নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার। সব মানুষের উন্নয়নই হলো বর্তমান সরকারের দর্শন। দেশব্যাপী জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন থেকে শুরু করে ডিজিটালাইজেশন, সবই সম্ভব হয়েছে আমাদের সরকারের উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ সরকারের কল্যাণেই দেশে সংঘটিত হয়েছে আমূল পরিবর্তন। সব মানুষের উন্নয়নের মূলমন্ত্রকে ধারণ করে ২০২১ সালের মধ্যে ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ’ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ‘উন্নত বাংলাদেশ’ গঠনে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত মহিলা আসনে বেগম সুলতানা নাদিরার প্রশ্নের লিখিত জবাবে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক সুবিধা সম্প্রসারণে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী, কার্যকর ও স্বাবলম্বী করা বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। গণতন্ত্র ও স্থানীয় সরকারের দাবি সবসময়ই পরস্পরকে গতিশীল করেছে। গণতান্ত্রিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে একটি স্থানীয় সংস্থার প্রতিনিধি জনগণের স্বার্থকে তুলে ধরতে পারে। বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে যে, সংবিধানের আলোকে সব অঞ্চলে গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা আবশ্যক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ অনুযায়ী স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী, কার্যকর ও স্বাবলম্বী করার বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১৬ অনুযায়ী নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক সুবিধা সম্প্রসারণে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, গ্রামের দিকে নজর দিতে হবে। কেননা গ্রামই সব উন্নয়নের মূল কেন্দ্র। গ্রামের উন্নয়ন আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যখন বেগবান হবে তখন গোটা বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে সম্মুখপানে।
প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে দেশের প্রতিটি গ্রামে উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্মত শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রæতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের স¤প্রসারণের মাধ্যমে আধুনিক শহরের সব সুবিধাদি পৌঁছে দেয়ার ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে সরকার। এছাড়া সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের ৩-৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণের ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদসহ পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে।
সংসদ নেতা বলেন, বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে অধিকতর আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা উন্নত ও প্রসারিত করার জন্য সরকারের সাহায্য ও উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরকে (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন) আরও শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করে অধিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিবিড় ভ‚মিকা পালনে সক্ষম, স্বীয় আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজস্ব ব্যয় নির্বাহ করার সুযোগ সৃষ্টি, নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে কার্যকর অবদান রাখা এবং আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয় সরকার সংশ্লিষ্ট আইনগুলোর পর্যালোচনাপূর্বক যুগোপযোগী করে সংশোধনের প্রস্তাব প্রণয়ন, সংস্কারের উদ্দেশ্যে এর আগে গঠিত বিভিন্ন কমিশন কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের জন্য স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব ইতোমধ্যে নীতিগত সম্মতি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এই কমিশনের গঠন ও কর্মপরিধি প্রণয়নের কাজ চলছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় সরকারের অন্যতম প্রধান ও ভিত্তিস্তর। ইউনিয়ন পরিষদকে আরও শক্তিশালী, স্বাবলম্বী, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও নারীর ক্ষমতায়নসহ মানুষের জীবনযাত্রার সার্বিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত উদ্যোগসমূহ হলো- ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধারণ জনগণকে সব ধরনের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে একটি ছাতা পরিষেবা প্রদান ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার চালুসহ জুলাই ২০১১ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত মেয়াদে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) চলমান। যার মাধ্যমে ১ম পর্যায়ে ২ হাজার ৪০৭টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৮৭টি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বর্তমানে ১৪৪টি ভবন নির্মাণকাজ চলমান। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন আরও আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ প্রকল্প (৩য় পর্যায়) চলমান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমে জনঅংশগ্রহণ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য ৮ বিভাগের ৯ জেলার (ফরিদপুর, চাঁদপুর, রাজশাহী, খুলনা, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ, রংপুর, নেত্রকোনা ও কক্সবাজার) পিছিয়ে পড়া ১৮টি উপজেলা এবং ২৫১টি ইউনিয়ন পরিষদে জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত মেয়াদে কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার (ইএএলজি) প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম নাজমা আকতারের প্রশ্নের লিখিত জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকার টেকনিক্যাল মোড় থেকে মিরপুর-১ পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটিতে শিক্ষার্থী ও পার্শ¦বর্তী এলাকার জনসাধারণের নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য সরকারী বাঙলা কলেজ সংলগ্ন একটি ফুটওভার ব্রিজ বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া প্রয়াত স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হকের চাহিদার আলোকে মডেল একাডেমি স্কুল ও বিএডিসি স্কুল সংলগ্ন প্রধান সড়কে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, যা এ মাসের মধ্যে সমাপ্ত হবে।
নবেম্বরে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন ॥ সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেনের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে ২০২১ সালের নবেম্বরে একটি ‘আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন’ আয়োজন করার প্রস্তাব ইতোমধ্যেই সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এ সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে সভাপতি এবং অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদকে আহŸায়ক করে ৪২ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগামী নবেম্বরের ৪-৫ তারিখে ঢাকায় এই সম্মেলন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবতার কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান ব্যাপকভাবে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস।
সংসদ নেতা জানান, অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার মহান ব্রতে নিয়োজিত বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীগণের উপস্থিতিতে ও অংশগ্রহণে একাধিক প্যানেল আরোচনা করা হবে। এছাড়াও এই সম্মেলনের মাধ্যমে ‘ঢাকা শান্তি ঘোষণা’ নামক একটি ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হবে।
অপর প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘বঙ্গবন্ধু শান্তি পুরস্কার’ প্রদানের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি।