শনিবার , ডিসেম্বর ২৮ ২০২৪
নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / সিংড়ায় মামলার জালে নিঃস্বের পথে একটি পরিবার!

সিংড়ায় মামলার জালে নিঃস্বের পথে একটি পরিবার!


বিশেষ প্রতিবেদক:
নাটোরের সিংড়ায় পিতা-মাতার বসত বাড়ির জমিজমা সংক্রান্ত মামলা মোকাবেলা করতে গিয়ে একটি পরিবারটি নিঃস্ব হতে বসেছে। পাক-বাহিনীর নির্যাতনের শিকার পরিবারটির বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি সহ মামলা মোকাবেলা না করতে বিবাদীকে হুমকি-ধামকিসহ মারপিট করা হয়েছে। মামলা সূত্রে প্রকাশ, উপজেলার শেরকোল ইউপির আগপাড়া শেরকোল গ্রামের আজগর আলী ও তার স্ত্রী নকিরন নেছা যৌথ দলিলে সাবেক দাগ ৯৫৮ ও হাল ১২০২দাগের ২৯ শতাংস ও সাবেক দাগ ৬৯২দাগ ও হাল ৪৮০ দাগের ১৩শতাংস মোট ৩৩শতাংস জমি কিনে নিয়ে ঘর-বাড়ি করে বসবাস করতে থাকেন। ১৯৭১সালে মা নকিরন নেছা বড় ছেলে আনোয়ার হোসেনকে ওই দাগ থেকে ১৬শতাংস জমি দান করে। এরপর একই বছর নভেম্বর মাসে আজগর আলীর স্ত্রী নকিরন নেছা পাক-বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ১৯৭২-৭৩ অর্থ বছরে মারা যান। তবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নকিরন নেছার নাম আসেনি।

নকিরন নেছার মৃত্যুর প্রায় ৩বছর পর প্রতিবেশী আফছার আলী গোপনে অন্য লোককে দিয়ে একটি ভূয়া দলিল করে নিয়ে মুল দলিল ওভার রাইটিং করে নামজারী করে নেয় এবং ১৮বছর পর প্রতিবেশী আফছার আলী দাবী করেন, নকিরন নেছার নিকট থেকে তিনি সাবেক দাগ ৯৫৮ ও হাল ১২০২দাগের ২৯শতাংস কাত ২৫ শতাংস জমি কিনে নিয়েছেন। আফছার আলীর ১৯৭৫সালের দলিলে খতিয়ান ও দাগ নম্বর সঠিক নাই। পরে তিনি ১৯৯০সালে তার স্ত্রী রাজিয়া বেগমের ওই জমি হস্তান্তর করে। এ বিষয়ে আজগর আলী বাদী হয়ে নাটোর আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার নম্বর ৭৭/৯১।

মামলা চলাকালীন সময়ে প্রতিবেশী আফছার আলীর ঘরের বারান্দায় আজগর আলীর মরদেহ পাওয়া যায়। পিতা-মাতা হারানো ৫ ছেলে-মেয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন পড়ালেখা বাদ দিয়ে ৪ভাই-বোনের মুখের আহার যোগাতে দিন-রাত পরিশ্রম করে। বিবাদী আফছার আলী, আইনজীবির যোগসাজসে নিজের লোককে বাদী বানিয়ে ৭৭/৯১ নম্বর মামলাটি সোলে করে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিচারক বিষয়টি বুঝতে পেরে উভয়পক্ষকে পরবর্তি তারিখে সোলে দাখিলের নির্দেশ দেন। হঠাৎ একদিন প্রতিবেশী আফছার আলী বাদী আজগর আলীর ছেলে-মেয়ের কাছে দাবী করে সাবেক ৯৫৮ ও হাল ১২০২দাগের ২৯ শতাংস কাত ১০ শতাংস জমি ছেড়ে দিলে তিনি ৯ হাজার টাকা দিবেন। আফছার আলীর কথায় রাজি হয়ে ৩১ আগস্ট ১৯৯৫তারিখ একটি সোলেনামা দাখিল করে বাদি আনোয়ার হোসেন বাড়ি চলে যায়। একই দিন অন্য লোককে ৪হাজার টাকা দিয়ে আদালতে দাঁড় করিয়ে মামলাটি সোলে করে নেয়।

বিষয়টি জানাজানি হলে ৬সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ তারিখ আজগর আলীর ৪৩৬৩ নম্বর দলিল থেকে ছেলে আনোয়ার হোসেন ও মেয়ে ময়না খাতুনের নিকট থেকে আফছার আলীর স্ত্রী রাজিয়া বেগমের নামে ১০ শতাংসের জমির দলিল করে নেয়। জমি লিখে নেওয়ার পরও আনোয়ার হোসেন ও ময়না খাতুনকে একটি টাকাও দেয়নি আফছার আলী। জীবনের ভয়ে দলিল মোতাবেক. রাজিয়া বেগমকে ১০ শতাংস জমির দখল বুঝিয়ে দিয়ে ওই ভিটে বাড়িতে গাছপালা লাগিয়ে দিয়ে ২০০৯ সালে অন্যত্র বসবাস শুরু করে আনোয়ার হোসেন। দীর্ঘদিন পর ওই ভিটে বাড়ির গাছপালা কাটতে গেলে রাজিয়া বেগমের স্বামী আফছার আলী ও তার স্বজনরা আনোয়ার হোসেনকে খুন জখমের হুমকি দেয়। আনোয়ার হোসেন বিষয়টি আইনজীবিকে জানালে, আইনজীবি কাগজপত্র নিয়ে আফছার আলীর নামজারী বাতিলের পরামর্শ দেন। প্রায় দেড় বছর উভয় পক্ষের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই এবং নাটোর সাব-রেজিষ্টার অফিসে আফছার আলীর দলিল তল্লাসির জন্য পত্র প্রেরণ করেন। নাটোর সাব-রেজিষ্টার অফিসের দলিল তল্লাসি প্রতিবেদনে খতিয়ান ও দাগ নম্বর সঠিক না থাকায় এবং চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দেয়া মৃত্যু প্রত্যয়ন পত্রের ৩ বছর পর দলিল হওয়ায় আফছার আলীর নামজারী বাতিল করে উপজেলা ভূমি অফিস।

পরে আফছার আলী বাদী হয়ে নাটোর ক্রিমিনাল কোটে আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায়ও আফছার আলী হেরে যায়। অবশেষে নামজারী বহালের জন্য আফছার আলী, নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ে আপিল করেছেন আফছার আলী। যাহার মামলা নম্বর ৯/২০। নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয় থেকে তদন্ত প্রতিবেদন সহ মন্তব্য চেয়ে সিংড়া উপজেলা (ভুমি) অফিসে পত্র প্রেরণ করেন। সহকারী কমিশনার পুনরায় ঊভয় পক্ষের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। সিংড়া উপজেলা (ভুমি) অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন ও মন্তব্যে বলা হয়েছে।

বাদী-বিবাদীর বক্তব্য পর্যালোচনা করে জানা যায়, আফছার আলীর দলিলের দাতা নকিরন নেছা ১৯৭১সালে পাক-বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এবং ১৯৭২-৭৩ সালে মারা গেছেন। আর আপিলকারী আফছার আলীর দলিল করা হয়েছে, ৪এপ্রিল ১৯৭৫সালে। আফছার আলীর দলিলের খতিয়ান ও দাগ নম্বর সঠিক নাই। ১৯৯০ সালে আফছার আলী, সাবেক ৯৫৮ ও হাল ১২০২ দাগের জমিটি তার স্ত্রী রাজিয়া বেগমের নামে হস্তান্তর করেছেন। রাজিয়া বেগমের দলিলেও খতিয়ান সঠিক নাই। নালিশী জমিতে আফছার আলীর মালিকানা স্বত্ব না থাকায়, পুর্বের আদেশ বহাল রাখা যেতে পারে এই মর্মে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

মামলায় হেরে যাওয়ার আশংকায় ৯/২০মামলাটি মামলাটি মোকাবেলা না করার জন্য আফছার আলী ও তার স্বজনরা বিবাদী আনোয়ার হোসেনকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ আগস্ট আনোয়ার হোসেনকে মারপিট করে আহত করে। আনোয়ার হোসেনকে মারপিট করায় সাহস করে তিনি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সিংড়া থানায় সাধারণ ডায়রী করলে, আদালত সাধারণ ডায়রীটি আমলে নিয়ে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আফছার আলী ও তার স্বজনদের অত্যাচার ও নির্যাতনে আগপাড়া শেরকোল গ্রামের অনেকেই গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে বসবাস এবং অনেক নারীর স্বামীর সংসার ভেঙ্গে গেছে। ওই প্রভাবশালীরা এতই শক্তিশালী আইসিটি প্রতিমন্ত্রী এড. জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে এলাকায় মিছিল করে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ সহ সমলোচনায় ব্যস্ত থাকে। অন্যের জমি দখল সহ এলাকার মানুষকে শান্তিতে ঘুমাতে দেয় না। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।

আরও দেখুন

বড়াইগ্রামে জামায়াতের ব্যাবসায়ী সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক বড়াইগ্রাম,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া উপজেলা মডেল মসজিদ হল রুমে শুক্রবার বাদ জুম্মা জামায়াতে …