নিউজ ডেস্ক:
রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।
বঙ্গভবনে সোমবার বিকেলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হয়েছে। প্রথম দিন জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সংলাপের সময় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং।
নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আয়োজন করা হলো। তবে আগের দুই সংলাপে দেশের প্রধান সব দলকে পাওয়া গেলেও এবার বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত নয়।
২০১২ সালে রকিব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এবং ২০১৭ সালে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে গঠন করা নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনার পর গঠন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। এই দুটি কমিশনের অধীনে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রবল আপত্তি আছে।
এর আগের দুটি সংলাপে অংশ নিলেও এবারের আলোচনায় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আপত্তি আছে। দলটি এবার রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ না নেয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে। সংলাপ শুরুর দিন এই উদ্যোগকে ‘বায়োস্কোপ’ বলে কটাক্ষ করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অংশ নিলেও আগামী নির্বাচনের জন্য আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছে। এই সরকার গঠনের পর সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলছে তারা। তবে এই কমিশন ও সরকারের কোনো রূপরেখা তারা এখনও দেয়নি।
এদিন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়। জাপা নেতাদের বঙ্গভবনে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ফেব্রুয়ারি মাসেই শেষ হবে। তার পূর্বেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার এই উদ্যোগ।’
বঙ্গভবন থেকে জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে বলে আশা করেন রাষ্ট্রপতি। নতুন নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পাদন করতেও সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস তার।
সংলাপে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে নিজেদের প্রস্তাবন তুলে ধরেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। আলোচনার উদ্যোগ নেয়ায় রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান জি এম কাদের।
সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব রাখে জাতীয় পার্টি। এ ছাড়া তারা সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের সার্বিক কার্যক্রমে নির্বাহী বিভাগের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নেরও প্রস্তাব দেয় তারা।
এই সময়ের মধ্যে আইন প্রণয়ন সম্ভব না হলে, অধ্যাদেশ জারিরও দাবি জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।
সেটাও সম্ভব না হলে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
এই উদ্যোগে রাষ্ট্রপতিকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে সংসদে প্রধান বিরোধী দলটি।
এ সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) ওয়াহিদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।