নিউজ ডেস্ক:
ইউএনও, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শুরু নির্বাচনী কাজ ♦ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের চাপ আমাদের ওপর : সিইসি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে নির্বাচন কমিশনে। গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরুর মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষণের মহাযজ্ঞ শুরু করেছে ইসি; চলবে ২ নভেম্বর পর্যন্ত। মাসব্যাপী ৪১টি ব্যাচের মাধ্যমে ৪৯২ জন ইউএনও এবং ৫২২ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেবে ইসি। এ প্রশিক্ষণে নির্বাচনী আইন-কানুনের পাশাপাশি অনলাইন মনোনয়নপত্র দাখিল ও নির্বাচনী অ্যাপের বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৭ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক ও জেলা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক করবে কমিশন। ডিসি-এসপিদের প্রশিক্ষণ হতে পারে ১৪-১৫ অক্টোবর। এ ছাড়া চলছে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ৩ হাজার ২০০ প্রশিক্ষক তৈরির কাজও। অন্যদিকে নির্বাচনী কেনাকাটাও প্রায় শেষ পর্যায়ে। নির্বাচনের জন্য স্ট্যাম্প প্যাড ছাড়া অন্যান্য নির্বাচন মালামালের টেন্ডার হয়েছে। আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের হাতে সব মালামাল চলে আসবে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র এবং ভোটার তালিকা দিয়েই উপজেলা নির্বাচন করবে ইসি; এ জন্য অনেক কাজই এগিয়ে থাকবে। প্রস্তুত রয়েছে ভোট কেন্দ্র এবং ভোটার তালিকাও। ইসি জানিয়েছে, নভেম্বরের শুরুতে সংসদ নির্বাচনের তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠিত হলেও নির্বাচনী কার্যক্রমে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে পেশিশক্তির নিয়ন্ত্রণ ও প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধাদান ঠেকাতে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ই-ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে জামানতের টাকাও পরিশোধের সুযোগ থাকবে। অন্যদিকে ভোট কেন্দ্রের নাম ও ভোটার নম্বর খুঁজে পাওয়ার ভোগান্তি কমাতে ‘বাংলাদেশ ইলেকশন অ্যাপ’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন। এই অ্যাপে ভোটারের তথ্যের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের জন্য রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, ডিসি, এসপি, ওসিসহ নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের পরিচয়, ফোন নম্বর দেওয়া থাকবে। চলতি মাসে অ্যাপটি উদ্বোধন করবে কমিশন।
বিতর্কের চাপ আমাদের ওপর পড়েছে : সিইসি
বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক, সেটার চাপ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে কমিশন নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য করার চ্যালেঞ্জ নিতে চায়। গতকাল নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাজী হাবিবুল আউয়াল এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসি সচিব জাহাংগীর আলম। বক্তব্য দেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর এবং নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান। সিইসি বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক ও সমালোচনা হতে পারে। অতীতেও হয়েছে। ৫০, ৬০, ৭০ বছরের ইতিহাস ঘাঁটলেও বিতর্ক পাওয়া যাবে। এমনকি ব্রিটিশ আমলের নির্বাচন নিয়েও কিছু কিছু বিতর্ক হয়েছে। তখন হয়তো মাত্রাটা কম ছিল।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘আমরা যে নির্বাচনটি করতে যাচ্ছি, সেটার একটা বিশেষ দিক হচ্ছে, অভিযোগ বা বিতর্কের মাত্রাটা একটু অতিরিক্ত। ২০১৪ ও ২০১৮-এর চাপটা এসে আমাদের ওপর পড়েছে, এই নির্বাচন কমিশনের ওপর পড়েছে। আমরাও নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি…। এগুলো সত্য হতে পারে, অসত্য হতে পারে, মিথ্যা হতে পারে। আমরা সেদিকে যাচ্ছি না।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার চ্যালেঞ্জ নিতে চাই। নির্বাচন নিয়ে যে সংকট সেটি হলো আস্থার সংকট। প্রতিদিন গণমাধ্যমে বিভিন্ন সংকট নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। আগামীতে যে নির্বাচন করব তাতে যেন আস্থার সংকট তৈরি না হয়, সে জন্য দায়িত্ব পালনে সজাগ থাকতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।
ইউএনও এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘আপনাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হবে, সেটি কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে বিষয়টি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করব। জানার চেষ্টা করব আপনারা কে, কীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য নেব।’ কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য তখনই হবে, যদি দায়িত্ব পালন করে মানুষকে দেখানো যায়। তিনি বলেন, ‘বাজারে পারসেপশন (ধারণা) আছে, আমাদের ওপর আস্থা নেই, সরকারের ওপর আস্থা নেই। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় না। আমরা এই চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করতে চাই, আমাদের অধীন যে নির্বাচন হবে, সেটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হবে। স্বচ্ছতাটা গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে দেখাতে চাই।’ সিইসি বলেন, এখন মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক অপপ্রচার হয়। যেটাকে মিসইনফরমেশন, ডিজইনফরমেশন বলে। সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বানিয়ে প্রচার করা হতে পারে। সেগুলো আমরা কঠোভাবে প্রতিরোধ করব। যেন নির্বাচনে ঋণাত্মকভাবে প্রভাব না পড়ে। তিনি বলেন, পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ আছে। অনেকে আবার এজেন্ট না দিয়েও অভিযোগ করেন। কাজেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে প্রতিটি দল থেকে এজেন্ট দিয়েছে কি না। এজেন্ট শক্তিশালী হলে কারচুপি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।