নিউজ ডেস্ক: সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের আন্দোলনের সময়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্যতম যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে আলোচনায় আসেন নুরুল হক নুর। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন নুর। পরিচ্ছন্ন ছাত্র রাজনীতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সকলের নজর কাড়তে সমর্থ হন নুর। কিন্তু সেই নুর এবার দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে নতুন সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন।
জানা গেছে, খালার পারিবারিক ব্যবসার নামে প্রবাসী একজন বাংলাদেশির কাছে কমিশন ও তদবির করে অনৈতিক উপায়ে অর্থ দাবি করেন। ১৩ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টির আড়ালে আর্থিক সুবিধা নিতে তিনি সেই প্রবাসীকে বিশেষ অনুরোধও করেন তিনি। পরবর্তীতে ভিপি নুরের সেই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে তিনি বেকায়দায় পড়েন এবং এটির অপব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। নিজেকে গরীব ঘরের সন্তান হিসেবে দাবি করলেও কিভাবে এত বড় অংক নিয়ে লেনদেন করার চেষ্টা করলেন বা হঠাৎ কেন তিনি বিত্তশালীদের পক্ষে তদবির করার চেষ্টা করছেন, সেটি নিয়ে নাগরিক সমাজে শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার বৃহত্তর চর কাজল ইউনিয়ন বর্তমান চরবিশ্বাস ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন নুর। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় ছোট থেকেই অর্থ-বিত্তের প্রতি বিশেষ এক ধরণের আকর্ষণ ছিলো তার। নুরের বাবা ছিলেন সামান্য একজন চা দোকানদার। বাবার সামর্থ্য না থাকায় গাজীপুরে এক আত্মীয় বাড়িতে জায়গির থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরবর্তীতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় আরেক কাছের আত্মীয়ের বাসায় থেকে তাদের সহায়তায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। আর্থিক দৈন্যদশা ও অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে অন্যের সহযোগিতা নিতে হতো নুরকে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত হওয়ার পর থেকে হঠাৎ আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে ওঠেন তিনি। জানা গেছে, কোটা সংস্কারের আড়ালে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিভিন্ন মহলের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধাও আদায় করেছেন নুর। পরবর্তীতে ডাকসু ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নুরের চলাফেরা, জীবনযাপনে হঠাৎ পরিবর্তন ঘটে। রাজধানীর দামি এলাকায় ব্যয়বহুল ফ্লাটে বসবাস, বিভিন্ন দামি হোটেলে উঠ-বস নিয়ে খোদ তার অনুসারীরা বিস্মিত। একাধিক সূত্র বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুরোধের আড়ালে কমিশনে ভর্তি বাণিজ্য, শিক্ষার্থী বদলি, কমিশনের বিনিময়ে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পেতে লবিং বাণিজ্য ও সরকারবিরোধী মহলের সাথে আঁতাত করে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন নুর। নুরের হঠাৎ চাকচিক্যময় ও ব্যয়বহুল জীবনযাপন নিয়ে তার অনুসারী ও বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হলেও নুর এসব সমালোচনা এড়িয়ে দুর্নীতির চাদরে ঢেকে রেখেছেন নিজেকে।
ডাকসু ভিপির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নুরের মতো নেতারা দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে প্রতারণাপূর্ণ রাজনীতির উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। ছাত্র সমাজে রাজনীতিকে আরো গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় করতে হলে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করছেন রাজনীতি সচেতনরা।