নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহানগরবাসীকে নিরলসভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে যাচ্ছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) জনস্বাস্থ্য বিভাগ। সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়াদে স্বাস্থ্যসেবায় সারাদেশের মধ্যে প্রশংসনীয় অর্জন রয়েছে এই নগরীর। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) কার্যক্রমে সারাদেশের মধ্যে পরপর ১১ বার ১ম হওয়ার অর্জন করেছে রাসিক। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে ২০২১ ও ২০২২ সালে সারাদেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে এই সিটি। এছাড়া নগরবাসীর সহযোগিতায় সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী শিশু হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। রাসিক পরিচালিত সিটি হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসবা।
রাসিকের জনস্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে গেছে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ১২টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৩টি মাতৃসদন কেন্দ্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এই ১৫টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে ৫ শতাধিক ব্যক্তি সেবা নেন। গত ৫ বছরে সেবা নিয়েছেন সাড়ে ৭ লাখ মানুষ।
জানা যায়, নগরীর বহরমপুর এলাকার ২ দশমিক ৪৪ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে বিশেষায়িত রাজশাহী শিশু হাসপাতাল। ১০ তলা ভীতবিশিষ্ট ৪ তলা ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ। সামনের ফটক ও রাস্তা নির্মাণ চলছে। হাসপাতালটির প্রথম তলার আয়তন ১৯ হাজার বর্গফুট। এই তলায় থাকছে ১৪ শয্যার জেনারেল অবজারভেশন ইউনিট। এছাড়া এক্স-রের জন্য দুটি এবং সিটি স্ক্যান ও এমআরআই এর জন্য একটি করে কক্ষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্টোর হিসেবে থাকছে ৮টি কক্ষ। এই তলায় থাকছে পার্কিং ব্যবস্থা। সেখানে একসঙ্গে ২০টি গাড়ি পার্কিং করা যাবে। দ্বিতীয় তলার আয়তন ২০ হাজার ২২৫ বর্গফুট। এই তলায় থাকছে একটি মাইনর ওটি। বিশেষায়িত ওটি থাকছে আরও ৪টি। এ ছাড়া ১০ শয্যার প্রি ও পোস্ট ওটিও থাকছে। ৫৬ শয্যার আইসিউই ইউনিট থাকছে দ্বিতীয় তলায়। ১৮টি কক্ষ রাখা হয়েছে আউটডোর চিকিৎসকদের জন্য। আরও থাকছে ক্যান্টিন, ল্যাব ও অফিস ব্লক। চতুর্থ তলায় থাকছে ৯৬ শয্যার সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১৮ শয্যার পেয়িং শয্যা। হাসপাতাল ভবন নির্মাণেই ব্যয় প্রায় ২৩ কোটি টাকা। এছাড়া ২ কোটি টাকা ব্যয়ে জেনারেটর ও সাব স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। শীতাপত নিয়ন্ত্রক, সোলার প্যানেল এবং অগ্নি নির্বাপন সামগ্রী বসানো হয়েছে আরও দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে। এছাড়া সাব-স্টেশন এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার নির্মাণ হয়েছে ১ কোটি টাকায়। ২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে দুটি লিফ্ট বসাতেই। হাসপাতালজুড়ে অক্সিজেন সরবরাহ লাইন বসাতে ব্যয় হয়েছে আরও দুই কোটি। ২০০ শয্যার এই হাসপাতালটি এখন চালুর অপেক্ষায়। হাসপাতালটি চালু হলে পুরো রাজশাহী অঞ্চলের শিশু চিকিৎসায় গতি আসবে।
রাসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মহোদয়ের মেয়াদকালে সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক উন্নতি ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ইপিআই কার্যক্রমে পরপর ১১ বার দেশসেরা, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে দুইবার দেশসেরা হয়েছে। ১২টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান দেওয়া হয়। মা ও শিশুদের চিকিৎসা, ডেলিভারি সেবা, ডেলিভারী পরবর্তী সেবা, চর্মরোগ, সর্দিকাশি জ¦র, হার্টের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, ২৫নং ওয়ার্ডের রাণীনগরে অবস্থিত সিটি হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা ইমার্জেন্সি সেবা, সকল আউটডোর সেবা, বিভিন্ন রোগের অপারেশন করা হয়। এখানে গরীব ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধ প্রদান করা হয়। এছাড়াও নরমাল ডেলিভারি, সকল প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা, ফিজিওথেরাপি, আলট্রাসনোগ্রাম,পরিবার পরিকল্পনাসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমার মেয়াদকালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সারাদেশে সুনাম অর্জন করেছে। আমি আগামীতে নির্বাচিত হলে স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সেগুলো হচ্ছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে যুগপোযোগী করে গড়ে তোলা হবে, নবনির্মিত শিশু হাসপাতালটি দ্রুত চালু করে শিশু চিকিৎসা উন্নত করা, সিটি হাসপাতালের আধুুনিকায়নের মাধ্যমে নগরীর পূর্বাঞ্চলের নাগরিক ও শিশুদের চিকিৎসা সেবা উন্নত করা, ওয়ার্ডভিত্তিক আরবান হেলথ কেয়ার বা নগর স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তোলা, নাগরিকগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অনলাইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া, হার্ট ফাউন্ডেশনকে একটি পূর্ণাঙ্গ হৃদরোগ হাসপাতালে উন্নীত করা, বন্ধ হয়ে যাওয়া সদর হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে উন্নীত করে পুনরায় চালু করা, রামেক হাসপাতালের আইসিইউ সুবিধা সম্প্রসারণ, আধুনিক কেবিনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সকল সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা, রামেকের কার্ডিওলজি ইউনিটের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এনজিওগ্রাম, পেসমেকার স্থাপন, কালার ড্রপলারসহ সকল আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করা, পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপন, বেসরকারি উদ্যোগে একটি স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ, রাজশাহী হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, একটি পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ স্থাপন এবং কার্ডিও ভাসকুলার ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি চিকিৎসা হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হবে।