার। তারা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সিন্ডিকেট অত্যন্ত প্রভাবশালী। সারাদেশেই আছে তাদের সদস্য। এমনকি সিন্ডিকেটের সদস্যরা পাইকারি ও খুচরা বাজারেরও ব্যবসায়ী। আর তাদের পেছনে কাজ করছে শক্তিশালী চক্র। টাস্কফোর্স গঠনের পর তাদের মাধ্যমে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হতে পারে বলে সূত্র জানায়।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ধানের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরে ধানের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে তারাই চালের দাম বাড়িয়ে থাকে। ব্যাপক চাহিদা থাকা মিনিকেট (চিকন চাল) চালের ক্ষেত্রে তারা এ কৌশল অবলম্বন করেছে। এ সুযোগে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করেছেন। কিন্ত চালের দাম বাড়িয়ে কত টাকা সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মনিটরিং ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। এ দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার সুযোগে অসাধু চাল ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আশায় সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তাই চালের দাম মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার জন্য সরকার গৃহীত বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলো গতিশীল করতে হবে। দাম নিয়ন্ত্রণে মিল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কোনভাবেই যেন সিন্ডিকেট গঠন না করতে পারেন, সেদিকে নিরীক্ষণ ও নজরদারি বাড়াতে হবে। এছাড়া চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন কমিটির কার্যক্রম ও মনিটরিং গতিশীল করার সুপারিশ করা হয়েছে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।