নিজস্ব প্রতিবেদক, সিংড়া:
নাটোরের সিংড়া উপজেলার নৌকার বিজয় ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। সিংড়ায় ১২টি ইউনিয়নের ১০টিতেই এখন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা মাঠ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিদ্রোহী প্রার্থীরা এমনভাবে মাঠে থাকলে আওয়ামী লীগের সাথে আওয়ামী লীগের লড়াই হবে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ৪র্থ ধাপে সিংড়ার ১২টি ইউনিয়নে নির্বাচন আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এই নির্বাচনে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের মোট ৫৯ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী
তবে ১২টির মধ্যে দুটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। তারা হলেন, ইটালি ইউনিয়নে আরিফুল ইসলাম ও শেরকোল ইউনিয়নে লুৎফুল হাবিব রুবেল। আর বাকি ১০টি ইউনিয়নে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীবতা করছেন।
জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের হারাতে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ফলে মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নৌকা প্রতীকের বিজয় নিয়ে তারা চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নে মোফাজ্জল হোসেন মোফা (নৌকা), আশিক ইকবাল (বিদ্রোহী) ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোজাম্মেল হক মোজা (বিদ্রোহী)। ডাহিয়া ইউনিয়নে সিরাজুল মজিদ মামুন (নৌকা), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান এম এম আবুল কালাম (বিদ্রোহী) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক রেজাউল করিম (বিদ্রোহী)।
কলম ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন (নৌকা), বর্তমান চেয়ারম্যান মইনুল হক চুনু (বিদ্রোহী) ও রিয়াজ উদ্দিন (বিদ্রোহী)। চামারী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রশিদুল ইসলাম মৃধা (নৌকা), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান স্বপন (বিদ্রোহী), আরেক সহ-সভাপতি রবিউল করিম (বিদ্রোহী) ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক বিদ্রোহী।
হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাকুর রহমান চঞ্চল (নৌকা), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মাহাবুব উল আলম (বিদ্রোহী) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি নওফেল উদ্দিন ভেটু চৌধুরী (বিদ্রোহী)।
লালোর ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম (নৌকা), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (বিদ্রোহী), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য একরামুল হক শুভ (বিদ্রোহী)।
তাজপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন (নৌকা), উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ (বিদ্রোহী), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল জব্বার (বিদ্রোহী), যুবলীগ নেতা আব্দুল মমিন (বিদ্রোহী), উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক আ. মালেক (বিদ্রোহী), ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবুল মাসুদ (বিদ্রোহী) ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উপদেষ্টা জিয়া হোসেন (বিদ্রোহী)।
চৌগ্রাম ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম ভোলা (নৌকা), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলতাব হোসেন (বিদ্রোহী)। ছাতারদিঘী ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ বাদশা (নৌকা), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন আকন্দ (বিদ্রোহী)।
রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী সভাপতি ইদ্রিস আলী (নৌকা), সাবেক চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ (বিদ্রোহী), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন (বিদ্রোহী) ও অপর সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান (বিদ্রোহী)।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শেখ ওহিদুর রহমান বলেন, নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা চেষ্টা করেছিলাম তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তাদের দল থেকে বহিষ্কার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হবে।