শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / সামরিক অভিধান থেকে ‘মার্শাল ল’ শব্দটি বাদ দিন

সামরিক অভিধান থেকে ‘মার্শাল ল’ শব্দটি বাদ দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সামরিক অভিধান থেকে ‘মার্শাল ল’ শব্দটি বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা দেশ ও সশস্ত্র বাহিনীর কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সততা, দক্ষতা ও পেশাদারিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ন্যায়নীতির ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনীতে পদোন্নতি দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল সোমবার সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদ-২০২০-এর সভায় দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা সেনানিবাসের সেনা সদর, নৌবাহিনী সদর দপ্তর ও বিমানবাহিনী সদর দপ্তরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে এই সভায় অংশগ্রহণ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মার্শাল ল রক্তপাত ছাড়া দেশ ও সশস্ত্র বাহিনীর কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। তাই সামরিক অভিধান থেকে আমাদের মার্শাল ল শব্দটি বাদ দেওয়া উচিত।’

জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন আমলের ১৯টি ক্যুয়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে সশস্ত্র বাহিনীর এত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা ও সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছে যে যুদ্ধেও এত বিপুলসংখ্যক সৈন্য নিহত হয়নি। আমরা (সশস্ত্র বাহিনীতে) আর কোনো ছেলেহারা পিতা বা পিতাহারা ছেলের কান্না শুনতে চাই না।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর একের পর এক ক্যুয়ের কারণে সশস্ত্র বাহিনী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, ‘এসব ক্যুয়ের নামে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সশস্ত্র বাহিনীর অনেক সদস্যকে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়। সেনা ও বিমানবাহিনীতে সবচেয়ে বেশি রক্তপাত হয় এবং আমাদের বহু স্বামীহারা বিধবা ও পুত্রহারা বাবা-মায়ের কান্না শুনতে হয়েছে।’

সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও একে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা তাঁর সরকারের লক্ষ্য বলে আবারও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আমাদের পরিবারের সম্মানিত সদস্য। তারা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এই বাহিনীকে আরো আধুনিক ও সময়োপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

সশস্ত্র বাহিনী পর্ষদের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদে আপনারা সব জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা একত্রিত হয়েছেন। আপনাদের প্রজ্ঞা, আপনাদের বিচার-বুদ্ধি, আপনাদের ন্যায়পরায়ণতার ওপর আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। আমি এটুকু অনুরোধ করব—এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে উপযুক্ত কর্মকর্তারা যাতে প্রমোশনটা পায়। আপনারা ন্যায়নীতির ভিত্তিতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এই প্রমোশন দেবেন, যাতে সবার ভেতরে একটা আস্থা আসে। আমি জানি অনেকে উপযুক্ত থাকে, সবাইকে দেওয়া যায় না। কারণ পদটা সীমিত। তার পরও আপনারা অবশ্যই দেখবেন, যারা সত্যিকার উপযুক্ত, তারা যেন প্রমোশন পায়।’

সশস্ত্র বাহিনীতে পদোন্নতিতে ব্যবহূত আধুনিক পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে যেমন সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য আধুনিক পদ্ধতি অর্থাৎ ট্রেস ট্যাবুলেটেড রেকর্ড অ্যান্ড কমপারেটিভ ইভ্যালুয়েশনের মাধ্যমে কারা প্রমোশন পাওয়ার উপযুক্ত, সেই দক্ষতা কার কতটুকু আছে, তার তুলনামূলক মূল্যায়ন করে আপনারা সিদ্ধান্ত নেন। সেই সঙ্গে সঙ্গে এটুকু দেখতে হবে, শুধু খাতা-কলমে বেশি নম্বর পাওয়া না, যারা ফিল্ডে ভালো কাজ করতে পারে, কমান্ড করতে পারে বা নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা আছে কি না বা তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে কি না, সেগুলো আপনাদের বিচারে আনতে হবে।’

সশস্ত্র বাহিনীতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসের বিষয়টি বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই দেশ স্বাধীন করেছি লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিতে পারি না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাসী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে যারা বিশ্বাসী, যারা বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী, নিশ্চয়ই তাদের আদর্শ নিয়েই চলতে হবে। দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাসী হবে, তারাই যেন দায়িত্ব পায়; যাতে সঠিক পথে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সশস্ত্র বাহিনী, যারা আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক; তাদের সম্মানটা বজায় রেখেই আমাদের সেই চেতনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে সেটা আপনারা দেখবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব অফিসার সামরিক জীবনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যোগ্য নেতৃত্ব প্রদানে সফল হয়েছেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাঁদের আপনারা অবশ্যই বিবেচনা করবেন। সেটা আমি চাই। আর যেকোনো একজন অফিসার বা কর্মকর্তা তাঁদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অবশ্যই তাঁদের পেশাগত মান, তাঁদের যোগ্যতা ও তাঁদের দক্ষতা এটা বিবেচ্য বিষয় হবে, সেটার অগ্রাধিকার আপনারা দেবেন।’

দক্ষতার সঙ্গে শৃঙ্খলা-সততা-বিশ্বস্ততার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু একটা সুশৃঙ্খল বাহিনী, এই সুশৃঙ্খল বাহিনীতে যারা পদোন্নতি পাবে তারা যেন সব সময় একটা শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলতে পারে। কারণ শৃঙ্খলাটাই হচ্ছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটা মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। কাজেই শৃঙ্খলা সম্পর্কে যারা যথেষ্ট সচেতন, অনুগত; তারা যেমন উপরে যারা থাকবে তাদের প্রতি অনুগত থাকবে, আবার অধস্তনদের ব্যাপারে দায়িত্ববান হবে। এই বিষয়টাও দেখতে হবে, তাদের প্রতিও সহানুভূতিশীল ও দায়িত্বসম্পন্ন হতে হবে।’

দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সবাইকে কম প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে শুধু অতি জরুরি ব্যয় করতে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা করোনাকালে শুধু অতি প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করব এবং কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে কোনো খরচ করব না। আর এভাবেই আমরা আবার সুদিন ফিরিয়ে আনব।’

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত নিজ নিজ সদর দপ্তর থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হন এবং প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। সশস্ত্র বাহিনী পদোন্নতি পর্ষদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।  

এই সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জে. মাহফুজুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কর্নেল থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং লে. কর্নেল থেকে কর্নেল পদবিতে পদোন্নতির জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্যদিকে নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন থেকে কমোডর, কমান্ডার থেকে ক্যাপ্টেন ও লে. কমান্ডার থেকে কমান্ডার পদবিতে পদোন্নতির জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। তাছাড়া এই পর্ষদের মাধ্যমে বিমানবাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন থেকে এয়ার কমোডর, উইং কমান্ডার থেকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এবং স্কোয়াড্রন লিডার থেকে উইং কমান্ডার পদে যোগ্য প্রার্থীদের পদোন্নতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও দেখুন

নাটোরের সকল এমপিদের গ্রেপ্তারের দাবি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের

নিজস্ব প্রতিবেদক,,,,,,,, সাম্য ও মানবিক দেশ বিনির্মাণে দিকনির্দেশনামূলক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক …