রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪
নীড় পাতা / টপ স্টোরিজ / সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে -সুমনা আহমেদ

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে -সুমনা আহমেদ

সুমনা আহমেদ

সারা বিশ্ব জুড়ে হাহাকার। কি যে দ্রুত গতিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। এই মূহুর্তে সারা বিশ্বে এই ভাইরাসে ২৩০,৬৫০ জন আক্রান্ত এবং ৯৩৯০ জন অলরেডি মৃত্যুবরন করেছে। এই নাম্বারটি আগামি কাল আবার পরিবর্তিত হবে। ভাইরাসটি বাড়ছে exponentially।

ঠিক এই হারে বাড়তে থাকলে আমেরিকার CDC (Center for Disease Control) এর অনুমান অনুযায়ী, এই মহামারীতে ১৬০ মিলিয়ন থেকে ২১৪ মিলিয়ন মানুষ শুধুমাত্র আমেরিকতেই আক্রান্ত হতে পারে আর ২০০,০০০ থেকে ১.৭ মিলিয়ন মারা যেতে পারে।

CDC যেটা বলছে তাতে এই exponential curve যদি এভাবেই বাড়তে থাকে তাহলে চিকিৎসার অভাবেই অনেক মানুষ মারা যাবে। একমাত্র উপায় ‘Social distance’ যদি মেনে চলা যায় তবে এই Curve টাকে কিছুটা হলেও flatten করা সম্ভব। Flatten হলে সুবিধা এই যে প্রতিদিন বিশাল জনগোষ্ঠি একসাথে অসুস্থ হবেনা। ধীর গতিতে যদি ছড়ায় তাহলে চিকিৎসা সেবা দেয়াটা যেকোন দেশের জন্য কিছুটা হলেও সহজ হবে। এই মূহুর্তে পৃথিবীতে একটি দেশ ও নাই যাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমান medical equipment আছে, যে তারা তাদের দেশের করোনা আক্রান্ত সবাইকে স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারবে।

বাংলাদেশের মত ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশে যদি exponentially করোনা ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে তবে এর ভয়াবহতা কি হবে ভাবতেও শিউরে উঠি। সারাবিশ্বে সবাই একই কথাই বলছ— social distancing. বাংলাদেশে কি Social distancing কি করা সম্ভব? যেখানে সারা বিশ্বে করোনা থেকে নিরাপদ থাকার জন্যে ১০ জনের বেশী একসঙ্গে না হওয়ার জন্যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দোয়া হচ্ছে, সেখানে দুদিন আগে বাংলাদেশে কয়েক হাজার মানুষ একত্র হয়ে দোয়া পড়েছে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাবার জন্যে! বিদেশ ফেরত যাদেরকে home quarantine এ রাখা হয়েছে তাদের অনেকেই রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ignorant মানুষগুলোকে কিভাবে বোঝাবেন? তার উপরে আছে একদল ধর্মব্যবসায়ী, যারা এই সহজ সরল অসহায় মানুষগুলোর সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে কি ভয়ঙ্কর বিপদে ফেলছে। এদেরকে থামাবে কে?

এটা গেল একটা সমস্যা। আরেকটা সমস্যা যেটা আরো অনেক বড় সমস্যা.. দারীদ্রতা। যদি পরিস্হিতি খুব খারাপ হয় আর সবাইকে ঘরে থাকতে হয়, আমরা এখন যেমন আছি আমেরিকার অনেক শহরেই। তখন কি হবে? এই যে দরিদ্র মানুষগুলো দিন এনে দিন খায় তাদের দ্বায়িত্ব কে নেবে? সরকারের কি সামর্থ আছে?

