নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীর প্রাকৃতিক খালের অনেকাংশেই এখন রয়েছে বহুতল স্থাপনা। এর মধ্যে কিছু স্থাপনা সরকারি খালের অংশে নির্মিত হয়েছে। আবার কিছু স্থাপনার অংশের দালিলিক প্রমাণাদি সংশ্লিষ্ট দখলদারের অনুকূলে রয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে সিএস (ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে) পরবর্তী রেকর্ডগুলোতে খালের জায়গা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ার মাধ্যমে। এবার রাজধানীর এমন ৩৯ খাল চিহ্নিত করে অবৈধ দখলমুক্ত, সংস্কার এবং আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে সিএস নকশা অনুযায়ী খালের সীমানা চিহ্নিত করা হবে। সিএসপরবর্তী রেকর্ড পরিবর্তন করে যেসব খাল দখল হয়েছে তা সংশোধনও করা হবে। এছাড়া খালের পাড়ে থাকা নকশাবহির্ভূত অবৈধ স্থাপনাও একযোগে উচ্ছেদ করবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (রাজউক)। বাসাবাড়ির পয়ঃবর্জ্যরে সংযোগ নদী বা খালে দেওয়া বন্ধ না করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা। ইতিমধ্যে খালগুলো পুনরুদ্ধার, খনন ও সংস্কারের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। একই কাজের জন্য আরও ১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা, আদি বুড়িগঙ্গা নদী ও সব খালের ভূমির রেকর্ড সংশোধন করে অবৈধ দখল থেকে ভূমি পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিএস রেকর্ডপরবর্তী রেকর্ডে কোনো জালিয়াতি করা হলে সিএস রেকর্ড ভিত্তি ধরে রেকর্ড সংশোধন করা হবে। উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী নদী বা খাল দখলকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ফৌজদারি অপরাধী। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা, আদি বুড়িগঙ্গা নদী, কালুনগর খালসহ বিভিন্ন খালের মূল ভূমির রেকর্ডে মালিকানাসংশ্লিষ্ট দালিলিক তথ্য পরিবর্তন করে অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমি হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়া হবে।’
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রধানদের নিয়ে একটি সভা হয়। সেখানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ডিএসসিসি, ডিএনসিসি, ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা জেলা প্রশাসন অংশগ্রহণ করে। এ সভায় মূলত খাল উদ্ধার ও সচল করার বিষয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে সিএস নকশা অনুযায়ী খালের পুরো চরিত্র ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের কার্যক্রম নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
তারা আরও জানান, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি খালগুলোর বর্তমান অবস্থা, ম্যাপ, পরিমাপ/আয়তনসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও চ্যালেঞ্জসহ সংস্কার ও আধুনিকায়নের নানা দিক তুলে ধরে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এ ছাড়া অনুমোদন ছাড়া খালের পাড়ে নির্মিত ইমারত নিরবচ্ছিন্ন অভিযানের মাধ্যমে অপসারণ করবে রাজউক। রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ন কর্র্তৃপক্ষের মালিকানাধীন প্রাকৃতিক খালগুলোও সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। একই সঙ্গে খালগুলো সংস্কারে বাধা হয় এইরূপ কোনো অযৌক্তিক প্রকল্প থাকলে তা সংশোধনের করবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতে ৩৯টি খালকে অবৈধ দখলমুক্ত, সংস্কার এবং আধুনিকায়ন করার ক্ষেত্রে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ ও ঢাকা জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করবে।’
ডিএসসিসির মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘সিটি করপোরেশন খালের দায়িত্ব পাওয়ার পর সংস্কার ও আধুনিকায়নে ১১টি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কালুনগর, জিরানী খাল, মাণ্ডা খাল, শ্যামপুর খাল, পান্থকুঞ্জ বক্স কালভার্ট ও সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো পানি নিষ্কাশনের প্রধান চ্যানেল। এ চারটি খালের আধুনিকায়ন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ৯৮১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আর জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে জরুরি কাজের জন্য আরও ১০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।’
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের সব প্রাকৃতিক খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে খালের সীমানা নির্ধারণ করতে জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ইব্রাহিমপুর খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে খালগুলো দূষণরোধে খালে সংযুক্ত থাকা পয়ঃবর্জ্যরে লাইন বন্ধ করতে হবে। গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় বিভিন্ন বাসাবাড়ির এ ধরনের লাইন খালে সংযুক্ত আছে। এসব লাইন বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে দুটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ‘হাজারীবাগ বাইশটেক কুর্মিটোলা মাণ্ডা ও বেগুনবাড়ি স্থানে ভূমি অধিগ্রহণ ও খনন’ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর ‘ঢাকা মহানগর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং খাল উন্নয়ন’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।