বিশেষ প্রতিবেদক:
নাটোরের সিংড়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বালি ব্যবসায়ীরা। যত্র তত্র বালি উঠানো এবং তা বড় বড় ট্রলারে করে পরিবহনে ঢেউয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী তীরের বাড়ি-ঘরগুলো। এরই মধ্যে একটি বালি বোঝাই বড় ট্রলারের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আত্রাই নদীর উপর দুটি সেতুর।
মঙ্গলবার দুপুরে একটি বালি বোঝাই বড় ট্রলারের ধাক্কায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের সিংড়ার আত্রই নদীর ওপর ব্রিজের বড় ধরণের ক্ষতি হয় বলে জানায় এলাকাবাসী।এর ফলে পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দিলে সেখানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এর আগে একই ট্রলি উপজেলার কলম ইউনিয়নের ফনু সেতুতে ধাক্কা দেয় এবং সেখানে আটকে যায়। এতে নব নির্মিত এই সেতুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বালি পরিবহন ও সংরক্ষণের ফলে নানা সময় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলেও বলার সাহস নেই কারোর।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় এর সাথে জড়িত আছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা। সম্প্রতি নাটোর-বগুড়া জাতীয় মহাসড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তার পূর্বেই বালি ব্যবসায়ীরা নাটোর সিংড়া হাইওয়ের পাশে বালি মজুদ করা শুরু করেছেন। এতে রাস্তার পাশে চলাচলাকারী জনসাধারণের দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। আত্রাই নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে রাতের আঁধারে শক্তিশালী ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করায় জনমনে হতাশা দেখা দিয়েছে।
সিংড়া পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস এবং আই সি টি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক শেরকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুবেল মূলত এই বালি ব্যবসার সাথে জড়িত বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রতিদিন অন্তত ১০ টি ট্রলারে করে এই বালি সিংড়ায় আনা হয়। সেখান থেকে ঠিকাদাররা ট্রলি, ট্রাক্টর ও ট্রাকে করে বালি কিনে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকার দলীয় এক কর্মী জানান, কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হলেও সাধারণ জনগণের সমস্যা নিয়ে তারা ভাবেন না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট শেখ ওহিদুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান,বন্যার এই সময়ে মানুষের বাড়ি-ঘরে এমনিতেই পানি উঠে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে তার ওপর বড় বড় ট্রলার চলাচলের কারণে ঢেউয়ে নদী তীরের বাড়ি-ঘরগুলো ভেঙে যাচ্ছে। এভাবে চলতে দেওয়া যায়না।
এব্যাপারে জানতে মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস এবং রুবেলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। মঙ্গলবার বিকেলে যে ট্রলারে ধাক্কায় সিংড়া ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই ট্রলারটি এবং এর চালক হৃদয় হোসেন(২০) কে আটক করেছে পুলিশ। তবে তার বিরুদ্ধে এখনো কোন মামলা দায়ের করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিকি।
একটি অসমর্থিত সূত্র জানায়, আটক ট্রলারটি উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিকের।
উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক জানান, এই তথ্য সঠিক নয়।
তিনি আরো জানান, তিনি কোন ব্যবসার সাথে জড়িত নন। এগুলো তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।
ট্রলার আটক এবং এর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এব্যাপারে জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন বানুর সরকারি মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।