নিউজ ডেস্ক:
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীর আত্মত্যাগ অপরিসীম। জীবনসঙ্গীকে হারাতে পারেন জেনেও তারা তাদের স্বামী-সন্তানদের পাঠিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। আবার অনেকে পাকিস্তানি বাহিনী ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। প্রায় চার লাখ নারী সম্ভ্রম হারিয়েছেন পাকিস্তান বাহিনী ও তার দোসরদের দ্বারা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবার সেসব নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা দিতে যাচ্ছে সরকার।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মঙ্গলবার দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে ৬৫৪ নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেওয়া হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এবং ঢাকার বাইরে অপর ৬৩ জেলায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এ উপলক্ষে সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
সম্মাননার তালিকায় থাকা সব নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ক্রেস্ট/সম্মাননা স্মারক, উত্তরীয়, শাড়ি ও স্যুভেনিয়র প্রদান করা হবে। ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা স্মারক তুলে দেবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। আর জেলা পর্যায়ে সব জেলা প্রশাসক ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে অনলাইনে সংযুক্ত থাকবেন। জেলা প্রশাসকরা তার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট জেলার নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রেস্ট/সম্মাননা স্মারক তুলে দেবেন। তবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি, বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা বা মারা গেছেন এমন কোনো কারণে কোনো নারী মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত হতে না পারলে তার পরিবারের কাছে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানের আয়োজক মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি সমকালকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোন নির্যাতিত হয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এ সংখ্যা অনেক বেশি। আবার যেসব নারী মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন, তাদেরও যথাযথভাবে মূল্যয়ন করা হয়নি। তাদের সম্মান দেওয়া হয়নি। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা কষ্ট নিয়ে মারা গেছেন। তাই আমরা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথমবারের মতো নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা জানানোর উদ্যোগ নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য অনেকে অনেক খেতাব পেয়েছেন। বীরশ্রেষ্ঠ, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। যার সংখ্যা ৬৭৬ জন। কিন্তু এ তালিকায় খেতাব পাওয়া নারী মুক্তিযোদ্ধা হলেন মাত্র তিনজন। খেতাবপ্রাপ্তরা হলেন- ক্যাপ্টেন সেতারা বেগম বীরপ্রতীক (সেনাবাহিনী), তারামন বিবি বীরপ্রতীক ও কাঁকন বিবি বীরপ্রতীক (গণবাহিনী)। আর দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রথম একাত্তরের নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সংসদে আইন প্রণয়ন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ণাঢ্য ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে উদযাপন উপলক্ষে গঠিত সমন্বয় উপকমিটির দ্বিতীয় সভায় নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এর দায়িত্ব দেওয়া হয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে। পরে তাদের চাহিদা অনুসারে ২০৬ জন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা মিলিয়ে মোট ৬৫৪ জনের তালিকা চূড়ান্ত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই তালিকার আলোকে মঙ্গলবার তাদের সম্মাননা জানানো হবে। অনুষ্ঠানে মুজিববর্ষের থিম সং এবং নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবময় ও সংগ্রামী জীবনের ওপর নির্মিত গীতি-আলেখ্য পরিবেশন করার কথা রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, সুবর্ণজয়ন্তী উপযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। তার আলোকে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা জানাচ্ছে। আমরা তাদের সার্বিক সহায়তা দিয়েছি। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ।