নিউজ ডেস্ক:
দেশে সাংস্কৃতিক চর্চা আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) সংস্কৃতিবিষয়ক ক্যাডার সৃষ্টির দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ১৭ প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে পত্র দিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। এতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় জাদুঘর, আর্কাইভ, গণগ্রন্থাগার, গ্রন্থাগার, শিল্পকলা ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের নিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক বা কালচারাল ক্যাডার সৃষ্টির বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতামত পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংস্কৃতিবিষয়ক বা কালচারাল অ্যাফেয়ার্স নামে নতুন ক্যাডার সৃষ্টির জন্য গত সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন চিঠি দেন পিএসসি চেয়ারম্যানকে। চিঠিতে তিনি দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষা, চর্চা ও উন্নয়ন, বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে পৃথক ক্যাডার সৃষ্টির প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবিত ক্যাডারে বাংলা, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, চারুকলা, প্রত্নতত্ত্ব, নাট্যকলা ও নৃত্যকলাসহ এ ধরনের বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে ওই চিঠির বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের জন্য পিএসসি থেকে এ-সংক্রান্ত ফাইল পাঠানো হয় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ সেপ্টেম্বর সংস্কৃতিবিষয়ক ক্যাডার সৃষ্টির বিষয়ে ১৭টি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে মতামত জানতে চেয়ে পত্র দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আসাদুজ্জামান।
জানতে চাইলে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সমকালকে বলেন, বিষয়টির যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের মতামত চাওয়া হয়েছে। মতামত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ-সংক্রান্ত ফাইল আবার পিএসসিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যাবে। প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস গঠিত হয়। বিভিন্ন সময়ে ক্যাডারের সংখ্যা ২৭টি উন্নীত করা হলেও ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর পিএসসির সুপারিশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইকোনমিক ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করে গেজেট প্রকাশ করে। ফলে বিসিএস ক্যাডারের সংখ্যা ২৬টি হয়। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই বর্তমানে সংস্কৃতিবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছেন। সংস্কৃতিকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কৃতি ক্যাডার গঠনের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন।
সংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন, একটি দেশ পরিচিত হয় তার ইতিহাস ঐতিহ্য, সংস্কৃতি দ্বারা। দেশের আত্মপরিচয়ও নির্ধারণ করে তার সংস্কৃতি। বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্বাপর যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলেও দেখা যাবে, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন সাংস্কৃতিককর্মীরা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দেশের উন্নয়নের জিডিপি বৃদ্ধি পেলেও একই হারে সংস্কৃতির জিডিপির বৃদ্ধি ঘটছে না। এ জন্য পৃথক সংস্কৃতি ক্যাডার সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
জানতে চাইলে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন সমকালকে বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সংস্কৃতিমনা হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত না থাকে তাহলে শিকড়হীন জাতিতে পরিণত হবে। তখন দেশ আর নিজের দেশ বলে পরিগণিত হবে না। বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করব, সংস্কৃতির ক্যাডার সৃষ্টির বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য।’
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই সংস্কৃতির পৃথক ক্যাডার সৃষ্টির দাবি উঠেছিল। বিষয়টি নতুন করে আবারও সামনে এসেছে। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি রক্ষা, চর্চা ও উন্নয়ন সাধনে সংস্কৃতিবিষয়ক ক্যাডার প্রবর্তনের প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত।’