আচ্ছা ধরে নিলাম, আমরা perfect world এ বাস করি। সরকার আর দেশের বিত্তবানরা এদের এক বা দুইমাসের ভরনপোষনের দায়িত্ব নিল। কিছু ভাতা দেয়া হলো যেটা উন্নত বিশ্ব অলরেডি কেউ করছে বা করার কথা আলোচনা করছে। কিন্তু কিভাবে এটা বাস্তবায়ন করবে? Social infrastructure সেভাবে নাই। আর এত তাড়াতাড়ি সেটা করা সম্ভব না। আচ্ছা আবার ধরে নিলাম, পাড়ায় পাড়ায় Food Bank চালু করা হলো। উন্নতবিশ্বে যে এলাকাগুলোতে অল্প বা নিম্নআয়ের মানুষ বাস করে সেখানে সেচ্ছাসেবক সংগঠন Food Bank করে রাখে। সেখান থেকে যার যতটুকু প্রয়োজনীয় খাবার লাগবে তা তারা বিনামূল্যে নিয়ে যায়। সেই রকম কিছু চালু করলে কি Social Distance মেনে চলতে পারবে বাংলাদেশের মানুষ? তারা কি পারবে সুশৃঙ্খলভাবে এক মিটার দূরত্ব রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সংগ্রহ করতে?

আমিও জানিনা তারা পারবে কিনা? তবে যতটুকু বুঝি না পারার সম্ভবনাই বেশী। তার অন্যতম কারন, নিয়ম বা আইনের প্রতি কারো আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধ নেই। এমনকি পরস্পরের প্রতিও তেমন কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই।

আমার নিজের কথা বলি, আমার অফিসে যে আমার অফিস পরিষ্কার পরিছন্ন করে, প্রতিদিন সকালে আমি অফিসে ঢুকে তাকে যেভাবে হেসে good morning বলি এবং ধন্যবাদ দেই। ঠিক একইভাবে আমি আমার CEO কে ও good morning বলি এবং সেও বলে। এই যে মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ—-এটা কি আছে বাংলাদেশে? আমি খুব ছোট বয়সে দেশ ছেড়ে এসেছি পড়াশোনার জন্যে, তাই দেশে চাকরি করা বা অন্য কিছু করার সুযোগ হয়নি। তাই আমার এটা জানা নেই। তবে দেশে বেড়াতে গিয়ে যতটুকু দেখেছি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষকে মানুষ হিসেবে নুন্যতম সম্মানটুকু দেয়া হয়না। কিছুতো exception তো আছেই এবং থাকবে।

আসলে অনেক প্রশ্ন আর উত্তর আমাদের জানা নেই। তবে একটু জানি যে আমরা সবাই একটা অজানা অচেনা খুব শক্তিশালী শত্রুর মোকাবেলা করছি। অজানা সবকিছুই ভীতিকর। When our enemy is unknown, it’s very difficult to have a good defense plan.

তাই আমাদের খুব সাবধান আর সচেতন থাকতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা তো বজায় রাখতেই হবে। এটা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে আজ না হয় আর নাই বলি। এখন যেটা সবচেয়ে জরুরী, যে কোনো মূল্যে public interactions সম্ভব হলে একেবারে zero তে আনতে হবে। Only social distancing can prevent the exponential spreading of this novel virus!

আপাতত কিছুদিনের জন্যে সামাজিক/পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলো পরিহার করলে কি এমন ক্ষতি হবে? এই মাত্র জানতে পারলাম finally বাংলাদেশ সরকার ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং সামাজিক সভা সমাবেশ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছ। সাধুবাদ জানাই। যেটা বলছিলাম ‘social distance’ ই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসের গতিবিধি অনেকটাই কন্ট্রোল করা যাবে।

কি অসহায় আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে বা প্রকৃতির কাছে (যে যেটা বিশ্বাস করেন)! এই মূহূর্তে সত্যিই একটা মঙ্গল বারতা আমাদের খুব খুবই প্রয়োজন। আমাদের সীমাবদ্ধতার সীমা নাই। কিন্তু এই সীমাহীন সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই আমাদের এই অচেনা শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। আমরা অবশ্যই পারবো। আমাদেরকে যে পারতেই হবে।

সুমনা আহমেদ: প্রবাসী লেখক
03/19/2020
Las Vegas, Nevada, USA

আরও দেখুন

পেঁয়াজের চারা পুড়ে শেষ-কৃষকের মাথায় হাত! জমিতে এখন শুধুই ঘাস!

নিজস্ব প্রতিবেদক নলডাঙ্গা,,,,,,,,,,,,,,,,,জমিতে নষ্ট হওয়া পেঁয়াজের চারা দেখে নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি জমি লিজ নিয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *