নিজস্ব প্রতিবেদক, সিংড়া:
নাটোরের সিংড়া উপজেলা ভুমি অফিসে ১ বছর ধরে এসিল্যান্ড না থাকায় ভুমি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অন্য দিকে ভুমি অফিস ও সাব-রেজিষ্টার অফিস মিলে মাসে কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
উপজেলা ভুমি অফিস সুত্রে জানা যায়, গত ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা হিসেবে বিপুল কুমার যোগদান করেন এবং ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করে বদলী হয়ে চলে যান। এর পর আর কোন এসিল্যান্ড নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার যে যখন আসছেন দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমান অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন বানু। তবে সপ্তাহে একদিনও ভুমি অফিসে বসার সময় পান না বলে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তি ভোগী ভুমি সেবা গ্রহীতারা। ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন মিলে ৪৬৫ মৌজার বৃহত্তম এই উপজেলার প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ টি ই-নামজারী জমা পড়ে। বিচারাধীন রয়েছে প্রায় ৩ হাজার মিসকেস। র্দীঘ ১ বছরেও কাজ না পাওয়ায় অফিসের বারান্দায় ঘুরপাক পাক খাচ্ছেন কয়েক হাজার ভুক্তভোগী কৃষক।
উপজেলার মহিষমারী গ্রামের কৃষক আলহাজ লোকমান হোসেন বলেন, আমি আজ ৮ মাস ধরে জমির খারিজের জন্য ঘুরতেছি। এসিল্যান্ড না থাকায় কারনে খারিজের কাগজ আজও পেলাম না। তাই বাড়িতে ফিরে যচ্ছি।
জোড় মল্লিক গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, আমার জমির মিসকেস মামলা দুপক্ষের মধ্যে ৩ মাস আগে আপোস হয়ে গেছে কিন্তু স্যারের একটা সই(স্বাক্ষর) হচ্ছেনা বলে আমি মিসকেস রায়ের কাগজ পাচ্ছিনা। ইউএনও স্যার অফিসে কখন আসবেন কখন বসবেন এই অপেক্ষায় আমাদের ভোগান্তির শেষ নাই।
ভুমি অফিসে সেবা নিতে আসা জোড় মল্লিক গ্রামের আনোয়ার হোসেন নামের আরেক ভুক্তভোগী কৃষক বলেন, র্দীঘ দিনে এসিল্যান্ড স্যার না থাকায় জনগন সঠিক সময়ে ভুমি সেবা পাচ্ছেন না। জনগণ যাতে সেবা পায় এজন্য তিনি জরুরী ভিত্তিতে এসিল্যান্ড নিয়োগের দাবি জানান।
উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ১ বছরের বেশি সময় ধরে এই উপজেলায় সহকারী ভুমি কর্মকর্তা নেই। এতে জনগণ অনেক হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেই সাথে সরকার বঞ্চিত হচ্ছেন রাজস্ব আয়। নামজারী না হওয়ার কারনে সিংড়া সাব রেজিষ্টার অফিসে রেজিষ্টার সংক্রান্ত বিষয় গুলো অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। যার কারনে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
সিংড়া উপজেলা ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার আমিনুল ইসলাম বলেন, সিংড়া উপজেলা ভুমি অফিসে র্দীঘ দিন ধরে আমাদের এসিল্যান্ড মহোদয়ের পোষ্টিং নেই। এখন অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন আমাদের ইউএনও মহোদয় নাসরিন বানু। কিন্তু উনার একার পক্ষে দুই দপ্তরের কাজ করা নিয়ে আমাদের কাজ অনেক বিলম্ব হচ্ছে। এখানে মিসকেস আছে,খারিজ আছে। এই কাজ গুলো সঠিক সময়ে হচ্ছেনা। উপজেলায় ৪৬৫ টি মৌজার খারিজ, মিসকেস সহ নানান ভুমি সেবা থেকে কিছুটা হলেও জনসাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরাও কাজে স্বচ্ছতা আনতে পারছিনা। এসিল্যাল্ড স্যার আসলে আমাদেরও কাজের স্বচ্ছতা ফিরে আসবে।
সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, আমাদের সিংড়া উপজেলা ৫২৮ বর্গ কিঃ আয়তনের জনসংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে বৃহত্তম এই উপজেলায় দীর্ঘ দিন ধরে ভুমি সহকারী কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকায় ভুমি সেবার মত গুরুত্বপুর্ণ কাজের সেবা থেকে শুধু সাধারণ মানুষ বঞ্চিতই হচ্ছেন না ভোগান্তিরও শিকার হচ্ছেন। নাটোর জেলার আর কোন উপজেলাতে এমন অনুপস্থিত দেখি নাই। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট উধর্ধতন মহলের নিকট দ্রুত সহকারী ভুমি কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি জানান।