বিশেষ প্রতিবেদকঃ
গতকাল বুঝবার সিংড়ায় আটক ওএমএস এর চাল বৈধ। সিংড়ার সাতপুকুরিয়া থেকে জব্দ করা ১৭১ বস্তা(প্রায় ৫ টন) চালসহ ডিলার আসাদুজ্জামানকে আটকের পরদিন পুলিশ জানালো সেটি বৈধ। ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই চাল আটকের ঘটনা প্রচারিত এবং প্রকাশিত হয়ে গেছে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাল অবৈধ মজুদ কালোবাজারে বিক্রির প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছিল। ঠিক সেই সময়ে এমন একটি ঘটনা ঘটল। এমন অবৈধ চাল মজুদ এর খবর নিমিষের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় সমস্ত গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। পরবর্তীতে জানা গেল অবৈধ চাল মজুদের ঘটনাটি সত্য নয়।
এক তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সিংড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুস সালাম বিশ্বাস ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এলএসডি বিদ্যুৎ কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, বেলা ১১ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাতপুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অব্যবহৃত একটি ছাত্রাবাস থেকে ওই চাল জব্দ করে পুলিশ এবং ডিলার আসাদুজ্জামানকে আটক করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতপুকুরিয়া গ্রামের জনৈক একজন জানান, পুলিশ যখন গোডাউন ঘিরে নেয় তখন গ্রামের লোকজন এমনকি চৌকিদারও বলেছিল আসাদুজ্জামান একজন শান্ত এবং ভদ্র মানুষ। আসাদুজ্জামানের এই গোডাউনটি বৈধ এবং এখানে যে পরিমাণ চাল আছে সেটিও বৈধ। ৭ এপ্রিলের একটি সরকারি নির্দেশনা ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ওএমএস এর চাল বিক্রয় বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কোন কথাই শুনেনি।
আসাদুজ্জামানের পরিবারের সদস্যরা জানান, এখন আমরা যাব কোথায়? সারাদেশে তো আমাদের নামে বদনাম হয়ে গেছে। তাকে তো এখন থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের মানুষ জেনে গেল যে ওএমএসের চাল অবৈধভাবে মজুদ করেছিল আসাদুজ্জামান।
সতিপুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী জানান, ২০১৭ সালের ওএমএসএর চাল রাখা এবং বিক্রির জন্যে বিদ্যালয়ের অদূরে অব্যবহৃত একটি ছাত্রাবাস ব্যবহারের জন্যে ৬ এপ্রিল আসাদুজ্জামান আসাদ একটি আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের ৯ এপ্রিল ম্যানেজিং কমিটির এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে ওই ভবন ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। ইতিপূর্বেও ২০১১ সাল থেকে ভবনটি অন্য ডিলার ব্যবহার করে আসছিলেন। যেহেতু সরকারি চাল বিতরণ করা হবে তাই আমরা অব্যবহৃত এই ভবনটি ব্যবহার করতে দিয়েছিলাম।
আসাদুজ্জামানের ছোট ভাই আহসান জানান, এই ঘটনায় আমরা পারিবারিকভাবে খুবই হেয় হয়েছি। সারা দুনিয়া আমাদের জানলো চাল চোর হিসেবে। এই দাগ মুছব কী করে।
এই প্রতিবেদককে দেখে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ভীড় করে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আসাদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র। আমরা দোষীদের বিচার চাই।
আসাদুজ্জামানের ছেলে আপেল জানান, আমরা ৬ এপ্রিল সিংড়া গোডাউন থেকে চাল উঠানোর পরেই সরকার নির্দেশ দেয় ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চাল বিক্রি না করতে। সেই চাল কিভাবে অবৈধ মজুদ হলো তা আমরা বুঝতে পারছিনা। ২০০৬ সাল থেকে এই ভবনে চাল রাখা যদি বৈধ হয়, তবে এখন কেন সেটি অবৈধ হলো।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখেছি। নীতিমালা অনুযায়ী ডিলার আসাদুজ্জামানের এই ভবন ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে আলোচনা করে তার চাল মজুদের বিষয়টি বৈধ বলে তাকে আমরা শর্ত সাপেক্ষে ছেড়ে দিয়েছি।