শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / সাশ্রয়ী ও টেকসই সড়ক নির্মাণে পলিমার প্রযুক্তি

সাশ্রয়ী ও টেকসই সড়ক নির্মাণে পলিমার প্রযুক্তি

নিউজ ডেস্ক:
একটি নতুন প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে সারাদেশে টেকসই সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের সময় ও ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা, যা দ্রুত সম্প্রসারণশীল যোগাযোগ খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে তারা আশাবাদী। সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ফজলে রব্বে বলেন, ‘আমরা এই ন্যানো প্রযুক্তি পণ্য এ্যাক্রিলিক পলিমার ব্যবহার করে মাসে ১০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে পারি।’ খবর বাসসর।

‘আমাদের বিশ্বাস, পরিবেশবান্ধব এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (ফোর্থআইআর) যুগে প্রবেশের পথ সুগম করবে এবং আরও উৎসাহব্যঞ্জক বিষয় হলো, এটি এখন আমাদের হাতের নাগালে এসে পৌঁছে গেছে, রব্বে বলেন। সড়ক যোগাযোগ সম্প্রসারণের চাহিদার ফলে গত বেশকিছু বছর ধরে বাংলাদেশের যোগাযোগ খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েই চলেছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ৩১২ দশমিক ৯৬শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়, যা মোট উন্নয়ন বাজেটের ১২.৭ শতাংশ। বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৮০ দশমিক ৪২শ’ কোটি টাকা। নির্মাণ প্রযুক্তি-সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণাপত্রে ‘এ্যাক্রিলিক পলিমার’কে ন্যানো প্রযুক্তির অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে,  এটি মাটিকে সুদৃঢ় ও সুস্থিত করার ক্ষেত্রে অসাধারণ একটি উপাদন, যার পানি প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে এবং এতে ক্ষতিকর রাসায়নিক এবং অথবা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের কোন প্রয়োজন হয় না। 

তিনি জানান, তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২২টি জেলা থেকে মাটি সংগ্রহ করে মাতারবাড়ি এলাকায় কে.৩১ এপিএস এ্যাক্রিলিক পলিমার দিয়ে বিভিন্ন অনুপাতে পরীক্ষা করেছেন। একই সঙ্গে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুত প্রকল্পের সড়ক অবকাঠামোগত উপাদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরামর্শক সংস্থাগুলোর ভারপ্রাপ্ত দলনেতা হোসেন বলেন, তারা একটি আর্থিক বিশ্লেষণও করেছেন এবং দেখেছেন এটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী।

রব্বে বলেন, এটি খুব সস্তা, টেকসই এবং সহজ রাস্তা নির্মাণের পদ্ধতি এবং বাংলাদেশের মাটিও এ্যাক্রিলিক পলিমারের সঙ্গে মেশানোর জন্য খুবই উপযোগী। দলটি এপ্রিল ২০২১ থেকে জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত দশ মাস ধরে প্রযুক্তিটির কার্যকারিতা এবং সম্ভাব্যতার ওপর একটি বিস্তৃৃত গবেষণা চালিয়েছে। তারা এটিকে সওজ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিডব্লিউডিবি) মতো সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করার সুপারিশ করেছে।

গবেষক দলের সদস্যরা বলেন, প্রযুক্তিটি দ্রুততার সঙ্গে এবং অনেক কম খরচে ড্যাম ও বাঁধ নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা সড়ক ব্যয় সংকোচনের জন্য এ্যাক্রিলিক পলিমারের ব্যবহার নিয়ে একটি সভা করেছেন যেখানে এর সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরীর সভাপতিত্বে সওজকে প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নির্মাণ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ্যাক্রিলিক পলিমার বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে, ভারত এবং ভুটানও রাস্তা নির্মাণের জন্য এটি ব্যবহার করা শুরু করেছে। সমীক্ষা দলের একজন সদস্য বলেছেন যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী সফলভাবে কাশ্মীরের দুর্গম ও পাহাড়ী লাদাখ অঞ্চলে এবং বাংলাদেশের সীমান্ত বরাবর শিলিগুড়িতে কে.৩১ এপিএস ব্র্যান্ডের এ্যাক্রিলিক পলিমারের সফল ব্যবহার করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-বাহিনী প্রথমে পণ্যটি তৈরি করে, যা মার্কিন সামরিক এবং বিমান বাহিনী পরবর্তীতে তাদের দেশে এবং অন্যত্র ব্যবহার করা শুরু করে। গবেষণায় অংশ নেয়া অন্য সদস্যরা হলেন, মাতারবাড়ি প্রকল্পের সওজ কম্পোনেন্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শাহরিয়ার রুমি, ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার (সওজ) মোঃ ইউনুস আলী, রাস্তা নির্মাণকারী মীর আক্তার, ডব্লিউএমসিজি জেভির প্রকল্প ব্যবস্থাপক আবু সাদাত সায়েম এবং কে.৩১ বাংলাদেশের জন্য এপিএস এক্সক্লুসিভ চ্যানেল পার্টনার ওয়ালিউল ইসলাম।

প্রযুক্তিটির কৌশল ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রব্বে বলেন, ‘সনাতন পদ্ধতিতে ইট ও পাথর কুচি সড়কের ভিত্তি ও উপ-ভিত্তি নির্মাণের প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে প্রস্তাবিত প্রক্রিয়ায় কোন পাথর বা ইটের প্রয়োজন হবে না।’ এর অর্থ, তিনি বলেন, নতুন প্রযুক্তি ইট পোড়ানোর প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে বাংলাদেশের বায়ুু দূষণরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, রাসায়নিক বিক্রিয়াটি একটি বিশেষ স্তর তৈরি করার জন্য একটি ন্যানো-পলিমারাইজড গ্রিড তৈরি করে, যা রাস্তার ভিত্তি (বেজ এবং সাব-বেজ) প্রথাগত সড়ক অবকাঠামোর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী করে তোলে। তিনি বলেন, এ্যাক্রিলিক পলিমার ব্যবহার করা হলে আমদানি করা পাথরের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে যাবে এবং রাস্তা নির্মাণে প্রয়োজনীয় উপকরণের ৭০ শতাংশ দেশীয় হওয়ায় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

আরও দেখুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …