নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হবে। এ মাসের ২১-২৫ তারিখের মধ্যে দেশে আসবে করোনার টিকার প্রথম চালান, ২৬ জানুয়ারি শুরু হবে নিবন্ধন। টিকা নিতে হলে গ্রহীতাকে একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। টিকাগ্রহীতার মোবাইলে জানানো হবে টিকা দেওয়ার স্থান ও সময়। টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা মাথায় রেখে উপজেলা, জেলা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কেন্দ্রভিত্তিক মেডিকেল টিম থাকবে।
টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য ডা. শামসুল হক বলেন, ‘করোনার টিকা নেওয়ার আগে একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। কারণ, যাকে আমরা টিকা দিচ্ছি, তার একটা অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। আমরা একটি সম্মতিপত্র তৈরি করেছি। সেখানে রেজিস্ট্রেশন নম্বর, তারিখ, পরিচয়পত্র ও নাম থাকবে। তিনি আরও বলেন, সম্মতিপত্রে লেখা থাকবে ‘করোনার টিকা সম্পর্কে আমাকে অনলাইনে এবং সামনাসামনি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই টিকা গ্রহণের সময়, অথবা পরে যে কোনো অসুস্থতা, আঘাত বা ক্ষতি হলে, তার দায়ভার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা সরকারের নয়। আমি সম্মতি দিচ্ছি যে, টিকা গ্রহণ ও এর প্রভাব সম্পর্কিত তথ্যের প্রয়োজন হলে আমি তা প্রদান করব। জানা মতে, আমার ওষুধজনিত কোনো অ্যালার্জি নেই’। এ বিষয়টিও সম্মতিপত্রে উল্লেখ করতে হবে জানিয়ে ডা. শামসুল হক বলেন, ‘এটা খুবই জরুরি। এ বিষয়টি যদি তিনি না জানান, তাহলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে, তখন আমরাও বুঝতে পারব না। টিকাগ্রহীতাকে আরও সম্মতি দিতে হবে যে, ‘টিকাদান পরবর্তী প্রতিবেদন, অথবা গবেষণাপত্র তৈরির বিষয়ে অনুমতি দিলাম’। এই সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে এবং এটা আমাদের কাছে থাকবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সরাসরি যুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথম ধাপের টিকার আওতায় আসবেন। তবে তাদেরও নিবন্ধন করতে হবে। ২৬ জানুয়ারি থেকে নিবন্ধন শুরু হবে। নিবন্ধন করার পর এসএমএসের মাধ্যমে টিকা নেওয়ার দিন ও সময় জানানো হবে। তবে ১৮ বছরের নিচে ও প্রসূতিরা টিকার আওতায় আসবে না। প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে দুজন করে নার্স ও চারজন স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার ২ থেকে ৩ শতাংশের মতো। তবে যে কোনো টিকার ক্ষেত্রেই গ্রহণকারী ব্যক্তির স্বল্প থেকে মধ্যম, কিছু ক্ষেত্রে প্রবল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এনাফাইলিক্সিস বলে একটা কথা রয়েছে। এটি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া, যা সামান্য কিছু ক্ষেত্রে হতে পারে। এই এনাফাইলিক্সিসের আবার বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। ফলে যারা করোনার টিকা দেবেন, টিকাদান কেন্দ্রে যারা থাকবেন, তাদের এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করা হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা মাথায় রেখে উপজেলা, জেলা এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কেন্দ্রভিত্তিক মেডিকেল টিম থাকবে। এনাফাইলিক্সিসের জন্য কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ থাকবে। এ ছাড়া তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে চিকিৎসকরা যাতে টিকাদান কেন্দ্র বা হাসপাতালে চলে আসেন, সে ব্যবস্থাও থাকবে। উপজেলা হাসপাতালেও যদি এমন দুর্ঘটনা ঘটে, সে বিষয়টি ভেবে সেখানে প্রস্তুতি নেওয়া থাকবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, টিকা কার্যক্রমের সফলতা নির্ভর করে প্রক্রিয়াটি কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হলো, তার ওপর। টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে যাতে বঞ্চনার অনুভূতি বা বিভক্তি সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে, সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। তাহলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।