সুখময় বিপলু
আরেকটু মনোযোগী হলে বা তলিয়ে দেখে বিবেচনা করলে কৃষকের জন্য ঘোষিত ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা গরিব কৃষক-বর্গাচাষী-ভূমিহীন-ক্ষেতমজুরদের অনুকূলে পরিবর্তন-সংশোধন করা সম্ভব এবং তা একান্ত জরুরি। প্রায় মাসখানেক আগে কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে সরকার ঘোষিত ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজে ও নীতিমালায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।
১৫ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিক জমির দলিল বন্ধক রেখে আড়াই লাখ (২,৫০,০০০/-) টাকা ঋণ নিতে পারবেন আর কৃষিপণ্য কিনে নিয়ে বিক্রয়কারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাবেন ৫ কোটি টাকা ঋণ। কেমন হলো ব্যাপারটা! আবার বর্গাচাষী, ভূমিহীন, জমি লীজ নিয়ে চাষাবাদকারী তাদের চুক্তিপত্র বন্ধক দিয়ে তবে ঋণ পাবেন। কিন্তু তাদের তো চুক্তিপত্র থাকে না। কেননা, সাধারণত রাজস্ব ফাঁকি দিতেই হয়তো ভূমির মালিক কোন লিখিত চুক্তিপত্র না করেই মৌখিকভাবে জমি বর্গা দেয়। যেমন অনেক বাড়ির মালিকও লিখিত বাড়ি ভাড়া চুক্তি ছাড়াই মৌখিকভাবে বাড়ি ভাড়া দেয়। গ্রামাঞ্চলে মৌখিক কথাতেই জমি বর্গা নিয়ে চাষী ফসল ফলিয়ে বর্গাংশ দেয় মালিককে। এভাবেই চলে আসছে দীর্ঘকাল যাবৎ। ফলে তাদের কাছে লিখিত চুক্তিপত্র না থাকার কারণে তারা তো সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ নিতে পারবে না। তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কৃষি ও কৃষক বাঁচানোর যে চাওয়া, সেটা তো কাজে লাগবে না। বরং অধিকতর লাভবান হবে মধ্যস্বত্বভোগী-মিল-চাতাল মালিক আর ফড়িয়া।
কাজেই সত্যিকার অর্থে কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে গেলে গরিব চাষী-প্রান্তিক চাষী-বর্গাচাষী-ভুমিহীন-ক্ষেতমজুরদের অনুকূলে বর্ণিত ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজে ও নীতিমালায় জরুরিভাবে পরিবর্তন-সংশোধন আনা একান্ত অপরিহার্য নয় কি?
আরো ভাল হয়, যদি ঐসব চাষীদের জন্য ঋণ প্রণোদনার পরিবর্তে সরকারিভাবে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয় এবং নির্মম বাস্তবতায় সময়ের দাবি মতে সেটাই হবে কৃষি-কৃষক-দেশ বাঁচাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
তো বিষয়টির প্রতি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মানবিক দৃষ্টি আকর্ষিত হবে কি? অন্যথায় সঙ্গত কারণেই ভিন্ন প্রশ্ন থেকেই যাবে এভাবে- “দেশ ও জাতির জীবন প্রবাহ বলা হয় বলো কাকে, মিলের মালিক-চাতাল মালিক নাকি আরো ফড়িয়াকে!?”
সুখময় বিপলু: সাংস্কৃতিককর্মী, আইনজীবী