বিশেষ প্রতিবেদক:
২০০৪ সালে নাটোরের নলডাঙ্গার রামসা কাজীপুর গ্রামের শাহপাড়াতে গামা হত্যার জেরে ৬৩টি বাড়ি ও দোকান গান পাউডার দিয়ে পোড়ানো ও লুটপাটের মামলাতে সাজা প্রাপ্ত আসামী মো: রেন্টু কে তেরো বছর পর ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রেন্টুকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে নলডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম। মো: রেন্টু রামসা কাজীপুর গ্রামের আবুল কাশেম মাস্টারের ছেলে।
২০০৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে নলডাঙ্গা থানার (নাটোর) রামশারকাজিপুর আমতলী বাজারে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কদ্দুস তালুকদার দুলুর ভাতিজা গামাকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। গামাকে হত্যার পর খুনিরা ‘সর্বহারা জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। এই ঘটনায় গামার বাবা রফিকুল ইসলাম তালুকদার ৮ ফেব্রুয়ারি নলডাঙ্গা থানায় আওয়ামী লীগ নেতা এস এম ফিরোজসহ একই পরিবারের ১৬ জনসহ মোট ২১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরবর্তীতে ৭ ও ১০ ফেব্রুয়ারী ২০০৪ তারিখে শাহ পরিবারের মোট ৪৭টি বাড়ি ও ১৬ টি দোকান গান পাউডার দিয়ে পোড়ানো ও লুটপাট করা হয়।
বাড়ি পোড়ানো ও লুটপাটের জন্য ২০০৭ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারী নলডাঙ্গা থানাতে দুটি পৃথক মামলা করেন নলডাঙ্গার বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ। সেই মামলার নম্বর জি আর নম্বর ১২/২০০৭ (ক) এবং ১৯৫৬ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ৫৬/২০০৭ (খ)। মামলাতে রুহুল কদ্দুস তালুকদার দুলু সহ মোট ১০৫ জন কে আসামী করা হয়। পুলিশ তদন্ত করে ৯৪ জনের নামে চার্জশিট দেয়।
দুটি মামলাতে আসামীদের বারো এবং আট বছর করে মোট বিশ বছরের সাজা দেয়া হয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রওনক মাহমুদ ২৩ জুলাই ২০০৭ সালে এই মামলাতে আট বছর করে আসামীদের জেল দেন এবং ২৪শে আগষ্ট ২০০৭ সালে নারী ও শিশু বিশেষ আদালত বিচারক আব্দুর রউফ আসামীদের বারো বছর করে জেল দেন। তবে এই দুই মামলাতে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে ২৩ বছরের সাজা দেয়া হয়। চার্জশিট ভুক্ত ৯৪ জন আসামীর ৯১ জনকে সাজা দেয়া হয় দুই মামলাতে। ৯০জনকে ২০ বছর করে সাজা দেয়া হয়। সাজা প্রাপ্ত সব আসামীর মধ্যে পলাতক রেন্টু ও গোলাপ। তেরো বছর পর রেন্টু ধরা পড়লেও এখনও পলাতক রয়েছে গোলাম।
মামলার বাদি আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, গামা হত্যার মিথ্যা মামলাতে পরিবারের সবাই পালিয়ে ছিলাম। এই সুযোগে দুলু বাহিনী ও বাংলা ভাই এলাকায় তান্ডব চালায়। দুলু বাহিনীর জন্য আমরা এলাকাতে ফিরতে পারিনি। জেল জুলুম অত্যাচার কি করেনি, সব করেছে। গান পাউডার দিয়ে বাড়ি ঘর, দোকান পাট পুড়িয়ে লুটপাট করেছে। প্রায় তিন বছরের বেশি সময় চেষ্টা করেও মামলা করতে পারিনি। এরপর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি ওদের নামে মামলা করি এবং বিচার পায়। সাজাপ্রাপ্ত আসমী রেন্টু একযুগের বেশি সময় পালিয়ে ছিল। পুলিশ গোপন সংবাদ পেয়ে রেন্টুকে গ্রেফতার করেছে। এর থেকে আবারও প্রমাণ হলো পাপ করলে তার শাস্তি এক দিন না একদিন পেতেই হবে।