সোমবার , নভেম্বর ১৮ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / সব বাধা পেরিয়ে আজ চালু হচ্ছে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’

সব বাধা পেরিয়ে আজ চালু হচ্ছে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’

নিউজ ডেস্ক:

  • প্রাথমিকভাবে ৫০ বাস থাকছে

নগরবাসীর দীর্ঘদিনের কাক্সিক্ষত চাঁদাবাজমুক্ত ও সুশৃঙ্খল পরিবহন সার্ভিস ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ চালু হচ্ছে আজ রবিবার। বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত চলবে বিশেষ পরিবহন। প্রতিটি বাসের গায়ে লেখা থকবে- ঢাকা নগর পরিবহন। উদ্বোধনী দিনে ৫০টি বাস দিয়েই চলবে এর কার্যক্রম। এর মধ্যে বিআরটিসির ৩০টি ও ট্রান্সসিলভার থাকবে ২০টি বাস। এ রুটের বাসগুলো হবে সবুজ রঙের এবং বেশ অভিজাত শ্রেণীর। উন্নত বিশ্বের উন্নত সিটি সার্ভিসের আদলেই আপাতত এই একটি রুটে চালু করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে গোটা রাজধানীতেই চালু করা হবে রেশনালাইজেশনের ঢাকা নগর পরিবহন। প্রায় ২১ কিলোমিটারের এই রুটে বাসভাড়া হবে প্রতি কিলোমিটার ২ টাকা ১৫ পয়সা। প্রথম দফায় ৫০টি দিয়ে শুরু করা হলেও শীঘ্রই আরও ৫০টি বাস নামানো হবে। এভাবে দুদফায় মোট ১০০টি বাস দিয়ে পরিচালিত হবে এই কার্যক্রম। ঢাকার দুই মেয়র আশাবাদী, ঢাকা নগর পরিবহন চালু করা হলে অবশ্যই রাজধানীর পাবলিক পরিবহনে শৃঙ্খলা যেমন ফিরবে তেমনি যাত্রী সাধারণের সেবাও বাড়বে। 

জানা গেছে, ইতোমধ্যেই এ কার্যক্রমের জন্য ৭০ জন চালক ও কাউন্টারম্যানকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের ডিটিসিএর সভাকক্ষে দিনব্যাপী ওরিয়েন্টেশন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা রহমান এ ওরিয়েন্টেশন প্রশিক্ষণের উদ্বোধন ও সমাপন করেন। এতে বাসচালক ও কাউন্টারম্যান মিলিয়ে প্রশিক্ষণে মোট ৭০ জন অংশ নেন। চারটি সেশনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম, গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা ও দুর্ঘটনারোধে করণীয় ট্রাফিক সাইন, সিগন্যাল ও মার্কিং পরিচিতি এবং সড়ক পরিবহন সংক্রান্ত আইন, নীতিমালা ও বিধিবিধান সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থী চালকদের ধারণা দেয়া হয়। এ ছাড়াও ২২ জন কাউন্টারম্যানকে আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

এদিকে, বাস রেশনালাইজেশন পদ্বতিতে বেশ নাখোশ ঢাকার পরিবহন মালিক সমিতি। এতে পরিবহন সেক্টরে তাদের প্রভাব খর্ব হবে। প্রাথমিকভাবে যদি এই প্রকল্প সফল হয়, তাহলে আগামী দুবছরের মধ্যেই গোটা রাজধানীতে এ কর্মসূচীর আওতায় আনা হবে। তখন তাদের দৈনিক লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করার সুযোগ থাকবে না। উল্লেখ্য, বর্তমানে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি রাজধানীতে চলাচলকারী সবগুলো টার্মিনাল থেকে প্রতিটি বাসের বিপরীতে মোটা অঙ্কের দৈনিক চাঁদা তুলে থাকে। মালিক ও শ্রমিক সমিতির নামেই এ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সায়েদাবাদ ও গাবতলী টার্মিনালের একাধিক মালিক দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীর টার্মিনালগুলো এবং অন্যান্য ছাউনি থেকে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের সংখ্যা কমপক্ষে ১০ হাজার। দৈনিক প্রতিটি গাড়ি থেকে ন্যূনতম ১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হলেও সেটা দশ লাখে গিয়ে ঠেকে। পরিবহন খাত যেন তাদের কাছে কাঁচা সোনার খনি। বাস রেশনালাইজেশান বা সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে কোম্পানির মাধ্যমে বাসগুলো চালু করা হলে চাঁদাবাজির এমন স্বর্গীয় খনি চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণেই পরিবহন মালিকদের অসহযোগিতার দরুন ঢাকা নগর পরিবহন চালু করতে এত সময় লাগছে। পর পর বেশ কটা তারিখ পেছাতে হয়েছে। কিন্তু ঢাকার দুই মেয়র জনগণের প্রতি দেয়া ওয়াদা রক্ষায় দৃঢ় মনোবল নিয়েই আগামীকাল চালু করতে যাচ্ছে বহুল প্রতিক্ষীত এই কোম্পানি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে যাওয়া রুটে যে কটি বাসের রুট পারমিট আছে, সেগুলোকে এই গ্রীন ক্লাস্টারের অন্য রুটে সমন্বয় করে দেয়া হবে। এতে সমন্বয় কিছুটা সময় লাগবে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে এই সমন্বয়টা করে দেয়া হবে। এ বিষয়ে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘একটা জিনিস যখন সূচনা করছি, তখন কিছু ট্রায়াল হবে, কিছু ভুল হবে, কিছু ব্যাঘাত হচ্ছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ এগুলোকে সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। আগামী দুই মাসের মধ্যেই রুটের সকল নতুন গাড়ি চলে আসবে। গ্রীন ক্লাস্টারের অধীনে সব যাত্রাপথেই পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন নেয়া হবে। যাচাই-বাছাই করে সেগুলোকে অনুমোদন দেয়া হবে। নতুন যে বাসগুলো আসছে, বিআরটিএ যথারীতি সেগুলোর নিবন্ধন সম্পন্ন করবে। এভাবেই সফলতার মুখ দেখবে বাস রেশনালাইজেশন কার্যক্রম।

জানা গেছে, প্রথম দিন থেকেই এ রুটের বাসগুলোতে ই-টিকেটিং সিস্টেম চালু করা হবে। বাস-বে, যাত্রী ছাউনিগুলোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি বাসের ড্রাইভার-স্টাফদের নির্দিষ্ট পোশাক থাকবে, সেই সঙ্গে তাদের আইডি কার্ড গলায় ঝোলানো অবস্থায় থাকবে। যে সব বাসের রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট আছে, সে সব বাসই কেবল এ রুটে বাস পরিচালনা করতে পারবে।

জানা গেছে, এ রুটের বাসগুলো হবে সবুজ রঙের ও বেশ অভিজাত। প্রতিটি বাসে থাকবে ওয়াইফাই ব্যবস্থা। আরামদায়ক সিট। প্রথম দিন থেকেই বাসগুলোতে ই-টিকেটিং সিস্টেম চালু করা হবে। গতকাল শুক্রবার পরিদর্শনে দেখা যায়- বাস-বে, যাত্রী ছাউনিগুলোর কাজ শেষ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি বাসের ড্রাইভার-স্টাফদের নির্দিষ্ট পোশাক থাকবে। সেই সঙ্গে তাদের আইডি কার্ড গলায় ঝোলানো অবস্থায় থাকবে। যে সব বাসের রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট আছে, সে সব বাসই কেবল এ রুটে বাস চলাচলের সুযোগ পাবে। এই রুটে ১৫৭টি বাস পরিচালনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। ঢাকা দক্ষিণ এই রুটে ট্রান্স সিলভা ৩৮টি, ইকবাল এন্টারপ্রাইজ ২টি, এমএল লাভলি পরিবহন ৪টি, রজনীগন্ধা পরিবহন ১টি, মোস্তফা হেলাল কবির ৬টি, মোহাম্মদ ওলিউল্লাহ ১টি, জাহান এন্টারপ্রাইজ ১০০টি এবং এইচ আর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি ৫টি বাস পরিচালনার আগ্রহ দেখিয়েছে। ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসএ) কার্যালয়ে তারা আবেদন জমা দেন। সেগুলোর অনুমোদনও দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বাস রেশনালাইজেশন কার্যক্রম চালুর উদ্যোগে সূচনা থেকেই ঘোর আপত্তি ছিল পরিবহন মালিক সমিতির। যে কারণে প্রথম দুদফা তারিখ ঘোষণা করেও চালু করতে পাারেনি সিটি কর্পোরেশন। সর্বশেষ গত ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ২০তম সভায় চূড়ান্ত করা হয় যে কোন মূল্যে ২৬ ডিসেম্বর চালু করা হবে। এতে মালিক সমিতি আর কোন অজুহাত দেখাতে পারেনি। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন- দুই মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলামসহ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম, রাজউক চেয়াররম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মদ, ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এসএম সালেহ উদ্দিন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, এটা পাইলট প্রজেক্ট। সাফল্য আসলে পর্যায়ক্রমে গোটা রাজধানীতেই এ পদ্ধতিতে বাস চালু করা হবে। তখন আশা করা যায় সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত কতকগুলো বাসস্টপেজ থাকবে। এ রুট দিয়ে অন্য কোন কোম্পানির বাস চলাচলের সুযোগ পাবে না। অবশ্য কয়েকটি কমন স্টপেজ রাখার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বিআরটিএ কিভাবে ঢাকা নগর পরিবহনের সেবা দেবে জানতে চাইলে নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, সড়ক নিরাপত্তায় অন্যখানে দায়িত্ব পালন করে- যেমন রুট পারমিট চেক করা, গাড়ির ফিটনেস, চালকের লাইসেন্স দেখা, বাসের গতি পর্যবেক্ষণ করাসহ অন্যান্য কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য সক্রিয় থাকবে বিআরটিএ।

