নিউজ ডেস্ক:
বাণিজ্য ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কট উত্তরণে ফের আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে সরকার। আগামীতে যাতে বড় ধরনের কোনো রিজার্ভ সঙ্কটে পড়তে না হয় সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার।
ইতোমধ্যেই ঋণের বিষয়ে আলোচনার জন্য আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএমএফের থেকে ঋণ নিলে অন্যরাও এগিয়ে আসবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি দল ৯ দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসেছে। তারা ঋণের নানা বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বৈঠক করবে। তবে ঋণের শর্তের ব্যাপারে বৈঠক করতে আইএমএফের ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার নির্বাহী পরিচালক সুরজিৎ ভালার নেতৃত্বে আরেকটি দল আসবে। দরকষাকষি চূড়ান্ত হলে ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থাপন করা হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ এর আগে আইএমএফ থেকে চারবার ঋণ নেয়। প্রথমবার ঋণ নেওয়া হয় ১৯৯০-৯১ সময়ে। এরপর ২০০৩-২০০৪, ২০১১-১২ এবং সর্বশেষ ২০২০-২১ সালে সংস্থাটি থেকে ঋণ নেয় বাংলাদেশ। তবে কোনোবারই ঋণের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছাড়ায়নি। সদস্য হিসেবে আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ বছরে ১০০-১৫০ কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ পাওয়ার যোগ্য। তবে এবার প্রতিবছর ১৫০ কোটি ডলার করে ৩ বছরে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চাইবে সরকার। বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য গঠিত সহনশীলতা ও টেকসই তহবিল (আরএসএফ)-আইএমএফের এই তিন কর্মসূচি থেকে আলাদা করে ঋণ চাওয়া হবে।
আইএমএফের ইসিএফ থেকে নেওয়া ঋণে সুদ ও মাসুল দিতে হয় না। ১০ বছর মেয়াদি এ ঋণ পরিশোধে সাড়ে ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডও রয়েছে। বাকি দুটি তহবিল থেকে দেওয়া ঋণের সুদহার ১ দশমিক ৫৪ থেকে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ নিয়ে সময়ের আলোকে বলেন, আইএমএফের থেকে ঋণ নিতে পারলে তো ভালো। তাদের থেকে ঋণ নিতে পারলে তখন বিশ্বব্যাংক, এডিবিও এগিয়ে আসবে। কারণ আইএমএফ যেখানে ঋণ দেয় সেখানে অনেক শর্ত থাকে।
তিনি বলেন, তবে এবার ঋণের ব্যাপারে আইএমএফও মনে হচ্ছে নমনীয়। এখন সরকার সরকার যদি তাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে নিতে পারে তা হলে তো ভালো। সরকার সঙ্কটের কথা চিন্তা করে যে আগেই আইএমএফের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এটা ভালো হয়েছে। তারা ভর্তুকি কমানো, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, আর্থিক খাতে সংস্কার করতে বলতে পারে। তাদের শর্ত মানতে গিয়ে যদি এগুলো ঠিক হয় তা হলে তো ভালো।
এদিকে গত বুধবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। যা প্রায় ৫ মাসের আমদানির খরচ মেটানোর জন্য যথেষ্ট। সাধারণত ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভই যথেষ্ট বলে বিবেচনা করে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ। কিন্তু চলমান এই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে তাদের পরামর্শ হচ্ছে, রিজার্ভে যেন ৮-৯ মাসের আমদানির খরচের সমপরিমাণ টাকা রাখা হয়।
এদিকে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে ১৮ বিলিয়ন ডলার আইডিএ ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যেই প্রস্তাবিত কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে মতামত চেয়েছে। আগামী অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে তার ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে এ কৌশল অনুসরণ করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতিও পাচ্ছে। চলতি অর্থবছরেও ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দিয়েছে দাতারা।