শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪
নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / সিংড়ার বুড়িকদমা গ্রামে চারটি পরিবার একঘরে

সিংড়ার বুড়িকদমা গ্রামে চারটি পরিবার একঘরে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিংড়া:
নাটোরের সিংড়া উপজেলার ইটালী ইউনিয়নের বুড়িকদমা গ্রামে দীর্ঘ দিন থেকে একঘরে করে রাখা হয়েছে চারটি পরিবারকে। তাদের সাথে গ্রামের লোকজনের কথা বলা নিষেধ। কথা বললে ৫০০ টাকা জরিমানা গুণতে হবে, এমন নির্দেশনা জারি রয়েছে।

মসজিদে নামাজ পড়তে নিষেধ থাকায় পরিবার চারটির কেউ গ্রামে নামাজ পড়তে পারে না। জুমার নামাজ পড়তে যেতে হয় অন্য গ্রামের মসজিদে। গ্রাম্য মাতব্বরদের অত্যাচারে ইতোমধ্যে ঘর ছেড়েছে ফটিক নামে এক ব্যক্তির পরিবার। স্ত্রী, সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে তারা পার্শ্ববর্তী খোলাবাড়িয়া গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে।

জানা যায়, প্রায় ৮ মাস আগে ওই গ্রামে পীরস্থানের জমি দখলসহ বাড়ি করে জিল্লুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। এ সময় মান্নান পক্ষ মাদ্রাসা নির্মানের প্রস্তাব দিলে শুরু হয় বিরোধ। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে তাকে বসবাসের সুযোগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিপক্ষ তাঁকে বসবাসের সুযোগ দেয়া নিয়ে শুরু হয় বিরোধ। মান্নান ও তাঁর ভাইদের কোণঠাসা করার জন্য রাতারাতি গ্রামের কিছু মাতব্বর একজোট হয়। পরবর্তীতে মান্নানের বাড়ির পাশে তাদের ভোগদখলকৃত ২০ শতক জমিতে ঈদগাহ মাঠ নির্মাণের প্রস্তাব দেয় মাতব্বররা। তারা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রাতের আধারে মান্নানের দখলকৃত জমির সকল গাছপালা, সবজি বাগান বিনষ্ট করা হয়।

বিষয়টি  সার্কেল এএসপি জামিল আক্তার ও সিংড়া থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দীককে অবহিত করে মান্নান ও তাঁর ভাইয়েরা। এর পর ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলামসহ দু’পক্ষকে নিয়ে শালিসে ঈদগাহ মাঠ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। বিনিময়ে মান্নান ও তাঁর ভাইদের মাটিভরাট ও গাছের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭৫ হাজার টাকা দেয়া হয়।

এরপর থেকেই মান্নান ও তাঁর পরিবারদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করার লক্ষ্যে একঘরে করে রাখে মাতব্বররা। সম্প্রতি ওই জায়গায় মান্নানের ভাই মোস্ত তাল পারা বারণ করায় অপর ভাই মোতালেবকে রনির নেতৃত্বে মারপিট ও তাঁর কাছে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। সিংড়া থানায় মোতালেব এর স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা করলে পুলিশ রনিসহ তিনজনকে আটক করে।

সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামে রয়েছে ঈদগাহ, কবরস্থান ও ১ টি মসজিদ। কবরস্থানের পাশেই ঈদগাহ মাঠে ঈদে নামাজ পড়া হয়। ঈদগাহ মাঠ থাকা সত্বেও এলাকার মাতব্বর রেজাউল, আব্দুর রশিদ, আনিসুর, হাবিল, হামিদুল,রশিদ,আনসার ও রনির নেতৃত্বে দল গঠন করে কোণঠাসা করার জন্য মান্নানের বাড়ির সাথে ঈদগাহ মাঠ করা হয়েছে। কোণঠাসা করা হয়েছে মান্নান, তাঁর ভাই মোস্তফা, মোতালেব ও মহব্বতকে। তাদের সাথে গ্রামের কাউকে কথা বলতে দেয়া হয় না। কথা বললে ৫০০ টাকা জরিমানার নির্দেশ রয়েছে। মান্নান ও তাঁর পরিবারের ছেলে মেয়েদের সাথে খেলতে বারণ করা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছুদিন আগে মান্নান ও তাঁর ভাইকে গ্রাম ছাড়া করার পরিকল্পনা মোতাবেক তাদের ভূমিদস্যু আখ্যা দিয়ে মানববন্ধন করে প্রতিপক্ষ গ্রুপ। অথচ গ্রামের ২১ বিঘা খাসজমি প্রতিপক্ষ ঐ গ্রুপের কিছু লোকজন ভোগদখল করে আসছে।

আব্দুল মান্নান জানান, আমরা ৪ ভাই। এখানে আমরা আদি বসবাস। আমার বাবা একজন সাধারণ কৃষক ছিলেন। বাড়ির পাশে মসজিদে আমরা দু শতক জমি দান করে মসজিদ নির্মান করেছি। সম্প্রতি পীরস্থানের জমি তে মাদ্রাসা করার পরিকল্পনা ছিলো আমাদের। কিন্তু গ্রামের কয়েকজন মিলিত হয়ে সেখানে একজনকে বসতবাড়ি করতে সহযোগিতা করেছে। আমরা প্রতিবাদ করায় গ্রামের কিছু মানুষ একজোট হয়। বর্তমানে তাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। গ্রামের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সে কারনে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে যাচ্ছি। তারা আমাদের যে কোন সময় প্রাণনাশ করতে চায়। আমরা আইনের মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান চাই। কারন আমরা কোনো অন্যায় করিনি।

প্রতিবেশি জাহিদুল ইসলাম জানান, আব্দুল মান্নান ও তাঁর ভাইয়েরা খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের কে অন্যায়, জুলুম করা হচ্ছে। আমি সত্য কথা বলায় আমার বাড়ির সামনে বেড়া দেয়া হয়েছে। আমার যাতায়াতে বাঁধা সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাকে অকট্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।

গ্রাম থেকে বিতাড়িত ফটিক বলেন, আমি নিরুপায় হয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। মান্নানের পক্ষ নেয়ায় আমাকে মারার হুমকি দেয়া হয়েছে। রাস্তাঘাটে অকট্য ভাষা বলা গালিগালাজ করা হয়। খুন জখমের হুমকি দেয়া হয়। রাতে দরজা, জানালায় এসে হুমকি দেয়া হয়। আমার তিন মেয়ে। একটি মেয়ে অনার্সে পড়ালেখা করে। তার ভবিষ্যৎ ভেবে গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছি। আমার ভাইয়ের বাসা খোলাবাড়িয়ায় আশ্রয় নিয়েছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মান্নান ও তাদের পরিবারকে একঘরে করে রেখেছে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। ফটিক গ্রাম ছেড়েছে, সে একজন নিরীহ মানুষ।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইটালী ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, তাদের একঘরে করে রাখার বিষয়টি আমি কখনো শুনিনি। তবে এর সত্যটা পাওয়া গেলে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য আমি চেষ্টা করবো।

সিংড়া থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দীকি জানান, একঘরে করার বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। এর আগে এ বিষয়ে মামলা হয়েছিলো, পুলিশ আসামিদের আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। একঘরে করে রাখলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও দেখুন

রাণীনগরে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে মারপিট করে  ১৫ভরি স্বর্ণের ও 

১০০ভরি চান্দির গহনা ছিনতাই নিজস্ব প্রতিবেদক রাণীনগর,,,,,,,,,,  নওগাঁর রাণীনগরে দোকান থেকে বাড়ী ফেরার  পথে পথ …