নিউজ ডেস্ক:
সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য-প্রক্রিয়া মসৃণ করতে সিঙ্গাপুরকে মডেল হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানির সময়কাল, নথিপত্র এসব বিষয়ে সিঙ্গাপুরকে ভিত্তি ধরে ব্যবসা সহজ করার সূচক এগিয়ে নেয়া হবে। এ ছাড়া দেশটিতে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য, ওষুধ এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রফতানি বৃদ্ধির বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভারত ও চীনের পর সিঙ্গাপুরও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের ১৫০টি কোম্পানি সিঙ্গাপুরে কাজ করছে। এ ছাড়া জনশক্তি রফতানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সিঙ্গাপুর বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিচ্ছে। এদিকে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ দ্রুত ও ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি পররাষ্ট্র সচিব বরাবর একটি চিঠি দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুরের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের মিনিস্ট্রি অব ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এর পারমানেন্ট সেক্রেটারি সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সংশ্লিষ্ট খাতসমূহ চিহ্নিত করার জন্য বাংলাদেশের ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তার তথ্যাদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
জানা গেছে, দেশের বিপুল সংখ্যক জনশক্তি সিঙ্গাপুরে কাজ করছে। এ কারণে জনশক্তি রফতানি এবং রেমিটেন্স আহরণে সিঙ্গাপুর গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য পরিষেবা খাতে দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণানের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ অনুরোধ করেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র অন্বেষণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছেন। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিদ্যুৎ সঞ্চালন খাতে বিনিয়োগ করতে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীদের আরও উৎসাহিত করার অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) উদ্যোগ রয়েছে। এফটিএ দ্রুত শেষ করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসা সহজ করতে সিঙ্গাপুরকে অনুসরণ করতে চায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য প্রক্রিয়া মসৃণ করতে সিঙ্গাপুরকে মডেল মানছে বাংলাদেশ। সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানির সময়কাল, নথিপত্র এসব বিষয়ে সিঙ্গাপুরকে ভিত্তি ধরে ব্যবসা সহজ করার সূচকে নিজেদের এগিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এসব কাজ করতে কয়েক মাস আগে সরকার ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি কাস্টমস ও বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধির কিছু উপসূচকে সিঙ্গাপুরকে ভিত্তি করে বাংলাদেশের লক্ষ্য ঠিক করেছে। সর্বাপেক্ষা উন্নত মুক্ত বাজার অর্থনীতির বিকাশ হচ্ছে দেশটিতে। হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুর-এ চারটি দেশ এশিয়ার অর্থনীতিতে বাঘ হিসেবে পরিচিত। তবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দিক থেকে সিঙ্গাপুর বেশ এগিয়ে রয়েছে।
বিশ্বে মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চস্থানীয়। মোট দেশজ উৎপাদনের হার ১৪.২ শতাংশ। এ কারণে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ১০০টি স্থানে স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তুলছেন। এদের মধ্যে অনেকগুলোর কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। পৃথিবীর অনেক দেশ এরই মধ্যে এখানে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে এসেছে। সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং এনার্জি ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। এতে তারা লাভবান হবেন। এদিকে, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চায়। সম্প্রতি সংগঠনটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল সিঙ্গাপুর সফর করেছেন। এর পাশাপাশি দেশেও যখন সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল এসেছে তাদেরকেও গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ে পারস্পরিক মতবিনিময় সভা করেছে। এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, সিঙ্গাপুর একটি উন্নত রাষ্ট্র। জনশক্তি রফতানি করে দেশটি থেকে বিপুল পরিমাণ রেমিন্টেস আনা হচ্ছে। এর বাইরেও ওই দেশটির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সরকারের পাশাপাশি এফবিসিসিআই থেকেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ রয়েছে।