জানতে চাইলে মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা যারা এই শহরে বাস করি তাদের সবার যেমন নিরাপদ সড়ক চলাচলেও অধিকার আছে, তেমনি নগরের প্রতিও তাদের দায়িত্ব আছে। কেউ হরতাল ডাকবে, ধর্মঘট ডাকবে সেটা কাম্য নয়। বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম শুরু করতে যেটুকু দেরি হয়েছে- সেটা কিন্তু বাস মালিকদের জন্যই। তারা বাস দেব দেব বলে দেরি করেছেন। কিন্তু আমরা যখন পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাস চাইলাম তখন সেই সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। এই বার্তাটুকু ওনারা পেয়েছেন। আমরা দুই মেয়র একসঙ্গে কাজ করছি এবং আমরা বিশ্বাস করি, তারা সে ধরনের কোন অসহযোগিতা করবেন না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাইলট প্রজেক্ট চালুর পর সফলতা যত বেশি আসবে, তত দ্রুতই বাকি এলাকায়ও এই কার্যক্রম চালু করা হবে। নগরবাসীর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার জন্যই কাজ করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাদিকুর রহমান হিরু বাস রেশনাইলেজশানকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ঢাকা নগর পরিবহন যে পদ্বতিতে বাস চালু করা হবে- সেটা ছিল দীর্ঘদিনের একটা কাক্সিক্ষত বিষয়। যাত্রী সাধারণ এমনকি নির্যাতিত শ্রমিকরাও চেয়েছিল এমন একটি সুশৃ্ঙ্খৃল পদ্ধতিতে বাস চালানো। কারণ, এতে শ্রমিকরা ন্যূনতম মর্যাদা ও সুবিধা পাবেন। যেমন এখন শ্রমিকদের যেভাবে ১৭ ঘণ্টা খাটানো হয়, তখন মাত্র ৮ ঘণ্টা ডিউটি করেই বাসায় ফিরতে পারবে। অমানুষিক হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম থেকে তারা রেহাই পাবেন। কাজেই আমরা চাই এভাবেই গোটা রাজধানীতে বাস চলাচল করুক।

উল্লেখ্য, আজ বাস্তবায়িত হওয়া এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা ও স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তিনিই রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে বাস চালানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ২০১৫ সালে। পরে ২০১৭ সালের ৩০ নবেম্বর আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ততকালীন মেয়র মোহম্মাদ সাঈদ খোকন। সে সময় থেকে তিনি এ বিষয়ক কমিটির ১১টি সভা করেন। এরপর নতুন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস পরিহবন খাতের চাঁদাবাজ মাফিয়াদের সব হুমকি ও বাধাবিপত্তি পেরিয়ে বেশ কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে আজকের এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

আরও দেখুন

নাটোরের লালপুরে ঠিকাদারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক লালপুর,,,,,,,,,, নাটোরের লালপুরে মজিবর রহমান (৫৫) নামে এক ঠিকাদারের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। …