নিউজ ডেস্ক:
দুই দিনব্যাপী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরুর আগের দিন আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈঠকে বসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এবারের বৈঠক হায়দরাবাদ হাউস অথবা সাউথ ব্লকে নয়, বঙ্গবন্ধুকন্যার সঙ্গে মোদি বৈঠক করবেন নিজের বাসভবনে। বৈঠকটি হবে নরেন্দ্র মোদির বাসভবন ৭ লোককল্যাণ মার্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে ভারতের সঙ্গে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হচ্ছে। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে দুই নেতার মধ্যে। বৈঠকে সমঝোতা স্মারক সই হলেও শেখ হাসিনাকে আন্তরিকতার বার্তা দিতেই এই গৃহঅভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন শেখ হাসিনার সফরসূচি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সংবাদ সম্মেলনে ড. আব্দুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। এ সমঝোতা স্মারকগুলো হলো কৃষি গবেষণা খাতে সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও দুই দেশের সাধারণ নাগরিকদের লেনদেন সহজীকরণ।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পর্যায়ে সুগভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, বিভিন্ন সময়ে পারস্পরিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমমনা অবস্থান দুই দেশের সম্পর্ককে গভীরতর করেছে। সম্প্রতি বছরগুলোয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক অভাবনীয় গতি লাভ করেছে যা ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। একইভাবে, বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, বাংলাদেশকে অন্যতম বন্ধুপ্রতিম এবং সহযোগী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে, যা জি-২০ তে বাংলাদেশের ‘অতিথি রাষ্ট্র’ হিসেবে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।
এদিকে দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্র দাবি করেছে, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ইস্যু নিয়ে এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকে কানেক্টিভিটি, তিস্তার পানি বণ্টন, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো আলোচনায় অগ্রাধিকার পেতে পারে। তবে সব ছাপিয়ে বৈঠকে প্রাধান্য পেতে পারে আগামী নির্বাচন।
জাতীয় নির্বাচন খুব কাছাকাছি বিধায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ভারত সফর খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বর্তমান মেয়াদে এই দুই নেতার এটিই শেষ বৈঠক।
আগামীকাল শনিবার সকাল থেকে শুরু হবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। বাংলাদেশ এই গোষ্ঠীর সদস্য নয়। কিন্তু ভারত জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব পাওয়ার পরই মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশকেই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত, যা দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছানোর দৃষ্টান্ত বলেই ধরছে ভারতের কূটনৈতিক মহল।
জি-২০ সম্মেলনে গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গতকারণেই গ্লোবাল সাউথের সমস্যাগুলো সম্মেলনে তুলে ধরবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধেরও আহ্বান জানাবেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, শেখ হাসিনা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ও সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে সেখানে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক হবে কিনা সে বিষয়টি এখনো জানানো হয়নি।
যেহেতু একই টেবিলের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন দুই নেতা তাই পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের সুযোগ থাকছে। গত ২৪ মে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভিসানীতি ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এটাই হবে প্রথম সাক্ষাৎ।
জানা গেছে, নির্ধারিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থের অন্যান্য ইস্যুসহ বাংলাদেশ তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি উত্থাপন করবে। এ ছাড়া ভারতের দেয়া ঋণের চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ এই বৈঠকে ভারতের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সাতটি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা চাইবে। ভারতের নিশ্চয়তা চাইবে সংকট মুহূর্তেও এই সাত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সেপা) নিয়েও আলোচনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দেবেন জি-২০ সম্মেলনের নৈশভোজে। ভারতীয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মুর দেওয়া এই নৈশভোজে জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশে নেবেন। ভারতের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে ওই নৈশভোজে অংশ নেবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এই অনুষ্ঠানের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতারও বৈঠক হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় একই সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অংশগ্রহণ এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বৈঠক প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দুই পক্ষ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবে। তবে সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে বৃহত্তর সম্পর্কের পুরো ধারাটি আলোচনায় নাও আসতে পারে। তবে দুই দেশ একসঙ্গে অনেক প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত এবং সেগুলো বাস্তবায়নের সমস্যা আসতে পারে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। উচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে তিস্তা নদীর হিস্যা আলোচনা করে এসেছি বা রেখেছি। এবারও আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি উপস্থাপন করবেন। তিস্তা পানি বণ্টন যে ইস্যু রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে তা তুলবেন। পাশাপাশি অন্য ইস্যুও তো রয়েছে।
গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি ২০২৬ সালে শেষ হবে উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কাছে তিস্তার পানি বণ্টনের ইস্যু আছে যা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী উত্থাপন করবেন। আমাদের অন্যান্য সমস্যা আছে। আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত সব সময়ই সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। আমরা এটাকে সব সময় আলোচনার সূচিতে রাখতাম। এবারও আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলবেন। বাংলাদেশ মনে করে দুই দেশের পানি বণ্টন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। কারণ দুই দেশ পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে কাজ করতে ‘মানসিকভাবে একমত’।
ড. মোমেন বলেন, জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বিগত ১৪ বছরে সরকারের অভাবনীয় সাফল্যের স্বীকৃতি। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্যসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার দুপুরে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার বৈঠক করবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গেও। ফরাসি প্রেসিডেন্ট দিল্লি থেকেই চলে আসবেন ঢাকায়। এই কারণে সম্মেলন শেষ করেই দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রক্সি ওয়ারে যুক্ত হবে না বাংলাদেশ ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, আমরা সব সময়েই শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই। তাই কোনো ধরনের প্রক্সি ওয়ারে যুক্ত হবে না বাংলাদেশ।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, আমরা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে বিশ্বাসী। যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে, কোনো পরামর্শ দিলে আমরা তাদের স্বাগত জানাই। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরা কোনো ধরনের চাপে নেই। যারা চাপে আছে, তারা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। আর নির্বাচন নিয়ে কারও মাতব্বরি আমরা সহ্য করব না।
ড. মোমেন জানান, ৯ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে অংশ নেবেন। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’-এর আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন।
অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইউরোপে যুদ্ধের ফলে জ্বালানি-খাদ্যপণ্য-সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার মতো যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তা মোকাবিলার বিষয়ে মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরবেন।
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের অর্জিত অভাবনীয় সাফল্যের অভিজ্ঞতা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্ব নেতাদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
ড. মোমেন আরও জানান, ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এ দুটি অধিবেশনের মাঝে সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশের একাধিক নেতার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। জি-২০ সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিন ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন।
আরও দেখুন
বিএনপির সাবেক এমপি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে হামলা-দখলের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ,,,,,,,,,,চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক …